আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে সভাপতি-সেক্রেটারি: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মেশকাত

আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১
0

নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মেশকাত হাসান। ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে লাইভে ‘আমি মেশকাত, আরে ভাই হুনেন’ বলে আলোচনায় আসেন ছাত্রলীগের এই ত্যাগী নেতা। একই বছর গুলিবিদ্ধ হয়েও আলোচনায় আসেন মেশকাত। ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এই নেতা বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলছেন, অনিদ্রা, অরুচি মানসিক অশান্তি থেকেই শয্যাশায়ী মেশকাত।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিএসসি চত্বরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মেশকাত হাসান। নিজের অসুস্থতা এবং অসহায়ত্ব তুলে ধরে অভিমানী মেশকাত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছি। বহু ত্যাগ স্বীকারের পরও উপ-সম্পাদক পোস্ট পেয়েছি। তারপরও খুশি একটা পরিচয় পেয়েছি। তবে ছাত্রলীগ সেই নোংরা সিন্ডিকেট থেকে বের হতে পারেনি। নানাভাবে ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা আমাকে অপমান-অপদস্ত করেন। আমি কর্মীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলি বলেই খারাপ। কমিটি হয় না দীর্ঘদিন ধরে- সেই প্রশ্ন তুলি বলেই আমি খারাপ।

মেশকাত বলেন, ছাত্রলীগের দুই বছর মেয়াদী কমিটির ৩-৪ বছর হয়ে গেছে, ঢাবি শাখার ৪-৫ বছর হয়ে গেছে এখনো হল কমিটি দেয়া হয়নি। সেন্ট্রালের পেছনে সারাদিন ঘুর ঘুর করে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। অথচ কমিটি দেয়ার কোনো লক্ষণ নাই। এসব নিয়ে আমি কথা বলি বলেই আমি তাদের চক্ষুশূল। এসব বলতে গেলেই আমাকে নানাভাবে মানসিক টর্চার করে, আজ শয্যাশায়ী। এসব কথা শুধু আমার একার নয়, বাংলাদেশের হাজারো কর্মীর।

তিনি বলেন, তাদের কোনোকিছু বললেই নেত্রীর বরাত দেন। নেত্রীর কানে আমাদের মত কর্মীর কথা পৌঁছায় না। আমি পার্টি করেও পার্টির লোকজনই আমাকে হুমকি-ধামকি দেয়, ‘কট’ দেয়ার ভয় দেখায়। হামলা-মামলার ভয় দেখায় এসব কারণেই আমি খুব কষ্ট পাই, রাতে ঘুম আসে না। যে পার্টির পেছনে দশ বছর শ্রম দিলাম সেখানেই আমি নিরাপদ নই। আমি বাসায় বলে রেখেছি, আমার যদি মৃত্যু হয় এর জন্য দায়ী থাকবে ছাত্রলীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক। আম্মার কাছেও কিছু নাম দিয়ে রেখেছি। এসব বলছি কারণ তারা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। জীবিত থাকলে সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য জীবন উৎসর্গ করব।

সম্প্রতি মেশকাতের অসুস্থতায় ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, মেশকাতের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়ছে, বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের ইউনিটভিত্তিক দায়িত্ব বন্টন না হওয়া এবং মেশকাতের চরম অসুস্থতায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার খোঁজখবর নেয়া হয়নি। সে নিজেও ফোন করে তাদের পায়নি, এমন নানা কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মেশকাতসহ ছাত্রলীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী।

মেশকাতের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা তার অসুস্থতার খবর পাওয়ার পর মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা তার বাসায় পাঠিয়ে সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমরা তার খোঁজ-খবর নেইনি এমন তথ্যটি ভুল। আমি নিজেই মুঠোফোনে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। মেশকাত এবং তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। মেশকাত তো কেন্দ্রীয় নেতা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার যেকোনো কর্মীর পাশে সবসময় আছে এবং থাকবে।

অসুস্থ মেশকাতকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম সোহাগ, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক জুয়েল মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন। জুয়েল মোল্লা বলেন, মেশকাতের অসুস্থতার খবর পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে আমরা বেশ কয়েকজন তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। আমরা তার বাড়িতে দীর্ঘ সময় থেকে মেশকাতের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে তার পাশে ছাত্রলীগ পরিবার আছে- এ কথা জানাই।