বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পর শিক্ষাকে সবচেয়ে ক্ষতি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেছে, শিক্ষক ব্যবস্থাপনার মূল কারণ হলো কেন্দ্রিকতা। এক জায়গা থেকে দেশের ১৮ কোটি মানুষের শাসনের প্রচেষ্টা। সকল বিভাগের ক্ষমতার উৎস একটি জায়গা। রাত্রিবেলা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, আমলা ও পুলিশের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা হয়েছে। যারা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের জন্য এক পঞ্চমাংশ বাজেটে বরাদ্দ হবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই সরকার মানুষের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে মানুষের গণতন্ত্র হরণ করার পরেই শিক্ষার অব্যবস্থাপনা।
শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী- “শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট: ২০২১-২০২২” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।আলোচনা সভার আয়োজন করে এডুকেশন রিফর্ম ইনশিয়েটিভ (ইআরআই)।
জাফরুল্লাহ বলেন, শিক্ষাকে এই সরকারের দুই জন মন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। একজন কমিউনিস্ট মন্ত্রী ঢুকেছিলেন আওয়ামী লীগে। এই কমিউনিস্ট মন্ত্রী কার আমলে দিলেন হাজার হাজার জিপিএ-5। এখন দরকার পরবর্তীতে যে শিক্ষা মন্ত্রী হয়ে আসলেন ডাক্তার সাহেবা এমন এক প্রেসক্রিপশন দিলেন.. এত ঝামেলা করার দরকার কি স্কুল কলেজ বন্ধ থাকুক। করোনার অজুহাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ। জাতিকে শিক্ষার দুর্বল করে দিতে বিদেশী মদ ও তো থাকতে পারে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে জাফর উল্লাহ বলেন, বিএনপি’র ক্ষমতায় আসারই ইচ্ছে নাই। ক্ষমতায় আসতে হলে ইচ্ছে, আগ্রহ থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিকল্পনা করতে হবে, যে কী কী জায়গায় পরিবর্তন আনবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। আজকে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে আল্লাহর ওহী দিয়ে।
লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকে উদ্দেশ্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তাছাড়া ওহী লন্ডন থেকেই বেশী আসে। সম্প্রতি লক্ষ করেছি, গত নির্বাচনে লোজই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই স্বৈরতান্ত্রীক সরকারের পতন ঘটাতে হলে, সবচেয়ে বেশী পরিবর্তন ঘটাতে হবে বিএনপি’র নিজের ঘরে। আপনার কি খালেদা জিয়ার চেহারা দেখেছেন, মনের মধ্যে একটা ডিপ্রেশনের ভাব। তারা (সরকার) যেভাবে উনাকে জীবিত থেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, বিএনপি’র লোকেরা হয়তো উপলব্ধি করতে পারে না। তার যদি মুক্তি চায়, আমি বারবার বলেছি তারেক তুমি ২ বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারোতো বিলেতে লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’ আজকে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব না।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, শিক্ষাবিদদের প্রত্যাশা ছিল এই অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ২০% শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়া। কিন্তু গতানুগতিকভাবে এ বছরও শিক্ষায় বরাদ্দ হয়েছে ১১.৯২ শতাংশ। জাতীয় আয়ের (জিডিপি) হিসাবে ২.০৮ শতাংশ অর্থাৎ বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ। যদিও আমরা বরাবরই শুনে থাকি শিক্ষাখাতে প্রায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এবারও শিক্ষাখাতে বাজেটের বয়ান বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রনালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.৭ শতাংশা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জন্য বরাদ্দ মোট জাতীয় বাজেটের ১১.৯২ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, বলা হচ্ছে চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষাখাতে। বাজেটে রূপপুর পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয়ের কিছু অংশও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়। সব মিলিয়ে শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা অথ্যাৎ ১৫.৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। একেই বলা হয় শুভংকরের ফাঁকি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ১৪ মাস ধরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এইভাবে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে তা পৃথিবীর মানুষ কখনো দেখেনি। এমন একটা পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে আমাদের চাপ নেই।’ এরা কিসে যে চাপ বোধ করে তা বোঝা যায় না। মনে হয় যদি ঘাড়ের উপর উঠে বসতে পারেন তখন বলবে চাপ বোধ করছি। মানুষিক চাপ, নৈতিক চাপ, এইগুলো তাদের কাছে নাই।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে চলতে দিয়েছে, লাইসেন্স হয়েছে, ব্যাটারি আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে, বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করলো। শুধুমাত্র নিজেরা কিনে যারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো, তাদের হঠাৎ বলে দিলো এইসব অবৈধ। ওরা (সরকার) তো এইসব বলবেই। ওরা নিজেরাই অবৈধ। কোনো ভোটই করে নাই, গায়ের জোড়ে নিয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ইআরআই’র সদস্য সচিব মোশাররাফ আহমেদ ঠাকুর ও গণস্বাস্থ্যের মিডিয়া উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, ড. আবদুল লতিফ মাছুম, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম,জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।