কল্পনায় গোমতীতে যে সমস্যার সমাধান খুজে পাই

আপডেট: মে ২০, ২০২৩
0


ডা জাকারিয়া চৌধুরী

এ বস্তিতে খুব সম্ভবতঃ একটা নিশি পদ্ম আছে,
প্রায়ই মানুষ তাকে রাস্তায় এনে পিটায়

তার চিৎকারে আজ দৌড়ে বাইরে গিয়েছিলাম-
আমাকে সবাই আটকে রাখল।
এসবে যাবেন না’- হুকুমের স্বরে বলে গেলো দাড়োয়ান।

এখানে এটাই চামেলিদের নিত্য জীবন।

এক জীবনে দেখা সব নারী-ই কখনো না কখনো চামেলী।

কিছু কথা আছে যা কখনো মুখে বলা যায় না।

চামেলিকে যেমন কখনো কিছু বলা হয়ে উঠেনি,

মেয়েটিকে প্রায়ই কারা যেন খুব মারে-একেবারে রাস্তায় তুলে,

বিবস্ত্র করে করে ছাড়ে।

কেন যে মারে, কেন যে সে এতো সহ্য করে !

কিভাবে যে সে এতো বিরামহীন চিৎকার করে !

কেন যে তাকে প্রায়ই চেচিয়ে সাবেক এই ট্রাংক রোডটাতে তোলা হয়,

কেন যে চামেলিদের জীবন এমন প্রকাশ্য বিষাদে ভরা,

কেন যে সে বিষাদ মধ্যরাতে আমাকেও আক্রান্ত করে,

এর কোন প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।

বেশিরভাগ মানুষেরই নেই।

পতিতা মেয়েটি যদি কিছুটা উত্তরে সরে যেতো-

তবে মৃত প্রায় গোমতীও নিশ্চয়ই তাকে সামান্য সময়ের জন্যে টেনে নিত;

আমরা যে দৃশ্যকে মৃত্যু হিসেবে ভাবতাম-

সে একই অবস্থা হতে পারতো তার মুক্তির জয় ধ্বনি।

একটা ভাবনা আমার গলায় কাটার মত বিঁধে থাকে-

‘মৃত্যুর বিনিময়ে মুক্তি’- মানুষ প্রত্যাশা করেনা

হ্যাঁ তাই।

এইজন্যেই একই ঘটনা তার নিয়ত ঘটে চলেছে।

আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখি-

হরিজন পাড়ায় আমাদের তো প্রবেশ নিষেধ।

অথচ চামেলিকে চেচিয়ে তোলা হয় আমাদের উঠোনে-

এখানে বাধার বালাই নেই, প্রশ্রয় আছে।

আমাদের গুরুজনেরা তাদের গোপন বন্ধু,

শুধু পন্য চামেলির কোন বন্ধু নেই।

এ পাড়ায় নেই ও পাড়ায় নেই- কোথাও নেই।

ঘড়ির কাটার মত অবিরাম একই দিকে ঘুরে চলছে-

চামেলিদের জীবন।

দেয়ালে টানানো পেন্ডুলাম ঘড়ির মত-

একই বিরতিতে ঢং ঢং করে হাড় হিম করা আওয়াজ তুলছে-

চামেলির চিৎকার। বুক আমার উথাল পাথাল ঢেউয়ে দুলছে।

আমি যেন স্থরির কোন বোবা বনে গেছি।

আর মানুষ এমন হয়ে গেছে যে-

প্রতিরাতে মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও পরদিন একটা শুভ সকালের স্বপ্ন দেখে,

আমি তার পরের রাতের দৃশ্য কল্পনা করে শিউরে উঠি,

কল্পনায় গোমতীতে যে সমস্যার সমাধান খুজে পাই,

সে সমাধান তার চোখে নির্ঘাত মৃত্যু।

এটাই আজ রাতে আমার আর চামেলির ভাবনার ব্যাবধান।

এখানে হরিজন আর আমরা আলাদা হয়ে গেছি।

বেভারলি হিলস,

কুমিল্লা।