চারঘাটের আন্জুমনোয়ারা ময়না সফল উদ্যোক্তা এক নারী গল্প ;
তার নতুন নতুন পোশাক কেনার শখ ছিল।
এনজিও তে চাকুরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন
জায়গায় যাতায়াত করতেন আন্জুমনোয়ারা ময়না।
নিজের জন্য পছন্দের কাপড় কেনার পাশাপাশি
কিনতেন আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবীদের
জন্য।
এক সময় এরাই নিয়মিতভাবে তার কাছ থেকে
কাপড় নেওয়া শুরু করলেন। আন্জুমনোয়ারা
ময়না দেখলেন, দিন দিন তার কাছ থেকে
কাপড় কেনার জন্য অনেকে আসা শুরু
করছে। তখনই ভাবলেন শুধু ঘর সামলাব না,
ব্যবসায় নামব।
এ ভাবনা থেকে ২০১৭ সালে রাজশাহীর চারঘাট
থানা রোডে নিজ বাসায় শুরু করেন তৈরি
পোশাকের ব্যবসা ‘ মা বস্ত্রালয়’। এরপর যত
দিন গড়িয়েছে ব্যবসার পরিধি বেড়েছে,
ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সংসার
সামলে ব্যবসা করাটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়লেও
স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায়
গতিপথ হারাতে হয়নি কখনো।
তার সাথে আলাপে আলাপে
উঠে আসে তার ব্যবসা শুরুর গল্প এবং বর্তমান
অবস্থা
১আপনার এ ব্যবসার পরিকল্পনা কোথায় থেকে আসলো?
আন্জুমনোয়ারাঃ ‘আগে থেকেই
ব্যবসার পরিকল্পনা ছিল। ইচ্ছা ছিল বুটিকস অথবা
রেস্টুরেন্টের বিজনেস করব। তবে সে
সুযোগ হয়ে উঠছিল না। আমি খুব সৌখিন। নতুন
নতুন ডিজাইনের কাপড় কিনতে ভালো লাগত।
কখনো কখনো আমি পোশাক কেনার পর
আলাদা ডিজাইন করতাম। এনজিও তে চাকুরির
সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়ত করতাম। সেখানে
নিজের জন্য কেনার পাশাপাশি আত্নীয় ও
বন্ধুদের জন্যও কিনতাম। তারা আমার বাসা
থেকে নিয়ে যেত। দেখলাম অনেকেই
আমার কাছ থেকে নিচ্ছে। চাকুরি ছাড়ার পরে
২০১৭ সালে নিজ বাড়ি ‘মা বস্ত্রালয়
’ চালু করি। ’
২ আপনার বাসা বাদে অন্যজায়গায় কোনো শো -রুম আছে?
আন্জুমনোয়ারাঃ
‘আমার বাজারে কোনো শো-
রুম নেই। সবাই আমার বাসা থেকে পোশাক
নিয়ে যায়। বাসা থেকেই আমার বিক্রি হয়। তবে
নিয়মিত ক্রেতাই আমার বেশি। আমার
পোশাকগুলো আমি নিজেই বাছাই করে কিনি।
এতে ক্রেতারা ইউনিক ডিজাইন পায়।’
তবে দেশীয় পণ্যে কিছু ক্রেতাদের নাক
সিঁটকানো অভ্যাস পীড়া দেয় তাকে। তার
মতে, ক্রেতারা মূল্য দিতে চান না মানসম্পন্ন
দেশীয় পণ্যকে বরং মানহীন বিদেশি পণ্য
বেশি দামে তারা কিনতে কার্পণ্য করেন না।
৩আপনার এ ব্যবসা কেমন চলে?
আন্জুমনোয়ারাঃ, অনেকে
কলকাতার ফুটপাত থেকে ৩০০ বা ৬০০ রুপি দিয়ে
কাপড় কিনে এনে দেশে আড়াই থেকে
তিন হাজার টাকা করে বিক্রি করে। দেশি
পোশাককে অনেকে বিদেশি বলে বিক্রি
করে। ভারতীয় শুনে কোনো চিন্তা না
করেই পোশাক কিনে। অথচ আমি বা আমার
মতো যারা দেশীয় পোশাক বিক্রি করি,
তাদের পোশাকে যথাযথ মূল্য দিতে চায় না।
এটা খুব খারাপ লাগে।
প্রায় তিন বছরের ব্যবসায় তিনি সফল। এখন তার
অধীনে আরো ৫ জন নারীর কর্মসংস্থান
হয়েছে। সেসব নারীরা ‘মা বস্ত্রালয়’
থেকে কাপড় নিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি
করে। এতে প্রতিদিন তাদের গড়ে ৩০০-৪০০
টাকা আয় হয়। নিজের ব্যবসা সচল রেখে
যেনো আরো অসহায় নারীদের
কর্মসংস্থান করতে পারেন এজন্য সকলের
কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।