বাংলাদেশের নদ-নদী নিয়ে ভারতের গরজ বেশি : তিস্তাকে চ্যানেলে পরিণত করার চেষ্টা চলছে– বাপার ওয়বিনারে বিশেষজ্ঞদের মত

আপডেট: জুন ৬, ২০২১
0

বাংলাদেশের নদ-নদী নিয়ে ভারতের গরজ একটুৃ বেশি। তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে শুধুমাত্র একটি চ্যানেলে পরিনত করার চেষ্টা করছে ভারত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র ওয়েবিনারে দেশের বিশিষ্টজনেরা এ মন্তব্য করেন।
পরিবেশ দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আজ ৬ জুন সকালে “বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা ও খনন”-শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বাপা’র সহ-সভাপতি এবং বেন এর প্রতিষ্ঠাতা ডঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বাপা’র সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সম্মানিত আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন, সর্বজনাব ডঃ মমিনুল হক সরকার, উপদেষ্টা, সি ই জি আই এস, ড. মোঃ খালেকুজ্জামান অধ্যাপক, লকহ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয় পেলসেনভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, শারমীন মুরশিদ, আহবায়ক,জাতীয় নদী জোট ও যুগ্ম সম্পাদক, বাপা, অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, পরিচালক, রিভারাইন পিপল ও অধ্যাপক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, আফজাল হোসেন, সদস্য, চলনবিল রক্ষা জাতীয় কমিটি, নূর আলম শেখ, পশুররিভার ওয়াটারকিপার ও আহবায়ক,বাপা মোংলা আঞ্চলিক শাখা এবং তোফাজ্জল সোহেল, খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার ও সাধারণ সম্পাদক, বাপা হবিগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা।

ওয়েবিনারে সম্মানিত আতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড. সুফিয়ান সেকেন্দার, মহিদুল হক খান, কোষাধ্যক্ষ, বাপা, বিধান চন্দ্র পাল, যুগ্ম সম্পাদক, বাপা, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, সভাপতি, তিস্তা রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।

সভাপতির বক্তব্যে ডঃ নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের সব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশের জনগনকে অন্ধকারে রেখে। জনগণের টাকায় প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অথচ দেশের মানুষকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দূর্নীতির মনোভাব নিয়ে তারা এ ধরণের কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দেশের নদ-নদীর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্টান কারো সাথে কোন ধরনের সমন্বয় নেই, যার ফলে অধিকাংশ টাকায় অপচয় হয়। একদিকে আদালত নদীকে জীন্তস্বত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অন্যদিকে নদীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবজায়গায় নদীগুলোকে রক্ষা করতে বলেন কিন্তু তার প্রশাসন কোথাও তা মানছেনা, যা সরকারের নদী বিষয়ে দ্বিমূখী আচরণেরই বর্হিপ্রকাশ। জীবন্ত স্বত্ত্বাকে কখনও কাটা যায়না। তিনি দেশের সমস্ত গৃহীত প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবী জানান সেই সাথে দেশের নদ-নদীগুলো কেন খালে পরিণত হচ্ছে এবং শরু হয়ে যাচ্ছে তার উত্তর চান সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট।

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস প্রয়োজন। দেশের নদ-নদীর সমস্ত তথ্য না জেনে নদী কখনও খনন করা যাবে না। এ কাজে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জবাব দিহিতার আয়তায় আনার দাবী জানান তিনি।

ডঃ মমিনুল হক সরকার বলেন, আমাদের দেশের নদীপাড়ের জমীগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদী ঘেঁসা জমির চাইতে অনেক বেশী উর্বর, যার ফলে এদেশের মানুষের নদীকেন্দ্রীক জীবন জীবীকা বেশী গড়ে উঠে। তিনি দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে চাপমুক্ত এবং প্রভাবমুক্ত কর্মপরিবেশ কামনা করেন।

ড. মোঃ খালেকুজ্জামান বলেন, নদী খননের জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক ও পরিবেশ বান্ধব ড্রেজিং চাই। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে তাতে শুধু দেশের জনগনের টাকার অপচয়ই হচ্ছে মাত্র কাজের কাজ কিছিুই হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ড্রেজার মেশিন আছে তা দিয়ে দেশের মাত্র ৪-৫% ড্রেজিং করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের নদী খননে ভারতের এতো গরজ কেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিস্তা নদীকে একটি চ্যানেলে পরিণত করা হবে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি ইউএন কনভেনশন রেটিফাই করার দাবী জানান।

শারমীন মুরশিদ বলেন, নদী ও পরিবেশের উন্নয়ন নিয়ে যেখানেই কাজ হচ্ছে সেখানেই দূর্নীতি। তিনি বর্তমান শাসন ব্যবস্থার মধ্যে একটি জনমূখী পরিবর্তন কামনা করেন। তিনি নদী ও পরিবেশ আন্দোলনে যারা কাজ করেন তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন দূর্নীতিমুক্ত শাসন ব্যবস্থা গড়তে পারলে নদী, পরিবেশ ও দেশ বাঁচবে।

অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ অভিযোগ করে বলেন, নদীর যে জীবন আছে এটি জীবন্ত স্বত্ত্বা তা বিবেচনা করে নদী খনন করা হয় না। এক নদীকে কেটে তিন খালে পরিণত করা হচ্ছে, এ খাল পদ্ধতির অবসান চান তিনি। সংশ্লিষ্ট মহলে নদীকে খালে পরিণতকরার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আফজাল হোসেন বলেন, ড্রেজিং এর ফলে সেই মাটি,বালি নদীর মধ্যে রাখার ফলে সেই মাটি-বালি পূনরায় নদীতে গিয়ে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে, এর ফলে দেশের টাকা শুধু অপয় হচ্ছে। ড্রেজিং হতে হবে প্রকৃতি ও পরিবেশ বান্ধব। তিনি পদ্মা এবং যমুনার সাথে সাথে চলনবিলকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর আওতায় আনার দাবী জানান।

নূর আলম শেখ বলেন, দেশের পোল্ডার এখন বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ড্রেজিং এর ফলে নদীতে মাটি-বালিফেলা এবং নদীর পাড়ের কৃষকের আবাদী জমিতে মাটি-বালি ফেলার কারনে কৃষকের কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে, কৃষকের কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং দেশের সম্পদ হরিলুট হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি মোংলার টিলা ইউনিয়নের ৭শ একর কৃষিজমি উদ্ধারের দাবী জানান। তিনি ড্রেজিং নামের বানিজ্য বন্ধেরর দাবী জানান।

তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই ও এরাবরাক নদীসহ দেশের সমস্ত নদ-নদীকে সুষ্ট ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনার দাবী করেন। তিনি নদীর জন্য ক্ষতিকর চলমান খননের পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রি বালি উত্তোলনের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি দেশের নদী যারা রক্ষণাবেক্ষনের দায়ীত্বে আছেন তারাই নদীকে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেন।