সরকার করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকার ভেন্টিলেশনে আছেন, ভেন্টিলেশন খুললেই সরকার শেষ।
বুধবার (১১ আগস্ট) কেরানীগঞ্জের মির্জাপুরের বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন বিএনপির সিনিয়র এ নেতা।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার একটা ভেন্টিলেশনে আছে এবং কোভিড করোনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। এই সরকারের বিরুদ্ধে কি আন্দোলন করবেন? এই সরকারকে কী বা ধমক দেবেন?”
“ আমি আগেই বলছি, এই সরকার ভেন্টিলেশনে আছে। এই ভেন্টিশনটা খুইলা গেলে সরকারটা নাই। ওরা আতঙ্কে আছে, ওদের হারাবার যন্ত্রণা সারাক্ষন, ওদের প্রাপ্তির কোনো বিষয় নাই।”
গয়েশ্বর বলেন, “ তারা(সরকার) প্রতিদিন টেলিভিশনের ছোট বাক্সের মধ্যে নানা কথা বলে, নানা কথা বলে ওরা খুব একটা আত্মতৃপ্তি পায়। বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রী তো তথ্যের ভান্ডার। ভবিষ্যতে তাকে যদি পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারের ষড়যন্ত্রের দুর্নীতির অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। দোয়া করি, তিনি বেঁচে থাকুক, বাংলাদেশের জন্য উনার প্রয়োজন হবে।”
“ আর ওবায়দুল কাদের যেটা বলেন, এটা পুঁথি পাঠের মতো। আমরা জানি, ছোট বেলার কবিতা- সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আর উনি পুঁথি পাঠ করে সকালে উঠিয়া আমি প্রকাশ্যে বলি- মিথ্যা কথা ছাড়া যেন সত্য কথা নাহি বলি। আছে শরম যার আমার বুবুজান, আমি সেই কাজ করি দিয়ে মনপ্রাণ।”
জনগনের পাশে থাকতে বিএনপির নেয়া কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ আমাদের এই কর্মসূচি শুরু। আমরা সময় জনগনের পাশে আছি, পাশে থাকব।”
“ আজকে দেশে যে পরিমান টাকা লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে মজুদ হয়েছে, এই আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা যেই টাকা লুটপাট করছে ১২ বছরে, তার একশ ভাগের পাঁচ ভাগ টাকা খরচ করলে এই ভ্যাকসিনের সমস্যা হয় না, মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে না।”
‘গণমাধ্যম প্রসঙ্গে’
গয়েশ্বর বলেন, “ টেলিভিশন-পত্রিকার পাতায় মিথ্যা কথা লিখলে জনগন কী এটা সত্য ভাবে? জনগন সরাসরি আক্রান্ত। সেই আক্রান্তের কথা না উঠে যদি বলা হয়-জনগন নিরাপদ। তাহলে এটা জনগনের কাছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে।একটা সময় আসবে এই সরকারের তোষন করতে করতে এই মিডিয়া কিন্তু জনগন দেখবেন না, পত্রিকা পড়বে না।”
“ এখনো আমি জানি, শতকরা দেশের ৮০ জন যুবক-কিশোর এবং মাঝ বয়েসী উপর জানা বাংলাদেশের চ্যানেল খুলে না। ইন্ডিয়ান চ্যানেল দেখে, ওই স্টার জলসা দেখে, স্টার প্লাস দেখে, স্টার মুভি দেখে। কেনো দেখে? কারণ ওখানে বিনোদন আছে, বিনোদন দেখে। আর আমাদের এখাকার বিনোদন হলো মিথ্যা কথার বিনোদন, মিথ্যা কথা শুনে তখন সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে যায়।আমার কথা জরিপ করে দেখেন সন্ধ্যার পরে যে কোনো বাড়ির টেলিভিশনের সামনে বইসেন। দেখবেন যে, বাংলাদেশের মানুষ কোনো টিভি চ্যানেল দেখে না।”
‘পরীমনিরা পাবলিক সাবজেক্ট নয়’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ আমাদের এখানে মিডিয়া-পত্রিকা বড় বড় বিষয় তুইয়া কখনো পরীমনি, কখনো খুকু মনি- এসব লইয়া বাজার মাত করে। এগুলো তো পাবলিকের সাবজেক্ট না। আর যেসব কথা পরীমনিরা বলে, এসব কথা প্রকাশ পেলো এরা(ক্ষমতাসীনরা) তো বোরগা পরার সময় পাবে না, এই সরকারের মধ্যে যারা আছে তারা বোরগা পরার সময় পাবে না।”
“ এগুলো রাজায় রাজায় দ্বন্দ্ব, ভৃত্যে ভৃত্যে দ্বন্দ্ব। তাদের দ্বন্দ্বের ফাঁক দিইয়া পরীমনিরা বের হয়ে যায় মাঝে মধ্যে মিডিয়ার মাধ্যমে একটা বাজার মাত করে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু ওইটা আমার পেটের খোরাক দেবেনা, আমার রাজনীতির খোরাকও দেবে না।”
ঢাকার কেরানীগঞ্জ দক্ষিন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে উপজেলায় করোনা হেল্প সেন্টার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রি বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
লকডাউনের পর উপজেলা পর্যায়ে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ করোনায় আক্রান্ত রোগীরা আধুনিক চিকিতসা পাচ্ছে না। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে আধুনিক চিকিতসা সেবা থাকলেও সরকারি হাসপাতালে চিকিতসা নাই। মফস্বলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। না আছে ঔষধ, না আছে ডাক্তার।”
“ যেখানে গড়ে প্রতিদিন আড়াইশ জনের বেশি লোক যারা যাচ্ছে বলে সরকারই বলছে। গ্রামে গঞ্জে যারা মারা যাচ্ছে তাদের তো হিসাবই নাই। একবার লকডাউন দেয়, আরেকবার উঠিয়ে নেয়। আজকে মানুষের জীবন-জীবিকাকে তারা বিপন্ন করে দিয়েছে। জনগনের প্রতি তাদের ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই বলে সরকার যখন যা খুশি তাই করছে।”
কেরানীগঞ্জের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন মাস্টার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।