আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস : বসন্তের সজীব ছোঁয়ায় রাঙ্গানোর দিন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
0

এমরানা আহমেদ :
বাতাসে বইছে প্রেম , নয়নে লাগিল নেশা ,কারা যে ডাকিলো পিছে ,বসন্ত এসে গেছে ……. আজ ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ। একই সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবেস।

প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই আজ গেয়ে উঠবেন ‘মনেতে ফাগুন এলো..’। পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরহী অন্তর।

কবি তাই বলেছেন ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে…’। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলেমিশে আজ একাকার হওয়ার উৎসব। বসন্তের হাওয়া আর পুষ্পের রঙ রাঙিয়ে দেবে কোটি বাঙালির মন।

বসন্তের অপার্থিব মুগ্ধতার ঘোরে হৃদয় নাচবে আপন সুরে, আপন খেয়ালে। বসন্ত তারুণ্যের ঋতু বলেই সবার মনে বেজে ওঠে, কবির ওই বাণী ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পহেলা ফাল্গুন আনন্দের দিনে’। অন্যদিক, এ ঋতু সব সময়ই বাঙালির মিলনের বার্তা বহন করে।

কারণ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। শহরের নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমনবার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ ও একুশের বইমেলা।

শীতের হাত ধরে আসে বসন্ত। অনেকে বলে থাকেন, শীত হল বসন্তের অগ্রদূত। শীতের হিমেল হাওয়া, কুয়াশার চাদর মুড়ি দেওয়া সময় যখন ফুরোয়, জয়ের মালা গেঁথে আগমন ঘটে বসন্তের। দখিন হাওয়ার নরম কবোষ্ণ হাওয়া আমাদের মনকে উন্মন করে তোলে। তাই বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব।

বসন্ত মানে একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে আনমনা। কবিও তাই ব্যক্ত করেছেন, ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বসন্তের এ সময়ে শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি।

গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বার্তা ফোঁটে ওঠে। আমাদের বাউল কবি যখন বলেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’ বসন্তের অনিবার্য অনুষঙ্গ ফুল আর ফুলের সুবাস বেয়ে আসা স্মৃতি-গন্ধ-খুলে দেয় সুপ্ত মনের জানালাগুলো। খোলা জানালা মানে, হাওয়াদের আনন্দ হিল্লোল। আনন্দ হিল্লোল মানে দূরাগত কোনো ফুলের সুবাস।

করোনা আতঙ্ক ছাড়িয়ে আজ রোববার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হবে দিনটি। বিভেদ, জড়তা আর কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ফাগুনের হাওয়ায় বসন্তকে বরণ করতে ভোর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জড়ো হবে হাজারো মানুষ।

পহেলা ফাল্গুনের ভোরে চারুকলার বকুলতলা থেকে ভেসে আসবে ‘আহা আজি এ বসন্তে,কত ফুল ফোঁটে, কত বাঁশি বাজে, কত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে…।

বাসন্তী রঙা পোশাক পড়ে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করবেন সেখানে। সারা দিন ঘোরাঘুরি, বই মেলা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বন্ধু, আত্মীয়- প্রিয়জনের সাথে আড্ডার মধ্য দিয়েই বরণ হবে ফাল্গুনের প্রথম দিন। তরুণেরাও এদিন পড়বেন উজ্জ্বল রঙের কোনো পাঞ্জাবি, শার্ট বা টি-শার্ট। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সকাল ৭টায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বসন্ত আবাহন। চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানেই আবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বসন্ত বন্দনার উৎসব।

এ ছাড়া বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একযোগে বসন্ত আবাহনের উৎসব চলবে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও উত্তরার ৩ নাম্বার সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে।

প্রকৃতির চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠেছে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লেগেছে রঙের দোলা। হৃদয় হয়েছে উচাটন। এ দিনেই অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী সুশোভিত করে তোলে। বসন্তের পূর্ণতার এ দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সকল বাঙালির ঘরে ঘরে। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নূপুরের নিক্কণ, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই।

উল্লেখ্য, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে, ১৩ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়। ১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। ###