দেশজুড়ে নেতাদের গ্রেফতার বাণিজ্য ও রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচারের অভিযোগ রিজভীর

আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২২
0
file photo

দেশজুড়ে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার বাণিজ্য ও রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচারের অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রহিুল কবীর রিজভী। তিন গণমাধ্যমকে জানান, গত শনিবারের গাজীপুরে শোক র্যালিতে হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করা ১৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে চরম নির্যাতন করছে পুলিশ।

আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের চিত্র গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন রুহুল কবীর রিজভী।

তিনি দেশের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে , ”চট্টগ্রামের বিভাগীয় মহাসমাবেশে আসার পথে গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলাধীন মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এদের মধ্যে তবলছড়ি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম, বিএনপি নেতা মোঃ নুরু মিয়া, আবদুল কুদ্দুছ যুবদল নেতা আবদুল মোমিন এর অবস্থা খুবই গুরুতর। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ”
একইভাবে চট্টগ্রামের গণসমাবেশে আসার পথে গতকাল রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঃ-
১। এনামুল হক এনাম, আহবায়ক, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
২। নুরের জামান মাষ্টার, যুগ্ম আহবায়ক, উপজেলা বিএনপি মানিকছড়ি।
৩। জয়নাল আবদিন, সদস্য, আহবায়ক কমিটি, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৪। বেলাল হোসেন, সদস্য, আহবায়ক কমিটি, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৫। খান সাহেব, সদস্য আহবায়ক কমিটি, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৬। মীর হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৭। আজগর কোম্পানি, সদস্য, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৮। আমির হোসেন, সদস্য, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।
৯। আব্দুল মান্নান মেম্বার, সদস্য, আহবায়ক কমিটি, উপজেলা বিএনপি, মানিকছড়ি।

আহত নেতাকর্মীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় এবং হোটেলগুলোতে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে।

সমাবেশে আসার পথে মিরসরাই সীতাকুন্ডের মাঝামাঝি স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুর হামলায় কবিরহাট পৌর বিএনপি’র আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জুসহ অনেক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর :
গতরাতে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় আইনুশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে মহানগর বিএনপি’র সহ প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহজাহান, যুবদল নেতা শাহীন, আকবরশাহ; থানা ছাত্রদল নেতা রেহান উদ্দীন প্রধান, সাদ্দাম হোসেন ও মোঃ পারভেজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নোয়াখালী জেলাধীন কবিরহাট পৌরসভা ঃ
কবিরহাট পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি মনিরুল মোস্তফা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বাটু; ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ সভাপতি কামাল উদ্দীন, কবিরহাট পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব আফতাব উদ্দীন হৃদয়, পৌর যুবদলের সদস্য অহিদুল্ল্যাহসহ অনেকেই আহত হয় এবং ৫টি গাড়ী ভাংচুর করে।
ফেনী জেলাধীন ছাগলনাইয়া উপজেলা ঃ
ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু সাঈদ কায়ছার, নুরুল্লাহ খান বাচ্চু; ছাগলনাইয়া কলেজের সাবেক এজিএস একরাম উদ্দীন সিপু, যুবদল নেতা মামুনুর রশিদ ও রবিউল হককে উপজেলার বারৈয়ারহাটে মেয়র কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

মূলত: আওয়ামী লীগ এখন ভীরু ও কাপুরুষের দল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে গুন্ডা ও সন্ত্রাসীরা বাহাদুরী দেখায়। প্রকৃত সাহসী ও বীরদের কখনোই ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার নজীর নেই সারা দুনিয়াতে। যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না, তারাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় গুন্ডাপান্ডাকে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে লেলিয়ে দেয়। সংগ্রামী জনতাকে নতি স্বীকার করানোর জন্য জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীর আন্দোলনকে দমাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুন্ডাদেরকে লেলিয়ে দেয়া শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ। জনগণের সমর্থন হারিয়ে এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় আগ্রহী একটি দল। তারই কুৎসিত প্রমাণ দিলো আজকে চট্টগ্রাম বিভাগের মহাসমাবেশে আগত জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণের বিভৎস রুপ দেখিয়ে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুনে-বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করেছে।

তবে এতো অত্যাচার-আক্রমণ-চক্রান্ত-সন্ত্রাস-খুন-বিশ্বাসঘাতকতা ও কুৎসা সত্বেও জনগণের আন্দোলন থেমে থাকবে না। পথে বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ সত্বেও আজ চট্টগ্রামের পোলো গ্রাউন্ডের মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামবে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও জনগণকে কাবু করা যায় না। আজকে চট্টগ্রামে সমাবেশের সফলতা সেটিরই আজ প্রমাণ হবে।

চট্টগ্রামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এধরণের কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত হামলা, নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করাসহ চট্টগ্রাম মহানগরে নেতাকর্মীদের বাসায় ও হোটেলগুলোতে পুলিশের তল্লাশী ও পথে পথে বাধা দেয়ার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।

বলেছি, আইন আদালতে আওয়ামী চেতনার পরীক্ষিত ব্যক্তিদের বসিয়ে অভিনয় করানো হয়। কিন্তু আসল রায় আসে গণভবন থেকে। প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিচার আচার সব একজায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন, না বাইরে থাকবেন সেটা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করেন! খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা-জেল এগুলো আসলে অপরাধের কারণে নয়, তিনি সম্পুর্ণরুপে নিরপরাধ। শুধুমাত্র নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্তে নিজের পথের কাঁটা দুর করতে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে অসত্য মামলায় সাজা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রীকে নিয়ে হাছান মাহমুদ ও শেখ ফজলে নুর তাপসের হুংকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।