কত টাকা দিয়ে টিকা কিনছেন তা জনগনের জানার অধিকার আছে, জানান — ডা. জাফরুল্লাহ

আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১
0

নাগরিক সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, করোনার টিকা দিতে না পারেন, ডেঙ্গুর
চিকিৎসা করুন। মশারী দিন। প্যারাসিটামল দিন। ডেঙ্গুর চিকিৎসা করতে বেশি
কিছু লাগবে না। আপনাকে অনুরোধ করছি ১ লক্ষ মশারী গরীবের মাঝে বিতরণ
করেন। ১০ লক্ষ প্যারাসিটামল দিন। গোরার্তুমি করবেন না।

শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
“অবিলম্বে সবার জন্য টিকা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও,নিম্ন আয়ের
মানুষের জন্য রেশনিং ও জনজীবন সচল রাখার ৩ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের
দাবিতে নাগরিক সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও
গণস্বাস্থের ট্রাস্টি ডা.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন,আজকের দিনটা আমার জন্য বিশেষ
স্মরণীয় দিন। ১৯৭২ সালে মুজিব ভাই হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন সাভার থেকে
তার অফিসে। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না হঠাৎ তিনি কেন আমাকে ডাকলেন। বাকশালে
যোগাদানের জন্য বললেন। মুজিব ভাইয়ের সাথে তর্ক করা যায়, মতানৈক্য করা
যায়। আমি বললাম আপনি তো সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আপনি
বাকশাল করেন না। আমি বলেছিলাম আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। আপনি
ঐ পথে পা দিয়েন না। আপনি গণতন্ত্রের পথেই থাকেন। এর পর আমি চলে যাই
বিদেশে আমার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে। এর পরের দিনই ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক
ঘটনা ঘটে। এর পর সাংবাদিকরা আমাকে সেই খবর দিয়েছিল। প্রশ্ন করেছিল,
your prime minister has been killed. What is your reaction? আমি
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল। আমি বলেছিলাম
উনি রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেলেন।
আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে এসে বলেছিলেন, আমার বাবা মা কে
হত্যা করা হয়েছে। তোমরা কাঁদো নাই, আমি তোমাদেরকে কাঁদায়ে ছাড়বো। তাই
উনি আজকে আমাদের সবাইকে কাঁদাচ্ছে। ভ্যাকসিনের কথা বলে ভ্যাকসিন দেন না।
যেখানে সাড়ে সাত ডলার দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিন পাওয়া
যায়,ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি কার‌্যকর প্রমাণিত, সেটা না কিনে
বেশি দাম দিয়ে কিনছেন।

ভ্যাক্সিনের কথা বলে ভ্যাক্সিন দিচ্ছেন না। যেখানে সাড়ে সাত ডলারে
সবচেয়ে ভালো ভ্যক্সিন পাওয়া যায়। সেখানে বেশি দাম দিয়ে ভ্যাক্সিন
আনছেন। রাশিয়া থেকে ২ কোটি টিকা দিতে চেয়েছিল। নিলেন না। প্রাইভেটে
দেন নি। খুব ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু কত টাকা দিয়ে টিকা কেনা হচ্ছে
জানার অধিকার সবার আছে। এটা গোপন থাকিতে পারে না।

অকারণে যদি আজকে বঙ্গবন্ধুকে সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর জন্য টানাটানি করা
হয়, সেটা খুবই জঘন্য কাজ হবে। একইভাবে ভুল কাজ হচ্ছে জিয়াউর রহমানকে
শেখ মুজিবের হত্যার সাথে জড়িত করে অকারণে মিথ্যাচার করা। এটাকে
অ্যাটেনশান ডাইভারশন বলে। গোয়েন্দা বাহিনী অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে দেবার
জন্য তারা পরীমনি আবিস্কার করেছে, তারা সম্রাট আবিস্কার করেছে, এখানেও
তাই।
তিন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী কে বলছি, ক্ষমতা চিরকাল থাকবে না। তখন
সুষ্ঠুভাবে টিকা না
দেওয়ার অপরাধে আপনারও বিচার হতে পারে। সেই দন্ড হবে খালেদা জিয়ার
দণ্ডের চাইতে বেশি। সেদিন আপনার পাশে আমাদের মতো কয়েকজন ছাড়া কাউকে
পাবেন না। যেমন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কাদের সিদ্দিকী ছাড়া কেউ আওয়াজ
করে নি। কাজেই ক্ষমা করতে শিখুন। ভুলে গেলে চলবে না বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে
বড় অপরাধী ভুট্টোকেও ক্ষমা করেছিল।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আত্নরক্ষার শিক্ষা
দেন, যাতে তারা নিজ দেশে গিয়ে যুদ্ধ করতে পারে, তারা আরাকানকে মুক্ত
করতে পারে, যেভাবে তালেবানরা করেছে। রোহিঙ্গাদের সাথে তালেবানদের
যোগসূত্র খতিয়ে দেন, তাহলে তারা আরাকান মুক্ত করবে, আমাদের দেশ থেকে ১২
লক্ষ লোক যাবে। আজকে বিশ্বব্যাংক বলছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশকে নিয়ে
নিতে। এতোবড়ো সাহস তারা কিভাবে দেখালো। এর তাড়না আপনি তাদের সৎবুদ্ধি
দেন নাই।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মান্না, করোনা বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ লোক নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। একমাস লকডাউন ছিল করোনা কমেনি।এখন
ও করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে।।

তাহলে এখন লকডাউন খুলে দিল কেন। লকডাউন খুলে
দেওয়াতে মানুষ কাজ করে খেতে পারবে, তবু স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এই ১৬/১৭ মাসে একদিনের জন্য ঘরের বাইরে যান নাই। নিজের
জীবন কে নিরাপদ করেছেন কিন্তু জনগনের জীবনের নিরাপত্তার তিনি ভাবেন না।
সরকার তাদের ইচ্ছামত লকডাউন দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা সহ অনেক দেশ
খুলে দিয়েছে কিন্তু আমরা খুলতে পারিনা, কারণ আমরা টিকা দেই না। টিকা নিয়ে
বিশৃখলা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ লাইন দিয়েও টিকা পাচ্ছে না।
অন্যদিকে নিজেদের লোকদের লাইনের পেছন থেকে এনে টিকা দিচ্ছে। জীবন মৃত্যু
নিয়ে যেখানে খেলা চলছে সেখানে সরকার দলবাজি করছে।
ভাসানী অনুসারীর মহাসচিব অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষথেকে “অবিলম্বে
সবার জন্য টিকা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও,নিম্ন আয়ের মানুষের
জন্য রেশনিং ও জনজীবন সচল রাখার ৩ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দাবিতে- ৩
দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

গণসংহতি আন্দোলণের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন,পুলিশ,র‍্যাবের
জনগনের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক থাকার কথা। তারা জনগনের টাকায় চলেন। তাদের
অভ্যন্তরীন দ্বন্দের কথা শোনা যাচ্ছে। আজকে দেশে মানুষ মরছে, দুর্নীতি
হচ্ছে এই সব সংকটের দিকে যাতে দৃষ্টি না যায় মানুষের তাই পরীমনি নিয়ে এই
ব্যস্ততা। তারা পরিমনি নিয়ে আটকে আছে। প্রতিদিন রগ রগে সংবাদ। আর যত ভাবে
নারীর বিরুদ্ধে কুতসা করা যায়। পরিমনী ৩ কোটি টাকার গাড়ি নিয়েছেন তাই
তিনি খুব খারাপ, আর যিনি গাড়ি দিয়েছেন তিনি দুধ খায়, খুব ভালো। নারীর
জন্য এক আইন,পুরুষের জন্য আলাদা আইন। একজন নারী যদি অপরাধ করেন তার
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মনে হল তার বিরুদ্ধে পুরো
রাষ্ট্র ঝাপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে আর কোন সমস্যা নাই। এই রাষ্ট্র ঘরে যখন
তখন ঢুকে যায়। আপনাকে যা তা বলে, আপনাকে যখন খুশি অপরাধী বানিয়ে দিতে
পারে। তাই অইক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাচানো দরকার। তিন
দফা দাবি তোলা।হয়েছে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে ক্ষমতা থেকে চলে যান।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বন্ধ। এ নিয়ে সরকারে কোন ভ্রুক্ষেপ।নাই। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান খুলতে একেক সময় একেক তারিখ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট
একটা রোডম্যাপ দিতে পারে নাই। আমরা দ্রুত তর সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার
নির্দেশনা চাই। আজকে হাসপাতালে সিট নাই, মানুষ না খেয়ে মরছে কিন্তু সরকার
করোনা কে কাজে লাগিয়ে কিভাবে ক্ষমতাদীর্ঘস্থায়ী করবে সেই চেষ্টা করছে।
মানুষ বেচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে তুচ্ছ ঘটনাকে রংচঙ মাখিয়ে আইনশৃঙখলা
বাহিনী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাটকের অবতারণা করছে।

বক্তব্য রাখবেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না,কল্যান
পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রহিম বীর
প্রতীক, জেএসডি‘র কার্যকারী সভাপতি সা কা ম আনিছুর রহমান খান, ভাসানী
অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের
প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক
আজিজ উলফাত, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি,
ডাকসুর সাবেক সভিপি নূরল হক নূর, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য এডভোকেট হাসনাত
কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদ উল্লাহ কায়সার, গনফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক প্রমূখ্। সভা পরিচালনা
করেন সাগরকি ঐক্যের ডা: জাহিদু রহমান ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের জাহাঙ্গীর
আলম মিন্টু।