নারীর মানবাধিকার সুরক্ষায় নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

আপডেট: জুলাই ২২, ২০২২
0

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে “নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি”-প্রতিপাদ্যটির আলোকে নারীর মানবাধিকার সুরক্ষায় নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে ৩টি বিভাগের (ঢাকা,ময়মনসিংহ,খুলনা) ২৭টি জেলাশাখার নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম; শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। সঞ্চালনা করেন জুনিয়র আইনজীবী সিননোমে মারমা ।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বর্তমান কোভিড মহামারী সংকটসহ নানা সংকটজনক পরিস্থিতিতে নারীরা নানান মাত্রায় সহিংসতার শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নারী ও কন্যার প্রতি চলমান এই সহিংসতা প্রতিরোধ ও বৈষম্যকে প্রতিহত করতে হবে। এলক্ষ্যে তিনি সংগঠনের আন্দোলন কর্মসূচীকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন অসাম্প্রদায়িক ও নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ গঠন করতে হলে ধর্মের ভিত্তিতে নয় মানুষ হিসেবে আমাদের যেসব অধিকার আছে তা আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এসময় আজকে আয়োজিত প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে আমাদের সকল কাজ করতে হবে। এসময় তিনি জেলা শাখার সকল প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে সংগঠনের গঠনতন্ত্র নিয়মিত অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন,
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ৮০’ দশক থেকে নারী ও কন্যা শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে সকল সংগঠককে আরো দক্ষ ও চালু হতে হবে, কাজের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে জানতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সাংগঠনিক কাজের ক্ষেত্রে তিনটি স্তম্ভ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও নির্মাণ। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে নারীর প্রতি কোনো সহিংসতার ঘটবে না, নারীর জীবন হবে নিরাপদ এবং তার সকল অধিকার বাস্তবায়িত হবে। তিনি এসময় জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে বলেন প্রতি ৩ জনে একজন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলায় নানা আইন থাকলেও আইন প্রয়োগে নানা বাধা আছে, এতে নির্যাতনের শিকার অনেকে বিচারের দ্বারস্থ হচ্ছেনা। নারী তার অধিকার ও আকাঙ্খা বাস্তবায়নে লড়াই করতে প্রস্তত হলেও আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের যথাযথ সহযোগিতা করছে না। এই অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের তৃণমূল থেকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে।

উদ্ধোধনী অধিবেশন শেষে ১ম ও ২য় কর্মঅধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। ১ম অধিবেশনে হাউজ রুল প্রণয়ন ও প্রত্যাশা চয়ন বিষয়ে আলোচনা করেন জুনিয়র আইনজীবী সিননোমে মারমা ও নিরঞ্জন বিশ^াস; নারী ও কন্যার মানবাধিকার ঃ পরিপ্রেক্ষিত নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রতিকার ও নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা; নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনে স্থানীয় পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোচনা করেন পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. দীপ্তি রানী সিকদার, এবং অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ, সঞ্চালনা করেন অ্যাড. ফাতেমা খাতুন, আইনজীবী, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ। ২য় কর্ম অধিবেশনে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভূমিকা ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম; বাল্যবিবাহের সামাজিক অভিঘাত এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী; নারী ও কন্যার মানবাধিকারের সুরক্ষায় পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন,২০১০ এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন সিনিয়র আইনজীবী, অ্যাড. রাম লাল রাহা এবং নারী ও কন্যার মানবাধিকার ঃ অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) বিষয়ে আলোচনা করেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম

অধিবেশন শেষে জেলাশাখার নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভূমিকা: পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষৎ করনীয় এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভূমিকা: পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষৎ করনীয়; সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভূমিকা: পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়; বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়; এবং অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। দলীয় কাজে ফেসিলিটেটর ছিলেন অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. দীপ্তি সিকদার; সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. রাম লাল রাহা, এবং অ্যাড. ফাতেমা খাতুন, আইনজীবী, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ, । দলীয় কাজের সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. নাহিদ নবী লেনা, সদস্য, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ।

দলীয় কাজ শেষে সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য রাখেন লিগ্যাল এইড উপপরিষদ সম্পাদক রেখা সাহা; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। সঞ্চালনা করেন সাবিকুন নাহার, প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং), কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ। দিনব্যাপী আয়োজিত প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ৩টি বিভাগের ২৭টি জেলাশাখা হতে নেতৃবৃন্দ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলী ও সদস্যবৃন্দ, কর্মকর্তাসহ প্রায় ৭১ জন উপস্থিত ছিলেন।