যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা : ভারতে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র চলছে

আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২১
0

ভারতীয় গণতন্ত্র সম্প্রতি একটা র‍্যাংকিং সমস্যায় পড়েছে। ওই র‌্যাংকিংয়ে ভারতের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থাকে ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের’ স্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চয়ই উদ্বেগের খবর দেশটির জন্য।

সম্প্রতি বেশ কিছু সূচকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান নেমে গিয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজ এক বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বিষয় ছিল বৈশ্বিক রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতা।

রিপোর্টে ভারতকে ‘মুক্ত গণতন্ত্রের’ তালিকা থেকে নামিয়ে দিয়ে ‘আংশিক মুক্ত গণতন্ত্রের’ তালিকায় স্থান দেয়া হয়। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ভারতের জন্য এটিই শেষ খবর নয়। গত সপ্তাহেই সুইডেনভিত্তিক ভি-ডেম ইনস্টিটিউট গণতন্ত্র বিষয়ে তাদের সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ভারত একটি ‘নির্বাচন-ভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে।

গত মাসে আরেকটি রিপোর্টে ভারতকে বর্ণনা করা হয় ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ হিসেবে। গণতান্ত্রিক সূচকে দুই ধাপ নিচে নেমে দেশটির স্থান হয় ৫৩ নম্বরে। এই রিপোর্টটি প্রকাশ করে ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট। এসব রিপোর্ট দেশটির ক্ষমতাসীনদের জন্য অস্বস্তিকর বটে। বিষয়টি উদ্বেগজনকও।

‘দায়ী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি’
এসব র‍্যাংকিংয়ে ‘গণতন্ত্র নিম্নমুখী’ হওয়ার পেছনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপির সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের সময় দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে। দেশটিতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ভীতিপ্রদর্শন করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতে মুসলিমদের ওপর অগণতান্ত্রিকভাবে অসংখ্য আক্রমণ হয়েছে।

রিপোর্টগুলোতে বলা হয়, এর পরিণতিতে ভারতে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা কমে গেছে।

‘বাংলাদেশ-নেপালের চেয়েও খারাপ’
ফ্রিডম হাউস বলছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হচ্ছে। তারা আরো বলেছে যে ‘মুক্ত রাষ্ট্রের উচ্চ কাতার থেকে ভারতের এই পতন’ বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। ভি-ডেম বলেছে, মোদির শাসনকালে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, সেন্সরশিপের ক্ষেত্রে ভারত এখন পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী। বাংলাদেশ ও নেপালের চেয়েও দেশটির পরিস্থিতি খারাপ।

ডেমোক্রেসি ইনডেক্স বলছে, কর্তৃপক্ষ গণতন্ত্রকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ায় ও নাগরিক অধিকারের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ হওয়ায় ভারতের র‍্যাংকিংয়ের অবনতি হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, মোদির নীতিগুলো ভারতে মুসলিমবিরোধী ও ধর্মীয় সংঘাত উস্কে দিয়েছে। এতে ভারতের গণতন্ত্রের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
এতে বিস্মিত হবার কিছুই নেই যে পর পর বেশ কিছু জরিপে ভারতের অবস্থান নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় তা মোদি সরকারকে বিব্রত করেছে। বিশ্বব্যাপী ভারতের গণতন্ত্রের যে ইমেজ ছিল তার ওপর একটা কালো ছায়া ফেলেছে।

ফ্রিডম হাউজের রিপোর্টটির ব্যাপারে ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত। দেশটির গণতান্ত্রিক রীতিনীতিও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।’ রিপোর্টের কঠোর সমালোচনা করে আরো বলা হয়, যারা নিজেদের মৌলিক বিষয়গুলোই ঠিক করতে পারেনি তাদের কাছ থেকে ভারতের কোনো সদুপদেশ নেবার দরকার নেই।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, রিপোর্টটিতে যেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে তা ‘তথ্যভিত্তিক নয় ও বিকৃত।’

পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু ভি-ডেমের রিপোর্ট সম্পর্কে একজন বিরোধীদলের এমপিকে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ দেননি। তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ ভারতকে নিয়ে মন্তব্য করছে তাদের উচিৎ আগে নিজেদের দিকে তাকানো, তারপর ভারতকে নিয়ে মন্তব্য করা।’

সবচেয়ে কড়া ভাষায় এসব রিপোর্টের সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘আপনি গণতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের বৈপরীত্যকে ব্যবহার করছেন। আপনি সত্য উত্তর চান… একে বলা হয় ভন্ডামী। কারণ পৃথিবীতে একদল স্বনিয়োজিত মাতব্বর আছে। ভারত যে তাদের অনুমোদন চাইছে না, তারা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা যে খেলা চায় তা ভারত খেলতে রাজি নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘কাজেই তারা নিজেদের নিয়মকানুন বা মানদন্ড আবিষ্কার করছে। তারাই রায় দিচ্ছে। এমন ভাব করছে যেন এটা এক ধরনের বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড।’