পবিত্র কোরআন অবমাননা ও পূজা মন্ডপে সংঘাত ঘটিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে সরকার– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১
0

কুমিল্লার ঘটনাসহ সারা দেশে পূজামন্ডপে হামলা-ভাংচুরের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বিএনপি।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এই সব ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি যারা রয়েছে তাদেরকে সঠিক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’’

‘‘ একইসঙ্গে আমি দেশবাসীকে এই ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি এজন্য যে, সরকারের এই হীন প্রচেষ্টা যেন কোনো মতেই সফল না হয়, আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা সেই আত্মাকে কখনো যেন তারা বিনষ্ট না করতে পারে সেজন্য দেশবাসী সচেষ্টা থাকবেন।”

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ এই সরকার একটি স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য যে একটা সকল ধর্মের মানুষ সৌহার্দমূলক পরিবেশে বাস করি তাকে বিনষ্ট করা, ধবংস করা। আমরা পাশাপাশি বাড়িতে বাস করি, ঈদের সময়ে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বাড়িতে আসেন, তাদের পূজায় আমরা যাই। এটা আজকে নয়, আমি যখন ছোঠ সেই সময় থেকে দেখছি যে একটা সৌহার্দমূলক পরিবেশ বাংলাদেশে আছে।”

‘‘ একে বিনষ্ট করার জন্য, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা(ক্ষমতাসীন) উস্কানি দিয়ে, মদদ দিয়ে আজকে আমাদের দেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেই সম্প্রীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘‘ পবিত্র কোরআন অবমাননা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে নিরাপত্তা বিধান না করে হামলা-ভাংচুর-সংঘাত-সংঘর্ষকে উস্কিয়ে দিয়ে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের চক্রান্তে মেতে উঠেছে সরকার। গণতন্ত্রের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তারা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উপকরণ ছড়িয়ে সহিংস রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে উদ্ধারকর্তার ভুমিকায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি পেতে চায়।”

‘‘ বর্তমান যুগে কিছুই ঢেকে রাখা যায় না। অবগুন্ঠন উন্মেচিত হয়ে সত্য প্রকাশ পাবেই। কুমিল্লার পূজা মন্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে যে সরকারের ন্যাক্কারজনক পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা আজ জনগনের কাছে স্পষ্ট। সরকারের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও এর ফলোশ্রুতিতে দেশব্যাপী রক্তাক্ত হিংসাশ্রয়ী ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

পূজামন্ডপের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিরব’ ভুমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআর অবমাননা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটলো। কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মতো আমরাও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘীর পাড়ের মন্ডপের ঘটনাটি নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াতো না। একই ঘটনা ঘটেছে চৌহমুনীতে। বার বার প্রশাসনকে বলার পরে, পুলিশ বাহিনীকে বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।”

‘‘ ৬ ঘন্টা ধরে সেখানে নৈরাজ্য চলেছে, লুটপাট চলেছে, ভাংচুর চলেছে। কিন্তু তারা নিরব ছিলো। তারা ছিলো, দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।”

তিনি বলেন, ‘‘এখন একটি প্রশ্ন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ পূজা মন্ডপে নিয়ে গেছে? সরকারের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাসের পর কেবলমাত্র ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দুষ্ট চক্র ছাড়া দেশের জণগোষ্ঠীর কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ই এই কদর্য কাজ করবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি এই ঘটনা জানার পরপরেই একটি বিবৃতিতে বলেছিলাম। সরকারের মদদেই কুমিল্লার নানুয়ার দীঘীর পাড়ের পূজা মন্ডপে চক্রান্তমূলক কুতসিত কাজটি করা হয়েছে।এর বড় প্রমান ঘটনার পরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অতিসত্বর পূজা মন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলো। কিন্ত স্থানীয় প্রশাসন এই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছে অনেক পরে।”

‘‘ শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে বিসর্জন দিয়ে এবং তাকে ধবংস করে আজকে আওয়ামী লীগ এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকার তার এজেন্টদের দিয়ে এ্সব ঘটনা ঘটিয়ে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম তার থেকে জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসব করছে। উদ্দেশ্যে জনগনকে বিভ্রান্ত করা।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

‘কল্পিত স্টোরি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন বিএনপিকে জড়িত করার চেষ্টা করে সরকার। সেজন্য কল্পিত স্টোরি তারা তৈরি করে। অথচ এই কাজটা তারাই করে। মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের দলের এক নেতার সঙ্গে ফোনালাপের ফাঁস হয়েছে বলে একটি অডিও কল ভাইরাল করা হয়েছে। সরকার এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।”

‘‘ কন্ঠ কাটপিস করে সুপার এডিটিং এর মাধ্যমে বানোয়াট ফোনালাপ ইতোমধ্যে অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের নামে ভাইরাল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের মদদে একটি অসাধু মহল প্রতিনিয়ত এই হীন কাজগুলি সর্বক্ষণ করে যাচ্ছে। এই কাজগুলো করার জন্য এক লক্ষ লোককে হায়ার করা হয়েছে। আমান উল্লাহ আমানের ফোনালাপটি ভুঁয়া, বানোয়াট, অসত্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও সুপার এডিটেড। আমি এই চক্রান্তমূলক ফোনালাপ ভাইরালের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ এক লক্ষ কর্মীকে হায়ার করছে। এটা তারা বলেছে যা পত্র-পত্রিকাও এসেছি।”