এই অসততার দায় আপনাদের যারা নতুনদের হাতে ইতিহাস নামের কলংকের বই তুলে দিয়েছেন

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২৩
0

ডা জাকারিয়া চৌধুরী:

শিরোনাম দেখেই আশা করি বুঝে গেছেন আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু। জানা জিনিসে চলুন আরেকবার চোখ বুলাই। আমরা যা পড়ি সে পড়ায় ফাক থাকে। অনেক কিছু চোখ এডিয়ে যায়। এজন্য একই বিষয় একই লেখা বহুবার বহুজনের আর্টিকেলে পড়া উচিত মনে করি। একেকজনের দৃষ্টিভংগি একেক রকম। এ দেশের মানুষ গুলো কেমন তার একটা উদাহরন দেই। একজন লেখিকা শারমিন আহমেদের কথাই ধরুন না !! তিনি মহাবীর তাজউদ্দিন সাহেবের মেয়ে। নেতা ও পিতা / পিতা ও নেতা নামের এক মহা ঐতিহাসিক বইয়ের লেখিকা। এ বইটি তিনি যখন বিদেশ বিভূঁইয়ে বসে লিখছিলেব, সে সময় তার কোন একজন বোন দেশে বসে তা সম্পাদনা করে সিরিজ আকারে প্রথম আলোতে ছাপছিলেন। সে বোনের নাম সিমিন হোসেন রিমি বা এমন কিছু। তারপর লীগ ক্ষমতায় এলো। তাজউদ্দিনের ছেলে মন্ত্রী হলো.. প্রথম আলোর কলাম থেকে লেখাগুলো বইয়ের ভেতর এসে জড়ো হল। আমি অবাক হয়ে গেলাম সেটি পড়তে গিয়ে। বইয়ের ভেতরে দিন কে রাত আবার রাতকে দিনে বদলে ফেলা হয়েছে। আমি বুঝতে অক্ষম হয়ে গেলাম এ দুইয়ের কোন লেখাটাকে সত্য ভাববো। তারপর এর যত এডিশন এসেছে ততবারই দাড়ি, কমা, এটা ওটা বদলেছে। আর আমি এ পরিবারটির প্রতি ব্যাক্তিগতভাবে রুচি হারিয়েছি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মি হাবিবুর রহমানের কথা কি আপনাদের মনে আছে ? তিনি তার বইয়ে লিখেছিলেন ৭ ই মার্চের ভাষন – জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান’ বলে শেষ করেছিলেন। সেই হাবিবুর রহমানই প্রধান উপদেষ্টা হবার পর সে লেখা আমুল পালটে ফেলেছিলেন। দেশের একজন শীর্ষ বুদ্ধিজীবী যিনি বিচার ও নির্বাহী দুই কাঠামোর প্রধান ছিলেন তিনিও যদি এমন খবিশ হন, এ জাতি ঠিক কোন ক্লজে নিজেদের জাতিস্বত্বার আলাদা অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্ব দরবারে পরিচয় দেয়ার সাহস দেখাবে ভাবেন !! একটা রাষ্ট্র কাঠামো গড়েই উঠে এ দুই বিভাগকে ভিত্তি ধরে। তিনি নিজে সে ভিত্তি ভেংগে দিলেন!!

এদেশে খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাধীনতা ঘোষনা, যুদ্ধ, যুদ্ধ জয়ের ক্রেডিট নিতে চায় যারা, তারা কি অস্বীকার করতে পারবে ২৫ শে মার্চ রাত পর্যন্ত লীগের হয়ে ইয়াহিয়ার সাথে যে ছয়জন লীগের সরকার গঠনের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের একজনের নাম জনাব মওদূদ আহমেদ। অন্যজন কে জানেন ? গোলাম আজম। যে দু’জনের নাম উচ্চারন করলাম তাদেরকে খাটো করছি না। লীগকে দোষারোপ করছি না। একটা চলমান আন্দোলনের সময় যদি আলোচনার কোনো পথ খোলা না রাখা হয়, তবে এর ফল আরও খারাপ হতো। আজ ২৫ শে মার্চ ২০২৩ ইং সনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনাব ইমরান খানের সাথে সেনা ব্যাকড স্টাবলিশমেন্ট এবং নওয়াজ, পিপিপি যা করছে সে একই বর্বরতা শতগুনে বেশি চালিয়েছিল ১৯৭১ সনে এই ঢাকার বুকে। সে সময় ত আর আজকের মত অনলাইন, লাইভ, স্যাটেলাইট, প্যাগাসাস ছিল না। পাকিস্তানের কুমতলব হাসিল তাই অনেকটাই সহজ হয়েছিল যা আজকের পাকিস্তানে খুব সাবধানে করতে হচ্ছে। ১৯৭১ সনে পাকিস্তানের যে পরিনতি হয়েছিল, এখন তারচে খারাপ পরিনতির অপেক্ষা করছে দেশটি যদি তারা সত্যই অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে থাকে।

প্রাসংগিক কারনেই উপরের কথাগুলো বলা। এটা মনে করার প্রয়োজন নেই যে আমি মুল প্রসংগ থেকে সরে গেছি। আমার মনে আছে, আজকের বিষয় ২৫’শে মার্চের গনহত্যাঃ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় এবং নতুন প্রজন্মের ভাবনা। কথা বলছি স্বাধীনতা উত্তর নতুন প্রজন্মের একজন ছাত্র হিসেবে। আমার কথায় ভুল থাকতে পারে, ভ্রান্তি হতে পারে, ত্রুটিপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে। ভুল হলে সেটা স্বীকারে আমি লজ্জিত হই না। কিন্তু যারা জাতীর মাথায় কাঠাল খেয়ে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য, ইতিহাস আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছেন, জাতিবিনাশী কান্ড করে গেছেন, আগে প্রয়োজন তাদের বিচার। এরপর আমাদের দোষ ধরার পালা, সেও যদি জ্ঞাতসারে কোন দোষ করে থাকি। চলুন মুল কথায় চলে যাই –

২৫ শে মার্চের গনহত্যার বিষয় খুঁজতে গিয়ে একটা বিষয় মাথায় এলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুর্ব ইতিহাসে দুটি নাম কখনোই মুছে ফেলা যাবে না। একজন হলেন চিত্তরঞ্জন সুতার এবং অপরজন ডা: কালীদাস বৈদ্য। এ দ্বৈরথ যথা চিত্তরঞ্জন সুতার এবং ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৬২ সালেই যদি ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন হয়ে যায়, যার সদর দপ্তর ছিল তদানীন্তন শত্রু রাষ্ট্রে এবং নেতৃত্বে ছিল এদেশের চারজন কিংবদন্তী সোনার সন্তান তবে আমার মনে এ প্রশ্ন সর্বাগ্রে এসেছে যে, ২৫ শে মার্চের ভয়ংকর এই কালরাতের বীজ কোনটি? সে কি পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকে শত্রুতা নাকি পাকিস্তানের একচোখা নীতি ? ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ভারত থেকে আগত মুহাজিরদের সাথে বাঙ্গালীদের অবিরাম হানাহানি, লুটপাট, সম্ভ্রমহানি, হত্যা করে উল্লাস করার ঘটনায় পশ্চিম পাকিস্তান ক্ষিপ্ত ছিল। মুহাজিরের দল পুর্ব এবং পশ্চিম উভয় অংশেই প্রবেশ করেছিল যেহেতু ভারত – পাকিস্তান আলাদা-ই হয়েছে ধর্মের কারনে। পশ্চিম পাকিস্তানে যারা সম অধিকার নিয়ে বসত গড়েছে সেই একই লোকেরা পুর্ব পাকিস্তানে এসে হয়ে গেছে অলিখিত একদল যাযাবর। এ তথ্য ভুল হলে আমি সবচে বেশি খুশি হব।একই ধর্মের হয়েও যেখানে মুহাজিরেরা সম অধিকার নিয়ে থাকবার কথা সেখানে তাদের জীবন কতটা পর্যুদস্ত হয়েছিল যে ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান পরাজয়ের দলিলে সই করে ফেলে ঠিকই, কিন্তু স্বাধীন হয়নি ঢাকার বিহারি অধ্যুষিত মিরপুর। বিহারীদের ভয়াবহ পরিনতি হবে জেনেও তারা কেন আত্মসমর্পন করল না, এর মনো:স্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন। বার্মা থেকে যে লাখ লাখ শরনার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, কয়টি পরিবার তাদের সম্পত্তি না খুইয়ে এখনো টিকে আছে !! কয়টি যুবতী মেয়ে বাকি আছে যারা ধর্ষিত হয়নি বা ধর্ষনে বাধ্য হয়নি। এ কাজ গুলো কি বার্মার মগেরা করেছিল ? না, এদেশের মগেরা করেছে। হিস্টোরি রিপিটস ইটসেল্ফ। আজ রোহিংগাদের উপর যারা বর্বরতা করেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত ২৩ বছর সেইসব রাজনৈতিক ধর্মের লোকেরা-ই বিহারীদের উপর নির্মমতা চালিয়েছিল। এরা-ই ২০১৫/১৬ সালে কালসিতে ঘরে ঘরে তালা ঝুলিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল বস্তির পর বস্তি। আমাদেরকে সত্যাশ্রয়ী হতে হবে।

৭০ এর নির্বাচনে দুই অঞ্চলের মানুষের স্পষ্ট বিভক্ত রায়, আওয়ামীলীগের বিপুল বিজয় স্বত্ত্বেও আজ পর্যন্ত সে নির্বাচনকে বিতর্কিত বলা হয় কেন ? কেন সে নির্বাচনে লীগের লোক ছাড়া এদেশে অন্য কেউ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি ? কেন পাকিস্তান এ প্রশ্নে নিজেদের পক্ষে জনমানসের একটা সিমপ্যাথি এখনো পায়, আমাদেরকে ভাবতে হবে। সাবেক সিইসি জনাব শামসুল হক যখন বললেন ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের নির্বাচন উপহার দেবেন তখন কিন্তু সুধী সমাজে একটা ছি ছি পরেছিল। শামসুল হক সাহেবকে পরে এ কথার ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। এটুকু যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আসলে হয়েছিলটা কি ? একজন ছাত্র হিসেবে এ কৌতুহল আমার রয়ে যাবে জনম জনম ধরে। সে একই নির্বাচনে নিছক দুই একজন বাদে হঠাৎ করেই ভাসানি সহ বাকি দলগুলোর নির্বাচন বর্জন, শেখ মুজিব-ইয়াহিয়ার আলোচনা ও সমঝোতা চুক্তিতে ছেদ পরা, নাকি কোন শত্রু রাষ্ট্র কিছুতেই চায়নি শেখ মুজিবের ক্ষমতায়ন, নাকি সব কিছু একই সুত্রে গাঁথা – এ প্রশ্নগুলোর বাস্তবভিত্তিক একটা স্থায়ী মিমাংসা থাকা উচিত। যদি কারো কাছে এসবের উত্তর থাকে আমাকে দয়া করে জানাবেন আশা করি। আচ্ছা এমন কি হতে পারে যে, একজন মহানায়ক গোপনে কোনো গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ছিলেন !! নাকি মহানায়কের পক্ষে সুতার গোষ্ঠীর ইচ্ছের বিপরীতে চলার উপায় ছিল না, নাকি ৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের নিয়ন্ত্রন সিআইএ নিয়ন্ত্রিন ম্যাগি থেকে আইয়ুব খানের হাতে কুক্ষিগত করে ফেলার মার্কিন প্রতিশোধ, নাকি ৬২ সালে ভারত যখন চায়নার হাতে বেদম মার খেল তখন আমেরিকার হুকুমে পাকিস্তানের ভারতকে সহায়তা না করার মাশুল ? নাকি তাসখন্দ চুক্তির প্রতিশোধ!! নাকি সব কিছু ঘুরে ফিরে একই সুত্রে গাঁথা ? নাকি সাম্প্রদায়িকভাবে স্বাধীন পুর্ব পাকিস্তানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে বিশেষ মহলের সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার দীর্ঘ প্রচেষ্টার বারুদে আগুন দান ? আমাদেরকে লাইন ধরে ধরে এগুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের এই ভয়াবহ দুর্যোগে হাতে নিজের প্রান নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন ডিসিপ্লিনারি সেকশন থেকে আগত একজন সেনা অফিসার। তিনি জানতেন এ ঘটনার আফটারম্যাথ কি হবে !! ফাসিতে ঝুলতে হবে তাকে। তাতে কি!! দেশ আগে। জিয়াউর রহমান, যিনি এখনো এদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে মেজর জিয়া নামে পরিচিত। নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি এড্রেস করে স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে কালুরঘাট বেতার থেকে দেশের স্বাধীনতার ঘোষনাটি দিলেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া হেডলাইন নিউজ করল – জিয়ার ঘোষনাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার তূর্যধ্বনি। অন্যদিকে যুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যন্ত ( নভেম্বর ৭, ওয়াশিংটন স্ট্যাট ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য দিলেন ভারতের পিএম মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ) ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে শেখ মুজিবের সম্পৃক্ততা খুজে না পাওয়ার বক্তব্যে অটল রইল। ইন্দিরা গান্ধী তার ভাষনে বললেন – the cry for independence arose after Sheikh Muzib was arrested, not before. He himself, so far as i know has not asked for independence even now.

আমার ক্ষুদ্র মাথায় ধরে না, সুনির্দিষ্ট দলিল পত্র ছাড়া বাথরুমের গল্প, ছিদ্র দিয়ে চিরকুট ফেলা, ৭ ই মার্চ-ই স্বাধীনতা দিবস এসব বলতে বলতে একদল লোক এর তার প্রতি তেড়ে আসে কেন ? এরা কি জানে না, এটা ২০২৩ সাল !!

আমি বা আমরা নতুন প্রজন্মের কেউ এসবের বিশদ কিছু জানিনা। এদেশে যারা ইতিহাস লিখেছেন, যারা ইতিহাসের ব্যাখ্যা লিখেছেন কিংবা ইতিহাসকে সিলেবাসে এনেছেন তাদের কেউ কখনো জাতিকে নির্ভেজাল সত্য জানানোর প্রয়জনীয়তা অনুভব করেছেন বলে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা। এখানে প্রতিজন প্রতিটি কাজ করেছেন কোন না কোন ধান্ধা নিয়ে। তা না হলে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে গিয়ে কেন শুনতে হয়, এখানকার ট্রেজারার কুড়ি লক্ষ টাকা চুরি করে ভারতে পালিয়েছিলেন, ওখানকার অমুক এই করেছেন, সেখানকার সিদ্দিকী সাহেব যুদ্ধের খরচ বাবদ যুদ্ধ শুরুর আগেই তিন লক্ষ বেল পাট চোরাই বাজারে বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন ? যাদের কথা বললাম, তারা সকলেই এদেশের কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধা। এদেশের মহান সন্তান আকবর আলী খান নিজ হাতে অস্ত্রের গুদাম খুলে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। কারা সেসব অস্ত্র নিল, তিনি সে তালিকাও করার সাহস দেখালেন না। গত দুই যুগ আমরা তার জ্ঞানে জ্ঞানে পরিপুষ্ট হিমসাগর আমের চেহারাটা দেখলাম !! সেলুকাস !!!

কেউ কেউ বেচেও আছেন। কই দুনিয়ার আর কোন দ্বিতীয় দেশের নাম কেউ বলতে পারবেন যেখানে স্বাধীনতার যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া এবং পরিচালনার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতে হয় সম্পুর্ন অচেনা, অজানা এক সেনা অফিসারকে। তার আগেই রাজনৈতিক নেতারা হাওয়া। তারা ভারতে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধ শুরুর আগেই এমন গোলামী চুক্তি করে বসেন যে, এক নেতার স্বাক্ষর দেখে আরেক নেতা বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন?

২৫ শে মার্চের গনহত্যাঃ এবং তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের পরিস্কার চিত্রটা-ই যেহেতু পরিস্কার জানিনা সেহেতু এদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কেও তেমন কিছু জানিনা। আর এসব বিষয়ে নতুন প্রজন্ম যে খুব ভাবে, তা বিশ্বাস করার কারন নেই। আজকের শিক্ষা ব্যাবস্থায় আমাদের ছেলেমেয়েরা যে রিডিং পড়তে পারে এবং এই যোগ্যতা নিয়েই এ প্লাস, গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে যাচ্ছে তাতেই আমি খুশি। তাদের ভাল রেজাল্টের জন্যে ইতিহাস জানার দরকার হয় না, তাই তারা ইতিহাস জানেনা। যেহেতু ইতিহাস না জানলেও বিদ্বানের খাতায় নিজের নামের ছাপা অক্ষর গুলো স্পষ্ট চিনতে তাদের অসুবিধা হয় না সেহেতু অতিরিক্ত কষ্ট না করে, মৃত দাদার লাশ দেখতে দিয়ে দাদার সাথে তার শেষ সেলফি’টা তুলে ফেলার আনন্দকে তারা ঐতিহাসিক কর্মকান্ডের অংশ মনে। এটাই আজকের বাস্তবতা এবং ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতের ইতিহাস।

আমরা শুধু নিজের চেষ্টায় জেনে গেছি এদেশের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ভাই বোনের আত্ম-ত্যাগের কথা। যাদের কল্যানে স্বাধীন বাংলা নামের দেশ পেয়েও বারবার গোলামী চুক্তি করে তাদের আত্মার সাথে বিকট্রে করে বসে আছি। আমরা যাদের কথা জেনেছি তারা প্রায় কেহই ইতিহাসের অংশ হতে পারেনি, যারা ইতিহাসে মহামান্য হয়েছেন তারা ইতিহাসের কিছু নন। এ নষ্ট অসততার দায় আপনাদের যারা নতুনদের হাতে ইতিহাস নামের কলংকের বই তুলে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্ম যদি এ দেশ এবং দেশের অখন্ডতা, জাতীয়তাবাদ নিয়ে কিছু না জানে তবে তারা ভাববে কি করে ? অজানা জিনিস নিয়ে না ভাবতে পারা দোষনীয় নয় নিশ্চয়ই। আমার চোখে অন্তত নয়।


ডা জাকারিয়া চৌধূরী
লেখক চিকিৎসক,রাজনৈতিক,গণমাধ্যমকর্মী