একক চক্রের দখলেই ২০০০ তরুণীর আইডি হ্যাক

আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১
0

অভিজাত পরিবারের সন্তান। দেখতে সুন্দরী। বয়স আঠারোর ঘরে। ব্যবহার করেন দামি হ্যান্ডসেট। দুই বছর হলো ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ফেসবুকে ঘন ঘন আপলোড করেন নানা ভঙ্গির ছবি। বন্ধুরা তাতে লাইক-কমেন্ট করেন। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারেই সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে চ্যাট করেন।

অডিও কলে কথাও বলেন। একদিন ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর কাছ থেকে একটি লিংক আসে ম্যাসেঞ্জারে। সঙ্গে সঙ্গে লিংকে ক্লিক করেন। পরে ওই লিংক থেকে চাওয়া হয় ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড। ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কাছ থেকে লিংক এসেছে তাই আগ্রহ সহকারে পাসওয়ার্ড ও আইডি দেন। তার কিছুক্ষণ পর থেকে তার আইডিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিজের আইডিতে নিজেই ঢুকতে পারছিলেন না। কয়েক ঘণ্টা পরে অবশ্য আইডিতে ঢুকতে পারেন।

ততক্ষণে তার ম্যাসেঞ্জারে অপরিচিত কেউ নক করে। কথা বলার এক পর্যায়ে অপরিচিত ব্যক্তি জানায়, তার কাছে ওই তরুণীর বেশকিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও আছে। তার কথামতো না চললে এগুলো ভাইরাল করে দিবে। আকুতি-মিনতি করে রেহাই পাননি তরুণী। পরে হ্যাকারদের চাহিদামতো টাকা দেন তরুণী। এভাবে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিতে থাকে হ্যাকাররা। উপায়ন্তর না পেয়ে তরুণী তার পরিবারকে সবকিছু খুলে বলে। পরে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

শুধু ওই তরুণী নন, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল ভয়াবহভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণী ও যুবতীদের আইডি হ্যাক করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে হ্যাকাররা। আইডি হ্যাক করে তরুণীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে যে শুধু টাকা আদায় করছে সেটি নয়। বরং তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে নানা কিসিমের বিপদের দিকে।

ব্ল্যাকমেইলের শিকার অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেক পরিবার অশান্তিতে ভুগছে। আবার কেউ কেউ প্রতারকদের চাহিদামতো টাকা ও অনেকক্ষেত্রে একান্ত সময় কাটাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। কারণ আইডি হ্যাক করে হ্যাকাররা ওই আইডি’র ম্যাসেঞ্জার ঘাঁটাঘাঁটি করে ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও নিজের হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছে।

পরে এসব ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে। এক তরুণীর দেয়া অভিযোগের তদন্ত করতে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য পেয়েছে। সাইবার টিম জানতে পেরেছে তিন এলাকার তরুণ ও যুবকেরা আইডি হ্যাক করাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। গত দেড় বছরে ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জন হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার এসব হ্যাকাররা কয়েক বছরে লাখ লাখ আইডি হ্যাক করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তারা হ্যাকিং শুরু করে। সম্প্রতি সাইবার টিম মাদারীপুরের শিবচর থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো- ওবায়দুর রহমান নোবেল (২০), শামীম সরদার (২১) ও সজীব খলিফা (২১)। এই তিন হ্যাকার প্রায় ২ হাজার তরুণীর আইডি হ্যাক করেছে। তাদের টার্গেটই থাকে তরুণী/যুবতীদের আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল করা।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমসূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজন মিলেই একটি চক্র গড়ে তুলেছিল। চক্রের মূলহোতা ছিল ওবায়দুর রহমান নোবেল। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে নোবেল নারীদের পার্সের একটি দোকান দেয়। তার দোকানে নিয়মিত তরুণী-যুবতীদের আনাগোনা ছিল। যাদের অনেককে সে চিনতো।

তখন থেকেই তাদের আইডি হ্যাক করার পরিকল্পনা করে। আরেক হ্যাকার শামীম সরদার চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করে। আর সজীব খলিফা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পেশায় সে একজন দর্জি।