‘ইসলামভীতি তৈরী করে মাদ্রাসা শিক্ষা দয়া করে বন্ধ করবেন না ‘

আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২১
0

আমাদের দেশের তথাকথিত শিক্ষিত বুর্জোয়া-পাতি বুর্জোয়া প্রগতিশীলরা মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি নাক সিটকানো দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। অথচ আমরা কেউই সুস্থ ও দূরদর্শী মনোভাব নিয়ে তাদের কাছে যাইনি, আলোচনার টেবিলে স্থান দিইনি। দূর থেকে মৌলবাদ বলে অশ্লীল গালি গালাজ করেছি।স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন জাতির ভবিষ্যৎ, তেমনি মাদ্রাসা ছাত্ররা ও জাতির ভবিষ্যৎ- এমন সমান অধিকারের প্রশ্নটা কেউই করেনি।

কাওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা এখানে কেউই ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার-উকিল হওয়ার জন্য ভর্তি হয়না বরং কুরআন-হাদিস তথা ইসলামের মৌলিক শিক্ষাটুকু জেনে প্রচার ও প্রসারের জন্য ভর্তি হয়। যদি মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য হয় স্রেফ সাচ্চা মুসলমান তৈরি করা, তাহলে ‘কিছু করে খাওয়ার শিক্ষা’ তথা পূজিঁতান্ত্রিক আধুনিক নীতি বিবর্জিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চলমান বিপরীতমুখী দুটি ধারা (আরবি ও ইংরেজি) আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হায় একেকটি বৈষম্যের সূচক । যা পরস্পর বিরোধী মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে। ফলে একঘরের দুই ভাইয়ের মধ্যে চিন্তা, রুচি ও মানবিক জীবনবোধের দিক দিয়ে ব্যক্তিতে, সমাজে, রাষ্ট্রে বিশাল ব্যবধান তৈরি হচ্ছে ।

স্কুল-কলেজে যারা অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারেনা তাদের বিশাল একটি অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে পড়াশুনা করছে। অতি দরিদ্র বা নিন্ম অর্থনৈতিক অবস্হান থেকে কওমি মাদ্রাসায় আসছে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে যারা বিনামূল্যে পড়ছে,তাদের বাবারা দিনমজুর, কুলি,ঠেলাগাড়ি চালায় ।এসব পরিবারের সন্তান মনস্তাত্বিক জঠিলতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। যে মাদ্রাসায় পড়ছে,সে নিপীড়িত যুবক,বিধ্বস্ত সত্ত্বা ।তার উপর সামাজিক-অর্থনৈতিক নিপীড়ন আছে ।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত অনেকেই বলছে এসব কওমি মাদ্রাসা জঙ্গি আস্তানা। সুশীল সমাজ বলছে, এরা জঙ্গি, মৌলবাদী। অস্পৃশ্য। এ দেশে মৌলবাদের স্হান নাই ।

মিড়িয়া এদের নিয়ে যাচ্ছেতাই লিখছে। মনের খায়েশ মিটিয়ে আমরা তাদের জঙ্গি বলি, হাতে বেড়ী পরিয়ে কারাগারে নিয়েছি। মিড়িয়ার ক্যামেরাগিরি…লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। লম্বা দাডি, টুপি,পুরোটাই ‘ইসলামিস্ট’।।বেশি দৌড়-ঝাপের দরকার নাই । কওমি মাদ্রাসা ও হুজির জঙ্গি কানেকশন। তারপর সোজা আফগানিস্তান। আফগানিস্তান মানে আল কায়েদা,আল কায়েদা মানে তালেবান,৯/১১,বিশ্ব সন্ত্রাসী। সৌদি আরব,পাকিস্হা্‌ন,ইন্দোনেশিয়া হয়ে মিশর,ইয়ামেন,সিরিয়া…কী সাংঘাতিক সমীকরণ! !

ব্যক্তি নিয়েই সমাজ। ব্যক্তির অপরাধ এবং দায় পুরো সমাজের। অথচ কখনো প্রশ্ন করিনি, আমরা যাদের জঙ্গি বলছি, পায়ে শেকল পরিয়ে মনের সুখ মিটাচ্ছি। এরা কারা ? জঙ্গিবাদ নামে নির্বিচারে বিশাল একটি শ্রেণিকে আহত করে মূল সমস্যা জিঁইয়ে রেখেছি। ইসলামের আর্দশিক ভবনা এবং সর্বজনীন আবেদনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদকে ঘরে টেনে নিয়ে আসছি । অবিরাম আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পুরো বিষয়টিকে সংশয়পূর্ণ করে তুলেছি। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মের মানসপঠে ইসলাম সম্পর্কে একটি ভীতিকর চিত্র তৈরি হচ্ছে।

লেখক – মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সদস্য – কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি জাতীয় পার্টি
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি – জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি
সভাপতি – জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ

(এই মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। )