ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মার সম্পর্ক: কৃষিমন্ত্রী

আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২২
0

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভূতাত্ত্বিক সীমানা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশ-ভারত আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আত্মার। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী এই বন্ধু রাষ্ট্রের অবদান কখনো ভুলে যাবার নয়।

রাজশাহীতে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলার প্রথম অধিবেশনে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে এ সাংস্কৃতিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকার নিঃস্বার্থভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। ভারত অনেক বড় দেশ, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী। কাজেই তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার হওয়া উচিত। রাজশাহীতে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে। করবে শক্তিশালী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যদি আরও সুদৃঢ় হয়, তাহলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দুর্বল হবে, তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত আমাদের পাশে আছে। আমরাও তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করি।

অনুষ্ঠানে ভারতের মন্ত্রী, অভিনেতা, কবি, শিল্পী, সাংবাদিকসহ মোট ৩৬ জন অতিথিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সাংস্কৃতিক মিলনমেলা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

অতিথিদের উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও প্রীতি উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সংবর্ধিত করেন মেয়র।

এর আগে নগর ভবনের প্রধান ফটক থেকে শিশুদের নৃত্য আর গানের তালে তালে অতিথিদের মঞ্চে নিয়ে এসে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া হয়।

দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে সব শহিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলার আয়োজন করতে পেরে রাজশাহীবাসী আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। দুদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। সেই সম্পর্ক অটুট রয়েছে। সাংস্কৃতিক মিলনমেলার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

রাসিক মেয়র বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌরুট চালু করা সম্ভব। এটি হলে রাজশাহীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল আগরতলা কারাগারে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে দুই দেশের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সম্পর্ক আরও যেন গভীর হয়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের মিলনমেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আমরা দুটি দেশে বাস করলেও ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতিতে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মিল রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের শুধু আত্মার নয়; রক্তেরও সম্পর্ক রয়েছে।

রামপ্রসাদ পাল আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেছিলেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম; সেই আওয়াজ এখনো আমাদের কানে বাজে। সেই আওয়াজে আমরা ভারতবাসী সাড়া দিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার পাশাপাশি ত্রিপুরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় দেয় ভারত। সাংস্কৃতিক দিলনমেলা আয়োজনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অবনতি ঘটাতে নানা সময় ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত একে অপরের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামী বলেন, এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সংস্কৃতির বিনিময় আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (কো-অর্ডিনেটিং চ্যাপ্টার) প্রধান সমন্বয়ক এসএম সামছুল আরেফীন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উভয় দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সংসদ সদস্য, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষক, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী, আইনজীবী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানান ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পালসহ ভারতীয় অতিথি এবং রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এটি দেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এটির উদ্বোধন করা হলো।

এরপর মহানগরীর কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিরা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে অ্যাম্বুলেন্স উপহার

রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে একটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছে ভারত সরকার। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের হাতে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামী। বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলার দ্বিতীয় দিন রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে এই উপহার দেওয়া হলো।