যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ঋষিপল্লীতে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার পর সালিসে অপমান করার পর আত্মহত্যা করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতি।
গত ৯ তারিখ বিভিন্ন দৈনিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়- যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ঋষিপল্লীতে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার পর সালিসে অপমান করার পর অত্মহত্যা করার ঘটেছে। জানা যায়, নিহত গৃহবধূ সনজিৎ দাসের স্ত্রী। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী ছিল।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় কাচারিবাড়ির মিজানুর ফকির। গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ গৃহবধূ তার স্বামীকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে আসে।
অভিযোগপত্র লেখার পর স্বামীর কাছে এলাকা থেকে ফোন করে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ফকির। এর মধ্যে সিরাজুল অভিযুক্ত মিজানুরের ভাই। তারা সনজিৎ ও তার স্ত্রীকে এলাকায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিসে সমাধানের কথা বলে অভিযোগপত্রটি ছিঁড়ে ফেলে। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ তারা ফিরে গেলে মিজানুরকে বাদ রেখে সালিসে বসে ইউপি সদস্য সিরাজুল ও মোস্তফা। সঙ্গে ছিল স্থানীয় বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক আবুল সরদারসহ কয়েকজন। সালিসে গৃহবধূকে তারা সমাধানের কথা না বলে অপমানজনক নানা কথা বলতে থাকে। বিচার না পেয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ বাড়িতে কীটনাশক পান করে গৃহবধূ। পরে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যরু মামলা করে গৃহবধূর স্বামী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঘটনার শিকার নারীকে বেআইনী সালিশের মাধ্যমে অপবাদ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি ও নারীর মর্যাদাহানী এবং জরিমানার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে।যারা এই ধর্ষণের ঘটনার বেআইনী সালিশের সাথে জড়িত তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে। ঘটনার শিকার গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের অনুরোধ জানাচ্ছে। একইসাথে বেআইনী সালিশ বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন বিষয়ে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সেইসাথে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে সকল সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
নারীর প্রতি বর্বরতার ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। উক্ত ঘটনাদ্বয়ের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহনসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশে সংঘটিত নারী ও কন্যা নির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।