বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদের উদ্যোগে “জেন্ডার,নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন” বিষয়ক ১১ তম ব্যাচের অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু্ । আরো বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম; কোর্স শিক্ষার্থী হুয়াররা শিশির এবং শাহ মনসুর আলী।
স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু্ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে বলেন, আজকের সার্টিফিকেট কোর্সের উদ্বোাধনী অনুষ্ঠানে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করেছে। এই কোর্সে বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন পেশার ও বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী আছেন। কোর্সের মাধ্যমে অনেকের জিজ্ঞাস্য নানা প্রশ্ন, নানা ধারণার পরিবর্তন আসবে, ভাবনার জায়গায় নতুন দিক উন্মোচন করবে। একইসাথে তিনি কোর্স থেকে শেখা বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, অবস্থান সম্পর্কে থাকা নানা অসংগতি দূর করতে দায়বদ্ধতার সাথে ভূমিকা পালন করবেন এমন প্রত্যাশা রেখে বক্তব্য শেষ করেন।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সার্টিফিকেট কোর্সের কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম বলেন,করোনাকালীন সময়ে সংগঠনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই অনলাইন কোর্স গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। অনলাইনে হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে অংশগ্রহণ করতে পারছেন যা সংগঠনের জন্য ইতিবাচক। জেন্ডার সংবেদনশীল মানবসম্পদ গড়ে না উঠলে জেন্ডার সমতাপূর্ণ সমাজ হবে না। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নানা উন্নয়ন হলেও সামাজিক সূচকে নারীর প্রতি অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গি এখনো প্রচলিত আছে। কেন পরিবর্তন হচ্ছে না তা দেখতে হবে। জেন্ডার সংবেদনশীল মানবসম্পদ তৈরি করতে হলে জেন্ডার সংবেদনশীর দৃষ্টিভূঙ্গির চর্চা নিয়মিত ভাবে করতে হবে। যার সুযোগ কোর্সগুলোর মধ্যে দিয়ে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সংগঠনের একটা ঘোষণা পত্র আছে। যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি তৃণমূল, স্বেচ্ছাসেবী, গণ নারী আন্দোলণ সংগঠন। আন্দোলনের ফলে আজ নিজেদের সাথে লড়াইটা কিছুটা শেষ করা গেলেও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, কার সাথে লড়াই হবে সেটি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থা তৈরি হয়েছে। নারীর আন্দোলনের রূপরেখা চাহিদা সময় , ধর্ম, শ্রেণী এবং প্র্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অনুসারে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি একটি সামাজিক ইস্যূতে পরিণত হয়েছে। নারীর মানবিক অধিকার সবসময় উপেক্ষিত হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামো এবং জেন্ডার গত ধারণার অভাবে। তিনি এসময় পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামোর পরিবর্তন এবং জেন্ডার সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরিতে কোর্স সম্পর্কে আলোচনা করতে যেয়ে বলেন, নারী-পুরুষের ধারণা সম্পর্কে, নারীর মানবাধিকার সম্পর্কে সকলের স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে যা নারীর নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করবে।
কোর্স শিক্ষার্থী হুয়াররা শিশির বলেন, জেন্ডার ইকুয়িটি নিয়ে কাজ করতে যেয়ে লক্ষ্য করেছি অনেকের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে । মানুষের এমন মানসিকতা পরিহার করতে এরকম সেশনে পরিবারের সদস্যদের যুক্ত হওয়া উচিত। এতে বদ্ধমূল ধারণা পরিস্কার হবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে কোর্সের মাধ্যমে শেখা বিষয়গুলো নিজের কাজের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার আশা তিনি প্রকাশ করেন।
শাহ মনসুর আলী বলেন কোর্সটিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। গতবছর ইচ্ছা থাকার পরও এই কোর্সটিতে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। নারীকে আসলে এখনো মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। এমন ভাবনাগত পরিবর্তনে কোর্সটি সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতি সপ্তাহের বৃহঃস্পতি ও শনিবার (০২ দিন) বিকাল ৪.০০মি: হতে সন্ধ্যা ৭.০০ মি: পর্যন্ত ক্লাশ হবে। সার্টিফিকেট কোর্সে কোর্স শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, টিআইবি, ইনষ্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ইউএনডিপিসহ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ, আইন বিশেষজ্ঞ ও মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, আইনজীবী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গৃহিণী, গবেষকবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কোর্সে অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ৬ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত অনলাইনে কোর্সটি চলবে। এবারের অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্সে মোট ৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ-গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সম্পাদক রীনা আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, কোর্স শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কোর্সের আয়োজকবৃন্দ এবং কর্মকর্তাসহ মোট ৬০ জন উপস্থিত ছিলেন।