আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে আরো দীর্ঘায়িত করতেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অপকৌশল চালাচ্ছে — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২১
0

সারাদেশে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা সরকারি মদদেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক মতবিনিময় সভায় সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতি ইংগিত করে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এখানে আজকে অনেকে উপস্থিত আছে যারা ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। নোয়াখালীর চৌহমুনীতে কামাক্ষা বাবু(উপস্থিত) তিনি ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। সেখানে নিসন্দেহে যারা আক্রমণ চালিয়ে তারা কোনো বিরেোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়। এটা আজকে সব জায়গা প্রমাণিত হয়ে গেছে।”

‘‘ আমরা বার বার বলছি সবসময়- দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এটা ক্ষমতাসীনদের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিস্কার হয়ে গেছে আজকে আওয়ামী লীগ যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা ক্ষমতাকে আরো দীর্ঘায়িত করার জন্য অর্থাত আগামী নির্বাচনে যাতে তারা পার পেয়ে যেতে পারে সেজন্য বিভিন্নরকমের অপকৌশল গ্রহন করতে শুরু করেছে এটা তারই একটা প্রমাণ।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি সমসময় সকল ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং সেটা তারা প্রমাণ করেছে। আপনারা জানেন,পাকিস্তান হানাদার বাহিনী রমনার রেইসকোর্সে একটা কালি মন্দির ছিলো সেটা তারা ভেঙে দিয়েছিলো। ৭১ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিলো তখন সেটাকে বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো।”

‘‘ আমাদের সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমনা কালিমন্দির পূণঃনির্মাণ করা শুরু হয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো সাদেক হোসেন খোকা সাহেব(প্রয়াত ঢাকার মেয়র) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে সেগুলোকে পুনরায় আবার ফেরত নিয়ে আসা হয়।”

তিনি বলেন, ‘‘ যখনই ঘটনা ঘটেছে তখনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আঙ্গুল তুলে বিএনপির নাকী ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কোনো তদন্ত না করেই এসব কথা বলছেন।”

‘‘ প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়িত করে মামলা করা হয়েছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নোয়াখালীর চৌহমুনীতে ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা নির্বাচন করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।”

‘‘ এটা উদ্দেশ্যটা কি? প্রধান যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য অতীতে যে অস্ত্রটা ব্যবহার করা হয়েছে নির্বাচনের সময়ে গায়েবী মামলা দিয়েছে, তার আগে নাশকতার মামলা দিয়েছে, তারও আগে বিস্ফোরক মামলা দিয়েছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা যারা বসে আছি কেউ নেই যে যার বিরুদ্ধে ১০/২০/৬০/১০০ টা মামলা নেই।”

খালেদা জিয়ার শাসনামলে হিন্দুদের ‍উপাশনালয় মন্দির নির্মাণ, সংস্কার এবং মন্দির ভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আপনাদের শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ প্রতারনা রাজনীতি করে, আওয়ামী লীগ জনগনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি করে। ১৯৭২ সালে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, গণতন্ত্রের কথা বলে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে ভিন্ন আঙিকে আবার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রের একটা মোড়ক পরে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে তারা আবার ওই একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে এবং এখানে ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে।”

‘‘ আমরা যারা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি, গণতন্ত্রের পক্ষে আছি আমরা কিন্তু এটা সহজে মেনে নিতে পারবো না। আমরা গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি, এই আন্দোলন আরো বেগবান করব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগনের সম্পৃক্তার মধ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতার মধ্য এই দানবীয় শক্তি, অশুরীয় শক্তিকে অবশ্যই বদ করে জনগনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগনের সরকার ও জনগনের পার্লামেন্ট করতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা একতাবদ্ধ হই। এই দেশটা সবার। এটা বাংলাদেশীদের এই দেশ, বাংলাদেশীদের এই মাটি। এটার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না।”

শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি উদ্যোগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিচতলায় এক মতবিনিময়ের এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয়া শুভেচ্ছা জানান।

সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল, জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সূচনাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের পূজামন্ডপ ও রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘ গত ১৩ তারিখ কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন, আমরা সজাগ আছি। ২০ জেলায় বিজেপি নামানো হয়েছে। এরপর অষ্টমী, নবমী হলো আপনারা পূজামন্ডপে বিজেপি দেখেছেন কী?”

‘‘ এরা(সরকার) মিথ্যাচার করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। এরা আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে, এদেরকে তাড়াতে হবে। এজন্য আজকে এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হউক আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ‍সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অপর্না রায় দাস, জনগোমেজ, অশোক কুন্ড, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, সঞ্চয় দে রিপন, সৌরভ পাল, মিল্টন বৌদ্দ, জয়দেব জয়, বিশ্বজিত ভদ্র, বিশ্বজিত ভদ্র,সীমান্ত দাস, সঞ্চয় গুপ্ত, পলাশ মন্ডল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।