কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া জাপা। আসন্ন নির্বচনকে সামনে রেখে এ আসনের ভোটারদের মধ্যে চলছে ব্যাপক নির্বাচনী আলোচনা ও ভোটের হিসাব নিকাশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবী বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত্য নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তাহলে তাহলে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।অপরদিকে জাপা ও আওয়ামীলীগের মধ্যে জোট হলে সেই ক্ষেত্রে জোটের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলে তাদের দাবী।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও সমমনা দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশিরা জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। অনেকে এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও দলীয় জনসভায় অংশ গ্রহণ করে জনসমর্থন বৃদ্ধির পাশপাশি বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করে উর্ধ্বতন নেতাদের দৃষ্টি আর্কষনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অধিকাংশ নেতাকর্মী মামলা হামলার কারণে আত্মগোপনে রয়েছে। যারা আছে তারাও মামলার ভয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
স্বাধীনতার পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও ৩য় সংসদ নির্বাচন থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত (৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারীর নির্বাচন ছাড়া) ছিলো জাপার দখলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে উন্মুক্ত (জোটগতভাবে নয়) নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রয়েছে একক প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর ছাড়াও দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নাগেশ্বরী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মাজু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ¦ল। এছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সম্পাদক ও সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা এবং জাকের পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার।
কুড়িগ্রাম-১ আসন নাগেশ্বরী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভূরুঙ্গামারীর কয়েকজন ভোটারে সাথে আলাপকালে জানান, এ আসনে এবার জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে দুই উপজেলার উন্নয়ন বৈষম্য। নাগেশ্বরী উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। নাগেশ্বরীতে পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ, মডেল মসজিদ, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, রাস্তা-ঘাট নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এসবের কোনটিই হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের জন্য এই আসনে জাতীয় সংসদ সদস্যের বরাদ্দ ছিল কাবিটা-১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, কাবিখা চাল-৬৩ মেট্রিক টন, কাবিখা গম ৬৩ মেট্রিক টন, টি. আর-১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র টিআর-এর ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তিনি জানান, বিগত অর্থ বছর গুলোতেও বরাদ্দে প্রায় একইরকম বৈষম্য ছিলো। এসব কারণে স্থানীয় ভোটার ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। এছাড়া কচাকাটা থানাকে উপজেলা করা ঐ এলাকার গণমানুষের দাবী হলেও তার কোন অগ্রগতি না থাকায় স্থানীয় জনমনে রয়েছে ক্ষোভ।
এ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় দলের অভ্যন্তরে রয়েছে কোন্দল ও গ্রুপিং। দলীয় কোন্দল আর একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ অনেকটাই অগোছালো। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির স্থানীয় কিছু নেতার ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের অনেকেই তাদের ওপর বেশ নাখোশ। যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলটির স্থানীয় ত্যাগী নেতারা। এছাড়া জেলা পর্যায়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্য অর্ন্তদ্বন্ধ। যা উপজেলা গুলোতেও বিস্তার লাভ করছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ, অপরদিকে হারানো মসনদ ফিরে পেতে মরিয়া জাপা।
এই আসনে এলাকায় জামায়াতের অবস্থান বেশ শক্ত। যদিও তারা প্রকাশ্যে রাজনীতি না করলেও গ্রামে-গঞ্জে তাদের নেতাকর্মীরা গোপনে কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন বিটিএফ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) এর কাজী মো: লতিফুল কবীর রাসেল, জামায়াতে ইসলামীর আজিজুর রহমান স্বপন এবং জাকের পার্টি থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাষ্টার।
####