আজকের তরুণরা তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
0

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে তরুণ সমাজের যে ভূমিকা তাতে আমরা বলতে পারি নতুন করে বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর এখন তরুণরা। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় তরুণরা এবং তাদের নেতৃত্ব রাষ্ট্র ও সমাজের যে কোনো ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকর। আমাদের আজকের প্রতিটি পদক্ষেপ তামাকপণ্য নিষিদ্ধের কার্যক্রম এবং এর ভয়াবহতা সামগ্রিক ভাবে তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে পুরো জাতিকে তারা আলোর পথ দেখাবে। বর্তমান তরুণ রক্ষায় তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কেন জরুরি, সেটাই বর্তমান নিবন্ধে আলোচ্য বিষয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশই তরুণ যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। একটু পেছনে তাকালে, গ্লোবাল স্কুল-বেজড হেলথ সার্ভে ২০১৪ (জিএসএইচএস)’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ।” এই পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যে বিশাল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে যেকোনো উপায়ে তামাকপণ্য ও ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট এ আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে এসবের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলো যেমন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং আরও অনেক। এছাড়া, তারা ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, , হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট ইত্যাদিকে সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়। এছারাও পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ যেমন, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, নর্থ-কোরিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ইরান, ইরাক, মালয়শিয়া, নরওয়ে, এবং সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশ ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে নিষিদ্ধ করে দেয়।বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। আমরা যদি ই-সিগারেটের এই ভয়াবহতা বুঝতে আরো দেরি করে ফেলি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপুল ক্ষতির মধ্যে পড়বে। তাই সবকিছু মিলিয়েই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করাটা জরুরি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকে সেবনের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক ভাবেই মৃত ব্যক্তির পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্ম এবং আসক্ত করতে কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে তামাকপণ্য সহজলভ্য করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলিব্রেটিদের ব্যবহার করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান এবং শক্তিশালী আইন ও কর পদক্ষেপের বিরোধিতা করা এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী নিয়মিতভাবে তামাক ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষণায় দেখা গেছে, ২১ বছর বয়সের আগেই যারা তামাকে আসক্ত হয়ে পড়েন তাদের মধ্যে নিকোটিন নির্ভরতা এবং আমৃত্যু তামাক ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
একটা সুস্থ সবল প্রজন্মই পারে এই নতুন বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। আজকের তরুণরাই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করবে এবং এই প্রত্যয় নিয়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তামাক বিরুধি ক্লাব এবং ক্যাম্পেইন গড়ে উঠেছে। তাদের এই ক্যাম্পেইনে বর্তমান সময়ে তামাকের ক্ষতিকর দিক গুলো পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠছে। যেমন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে এ্যাডভোকেসি মিটিং পরিচালিত হচ্ছে।ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণে মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেবে একটা সুস্থ-সবল এবং উন্নত-সমৃদ্ধ মানবিক বাংলাদেশের। তাই তাদের ওপরই ভরসা রাখতে চাই। তারাই বুঝবে দেশের কল্যাণে তামাকের বব্যহার রোধ করার গুরুত্ব কত। তাদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের।
পরিশেষে এই আশাবাদ ব্যক্ত করি আজকের তরুণদের সামর্থ্য, আত্মবিশ্বাস, সক্রিয়তা এবং নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করবে।

লেখকঃ ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ
সিনিয়র জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
নির্বাহী পরিচালক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
চেয়ার, গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি