শিগগরিই ডিআইটি পুকুরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করলে পরিবেশ অধিদফতর, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে পরিবেশবাদীরা
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার রাজউকের ডিআইটি প্রজেক্টের ডিআইটি পুকুরটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে একটি গোষ্ঠী। রাজধানী, বিশেষ করে পুরান ঢাকা যখন চরমভাবে জলাধার শূণ্যতায় ভুগে নানান বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে, যখন ঢাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি পাওয়া যায় না, যখন ঢাকায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ তখনও এই শহরে নানান কৌশলে চলছে প্রাকৃতিক জলাধার দখলের চেষ্টা।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, এই মুহুর্তে পুরান ঢাকায় পুকুর রয়েছে মাত্র ২৪টি। যার মধ্যে ডিআইটি প্রকল্পের পুকুরটি অন্যতম একটি বড় জলাধার। যা আশাপাশের এলাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অগ্নি নির্বাপন, ভূগর্বস্থ পানির সংস্থান, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ নানানভাবে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে গত ২০১৭ সাল থেকে পুকুরটিতে দখল চলছে। সম্প্রতি এই পুকুরে আবারও মাটি ফেলে ভরাট করছে একটি পক্ষ (তথ্যসূত্র: বাংলাভিশন, দেশ টিভি ও দৈনিক ইত্তেফাক)। আইন অমান্য করে এভাবে পুকুর দখলের খবর স্থানীয় জনগোষ্টীর পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর সদস্যভূক্ত সংগঠনগুলোসহ পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা প্রত্যেককেই।
আপনারা ইতোমধ্যে এও জেনেছেন যে, ডিআইটি পুকুর রক্ষার দাবিতে গত ২ জুন শুক্রবার পুকুরটির পাড়ে একটি মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিল স্থানীয় জনগণ। সেই মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় মানববন্ধটি করতে পারেননি বিজ্ঞ পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ এলাকাবাসী। তবে পুলিশ পরিবেশকর্মীদের অনুমতি না দিলেও, ঠিকই পুকুরপাড়ে জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়েছে দখলদারদের লোকজন। সে সময় তারা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর যুগ্ম সম্পাদক এবং বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর আহ্বায়ক দেশের খ্যাতিমান পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারসহ পরিবেশকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে হেনস্থা করেছে। যদিও তাদের এই অশৃঙ্খল আচরণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এই ঘটনা আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের জন্য পুলিশ কমিশানারের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেওয়ার বিষয়টিও বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) পুলিশের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
একইসঙ্গে আমরা বলতে চাই- পরিবেশ আইন-১৯৯৫, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০, পানি আইন-২০১৩, ভূমি ব্যবহার আইন ও ড্যাপ ২০১৬-৩৫ সহ অনেকগুলো আইনে সুস্পষ্ঠভাবে বলা আছে পৌর, মহানগরী, জেলা ও বিভাগীয় শহরে মালিকানা যারই হোক না কেন প্রাকৃতিক জলাধার কোনোভাবেই ভারট করা যাবে না। অথচ এতগুলো আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুকুরটির দখল প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি রাজউক, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো পক্ষকে। এটি চরমভাবে হতাশাজনক এবং সন্দেহজনক। বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের পক্ষ থেকে আমরা সুস্পষ্ঠভাবে বলতে চাই, এই পুকুরটির বেদখলকৃত ভূমি উদ্ধারে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়লে সরকারি এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আদালতে যাবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
পাশাপাশি বিএনসিএ দাবি করছে, অধিগ্রহনসূত্রে এই পুকুরের মালিক ছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কেন, কিভাবে পুকুরটির মালিকানা বেহাত হলো, এর দায় কার সেটি দ্রুত বের করতে হবে। পুকুর রক্ষায় স্থানীয়দের মানববন্ধন করতে না দেওয়ার কারণ উদঘাটন করতে হবে এবং দ্রুত এই পুকুরটিকে তার পূর্বের পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। নয়লে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলো স্থানীয়দের নিয়ে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।