মোঃ শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে নদী ভাঙ্গন রোধ ও পানি প্রবাহ সুগম করতে ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যায়ে চিকলী নদীর ১২ কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজ চলছে। প্রতিবারের মত এবারও খনন করা হলেও বিগত বন্যায় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত নদীপাড়ের বাধ সংস্কার করার দাবীতে এলাকাবাসী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান।
এর প্রেক্ষিতে ৩০ মে রোববার সকালে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়া সংলগ্ন ময়নার কুড়া এলাকায় নদী খনন কাজ পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নীলফামারীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এসময় চওড়া পালপাড়া, কুমারগাড়ী, বেলপুকুর সাতপাই গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ ভাঙ্গা পাড় মেরামতের পর খনন করার জন্য জোর দাবী জানান। তারা বলেন, প্রতিবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন কাজ করে। কিন্তু নয়ছয় ভাবে খনন করায় কিছুদিন পরই তলদেশ আবারও ভরাট হয়ে যায়।
কারন খননকৃত বালি ও মাটি ঠিকভাবে পাড়ে না ফেলায় তা অল্পদিনেই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে বা ধ্বসে একাকার হয়। ফলে এই খননে কার্যকর কিছুই হয়না। বরং সরকারী অর্থ পানিতে যায়। সেই সাথে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুবিধা পেলেও নদীপাড়ের লোকজন সামান্যতম উপকৃত হয়না।
একারনে এবার আগে নদীপাড় মেরামত করে খননকৃত মাটি পাড়ের উপরে ঠিকভাবে রাখলে তা আর গড়িয়ে নদীতে ফেরত যাবেনা। আর যদি তা না করা হয় তাহলে এ খননের দরকার নাই। কেননা অতিবৃষ্টিতে নদীপাড় উপচে পানি গড়িয়ে বাধ ভেঙে বন্যা হলে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামসহ উপজেলার প্রায় তিনটি ইউনিয়নই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তখন পানি নিষ্কাশনের জন্য তিস্তা ক্যানেলের পাড় কেটে দিতে হয়। এতে উপরিস্থ পানি বের হয়ে গেলেও ফসলের ক্ষেত, মাছের পুকুর ডোবা নালাসহ নিম্নাঞ্চলের পানিতে চরম ক্ষতি সাধিত হয়।
![](https://deshjanata.com/wp-content/uploads/2021/05/IMG_20210530_175438-300x169.jpg)
দাবী নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের
অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বন্যায় ভেঙে যাওয়া নদীপাড় সংস্কার করতে তাৎক্ষণিক পাইলিংয়ের জন্য বস্তা এবং কাটা ক্যানেল মেরামতের নামে পরে প্রকল্প দেখিয়ে পানি
উন্নয়ন বোর্ড অর্থ লোপাটের সুবিধা নেয়।
অথচ এলাকাবাসী বন্যার সময় নিজ উদ্যোগে পাড় রক্ষায় পাইলিংয়ের বস্তা দিয়ে মেরামত করলেও তার খরচ বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ এলাকার কেউ পায়না। কিন্তু সেজন্য টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই টাকা কে বা কারা তসরুপ করে সে ব্যাপারেও কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়না। তাই দূর্ভোগ লাঘবে নদীপাড় সংরক্ষনে স্থায়ী সমাধান চাই। এইজন্য কংক্রিট পাইলিং করতে হবে। নয়তো এভাবে বার বার সরকারের কোটি কোটি টাকা ঢাললেও কোন লাভ হবেনা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরন্নবী সরকারসহ পরিষদের মেম্বারগণ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুর চৌধুরী বুলবুলসহ দলীয় নেতাকর্মী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা এলাকাবাসীর দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এলাকাবাসী যৌক্তিক দাবীর প্রেক্ষিতে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, খননকৃত নদীর মাটি দিয়ে উভয়পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাধ মেরামত করা হবে। সে অনুযায়ী তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ হলো ছোট বড় সবগুলো নদী। প্রতিটি নদী বাঁচিয়ে রাখতে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এরই অংশ হিসেবে চিকলী নদীর গতিপথ সচল রাখতে খনন করা হচ্ছে। এতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বর্ষাকালে সহজেই নদী ভরাট হয়ে উপচে বন্যার সৃষ্টি হবেনা।
তবে সেজন্য অবশ্যই নদীর দুইপাড় ভালোভাবে বাধতে হবে। যাতে অতি বৃষ্টির সময় কোনভাবেই নদীর পানি পাড় ভেঙে কৃষিজমি ও জনপদ প্লাবিত করতে না পারে। এজন্য এলাকাবাসীর সাথে আমি একমত পোষণ করে এখনই ক্ষতিগ্রস্ত নদীপাড় মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। তারা কথা দিয়েছন খনন কাজের সাথে সাথে নদীপাড় সংস্কার করা হবে। বিশেষ করে ময়নাকুড়ার পূর্বপাড়টি অবশ্যই মেরামত করা হবে।