আজ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহকর্মী বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক চৌধুরীর ১৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী

আপডেট: মে ৭, ২০২১
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
আজ ৭ মে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক,অন‍্যতম সংগঠক বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা ও এই অঞ্চলের সবার প্রিয় শিক্ষক একজন সাদা মনের মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও সাবেক গভর্নর শামছুল হক চৌধুরীর ১৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। আজকের এই দিনে বরেণ্য এই মুক্তিযোদ্ধা শেষ নি:শ্বাস ত‍্যাগ করেন।
মৃত্যুর মাধ্যমেই পৃথিবীর সাথে মানুষের চীরদিনের জন‍্য বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু কিছু ব্যক্তি মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন মানুষের মধ্যে, তাদের মহান কীর্তির জন্য। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ এঁরা সকলেই মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এক সময় মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু তাঁরা আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তাঁদের মহান কীর্তির জন্য।
সক্রেটিস, এরিস্টটল নেই, রয়েছে তাঁদের দর্শন; শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল নেই, রয়ে গেছে তাঁদের কাব্য। নিউটন, আইনস্টাইন চলে গেছেন রেখে গেছেন তাঁদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও মতবাদ, যা আধুনিক বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি হিসেবে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে; পিকাসো, লিওনার্দো দ‍্য ভিঞ্চি আজ আর নেই আজও অম্লান আছে তাঁদের চিত্রকর্ম; বিটোফেন, মোজার্ট নেই, রয়েছে তাঁদের সুরসৃষ্টি। এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে তাদের মহান কর্মের মাধ্যমে। তেমনীভাবে ভুরুঙ্গামারীর মানুষের মাঝে স্মরনীয় বরনীয় হয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধের অন‍্যতম সংগঠক শামছুল হক চৌধুরী।
তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার (৭ মে) তাঁর বাসভবনে পবিত্র কোরআন খতম, উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও শামছুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ‍্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
বর্নাঢ‍্য এই রাজনীতিবিদ মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মূক্তিযুদ্ধে ব‍্যাপক ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতায় এই অঞ্চলে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাগন অনুপ্রেরণা লাভ করেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ভূরুঙ্গামারী থানা প্রথম মুক্তি লাভ করে।শুধু রাজনীতি নয় শিক্ষক হিসেবেও তিনি ব‍্যাপক সফলতা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা।
শামছুল হক চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ৩০ জুন ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের চরবলদিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি তৎকালীন বাংলা সোনাহাটের রাজা শ্রীশ চন্দ্র রায় স্কুল থেকে (ইংরেজী মাধ্যম) প্রাথমিক শিক্ষা ভুরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭-৫০) থেকে মাধ‍্যমিক রংপুর কারমাইকেল কলেজ (১৯৫১-৫৩) এইচএসসি ও আনন্দমহোন কলেজ (১৯৫৩-৫৬) ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৭-৫৮) থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
ছাত্র অবস্হায় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ রংপুর অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ভাষা আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। পরে তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীমলীগ বিরোধী মোর্চা যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমার সংগঠক নির্বাচিত হন এবং এই অঞ্চলে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে ব‍্যাপক প্রচার চালান।
১৯৫৮ সালে সোনাহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ১৯৫৯ সালে ভুরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
পরে গোটা পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ১৯৬৬ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)এর ভুরুঙ্গামারী থানা স্টিয়ারিং কমিটির সংগঠক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ তীব্র গন আন্দোলনের সময় তিনি তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমার গন অভ্যূথানের নেতৃত্ব (কুড়িগ্রাম জেলার) দেন।
পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ০৬ নং সেক্টরের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের সভাপতি, এবং উত্তর বঙ্গের (কুড়িগ্রাম জেলার) মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক এর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আইন পরিষদ এর সদস্য (এম সি. এ) নির্বাচিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় অংশগ্রহন করেন।১৯৭৩ সালে সাধারন নির্বচনে জাতীয় সংসদ সদস্য (এম. পি.) নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি গভর্নর নিযুক্ত হন।
১৯৭৭-১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, কুড়িগ্রামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ও ১৯৭৯ সালে সাধারন নির্বচনে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য (এম. পি.) নির্বচিত হন

পরবর্তীতে এরশাদ সরকার উপজেলা পরিষদ গঠন করলে ১৯৮৫ ও ১৯৮৯ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক গনসংযোগ করেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর মনোনীত প্রার্থী হিসাবে কুড়িগ্রাম-১ আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন ।

২০০৮ সালের ০৭ মে উত্তর বঙ্গের এই অবিসংবাদিত নেতা, বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা ও বর্নাঢ্য রাজনৈতিক শামছুল হক চোধুরীর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
বরেণ্য এই রাজনীতিবিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম‍্যান নূরন্নবী চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

শামছুল হক চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শামছুল হক চৌধুরী স্মূতি পরিষদের আহবায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শামছুল হক চৌধুরী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজীবন সহযোদ্ধা। এই মহান নেতার মৃত্যুদিনে আমরা তার জীবনাদর্শ থেকে নতুন করে প্রেরণা লাভ করতে পারি। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
শামছুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের প্ক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম বিকেল সাড়ে তিনটায় সীমিত পরিসরে স্বাস্হ‍্য বিধি মেনে স্মৃতিচারণ মূলক স্মরণ সডা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত থাকবেন কুড়িগ্রাম -২ আসনের সাবেক সাংসদ ও কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: জাফর আলী। অন‍্যান‍্যদের মধ‍্যে উপস্হিত থাকবেন উপজেলা চেয়ারম‍্যান নূরন্নবী চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শাহজান সিরাজ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করবেন শামছুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহম্মেদ।

####
আমিনুর রহমান বাবু