পবিত্র শবে মিরাজ। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মিরাজ। এ দিন দিবাগত রাতে তিনি ঊর্ধ্ব জগতে গমন করেন এবং সাত আসমান অতিক্রম করে আল্লাহর বিভিন্ন কুদরত প্রত্যক্ষ করেন। এ রাতে পাঁচ ওয়াকত সালাত ফরজ করা হয়।
মিরাজ এক দিকে যেমন মুহাম্মদ সা:-এর অন্যতম মুজেজা; তেমনিভাবে এটি মুসলিম উম্মাহর জন্যও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। দিনটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন‘পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা ইসরা : আয়াত ১)।
মিরাজের তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। মুসা ইবনে ওকবার রেওয়ায়েত এই যে, ঘটনাটি হিজরতের ছয় মাস আগে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর সংঘটিত হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন- খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওফাত সালাত ফরজ হওয়ার আগেই হয়েছিল। ইমাম জুহরি বলেন খাদিজার ওফাত নবুওয়াতপ্রাপ্তির সাত বছর পরে হয়েছিল। কোনো কোনো রেওয়ায়েত রয়েছে, মিরাজের ঘটনা নবুওয়াতপ্রাপ্তির পাঁচ বছর পরে ঘটেছে। ইবনে ইসহাক বলেন, মিরাজের ঘটনা তখন ঘটেছিল, যখন ইসলাম আরবের সাধারণ গোত্রগুলোতে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এসব রেওয়ায়েতের সারমর্ম এই যে, মিরাজের ঘটনাটি হিজরতের কয়েক বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল।
হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মক্কী জীবনে শবে মিরাজের ঘটনা ঘটে। আল্লাহর ডাকে তিনি সশরীরে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা যান এবং সেখান থেকে সাত আসমান পার হয়ে জান্নাত-জাহান্নামসহ আল্লাহর বিভিন্ন কুদরত প্রত্যক্ষ করেন।
মিরাজের পুরো সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না, বরং সাধারণ মানুষের সফরের মতো দৈহিক ও আত্মিক ছিল, এ কথা কুরআনের বক্তব্য ও অনেক মুতাওয়াতির হাদিস মাধ্যমে প্রমাণিত।
মিরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা : ইমাম ইবনে কাসির তার তাফসির গ্রন্থে আলোচ্য আয়াতের তাফসির এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করার পর বলেন- সত্য কথা এই যে, নবী করিম সা: মিরাজের সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন; স্বপ্নে নয়। মক্কা মোকাররমা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত তিনি এ সফর বোরাকযোগে করেন।
তার পরের সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো, বাইতুল মোকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে রাসূল সা: বোরাকটি অদূরে বেঁধে দেন এবং বাইতুল মোকাদ্দাসে প্রবেশ করেন ও দুই রাকাত সালাতে ইমামতি করেন। এ সালাতে নবী-রাসূলগণ অংশ নেন। এরপর তিনি প্রথমে প্রথম আসমানে, তার পর অবশিষ্ট আসমানগুলোতে গমন করেন।