বিশ্বের প্রথম সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল বিক্রি করে দিতে চায় প্রতিষ্ঠাতা ।। স্থানীয় কমিটির প্রতিরোধের ঘোষণা

আপডেট: জুলাই ৩, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের প্রথম গোদরোগ (থ্যালাসেমিয়া) চিকিৎসা কেন্দ্র “সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল” বিক্রি করে দিতে চান প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয়দের সহযোগীতায় বহিরাগত দখলবাজ প্রভাবশালীদের হাত থেকে সদ্য দখলমুক্ত এ বিশেষায়িত হাসপাতালটির কর্তৃত্ব হাতে পেয়েই তিনি এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এতে চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সৈয়দপুরবাসীসহ হাসপাতালটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তৎপর স্থানীয় সমন্বিত পরিচালনা কমিটিতে। যে কোনভাবেই বন্ধ বা বিক্রি করা প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর তারা। এজন্য জেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রয়োজনে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্বাবধানে হাসপাতালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবীও জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরে সৈয়দপুরের স্থানীয় সাপ্তাহিক “আলাপন” পত্রিকায় ২ জুলাই শুক্রবার “প্রেস বিজ্ঞপ্তী” হিসেবে “বিশেষ অবগতির ঘোষনা” প্রকাশ করেছেন।

ফাইলেরিয়া হাসপাতাল পরিচালনা স্থানীয় কমিটির সভাপতি ও কামারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুরের একমাত্র দৈনিক পত্রিকা মুক্তভাষা’র প্রকাশক সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই ঘোষনায় তারা বলেছেন যে, নীলফামারী জেলার সৈযদপুর উপজেলাধীন কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামে অবস্থিত ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি বিগত ২০১২ ইং সাল হতে অবৈধ দখলে ছিল।

হাসপাতালটি অবৈধ দখল মুক্ত করে স্বাস্থ্য সেবা কার্য্যক্রম গতিশীল করতে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা আইএসিআইবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ‘বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল ডাক্তার এসোসিয়েশন’ (বিপিডিএ) এর সাথে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি পত্রের শর্তানুযায়ী বিপিডিএ হাসপাতালটি উদ্ধার করবেন এবং ২০২৯ ইং সন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবামুলক সকল কাজ পরিচালনা করতে পারবেন। পরবর্তীতে ওই চুক্তি নবায়ন করা হবে বলেও সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

বিপিডিএ এর পক্ষে কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোঃ রাকিবুল হাসান তুহিন ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি উদ্ধার ও পরিচালনার স্বার্থে আইএসিআইবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্দেশনায় ও সম্পাদিত চুক্তি বলে স্থানীয় একটি কমিটি অনুমোদন করেন। অনুমোদিত ওই কমিটি হাসপাতালের দখলদারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে হাসপাতালটি দখল মুক্ত করেন এবং বিপিডিএকে হস্থান্তর করেন।

হাসপাতালের চাবি ও দখলমুক্ত পত্র হস্থান্তরের উদ্দেশ্যে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে গত ৮ জুন ২১ ইং তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে আইএসিআইবি’র সহযোগী সংগঠন বিপিডিএর মহাসচিব মোঃ রাকিবুল ইসলাম তুহিনের হাতে ওই দিন উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের সামনে চাবি ও হস্থাস্তর পত্র প্রদান করা হয়। যা দেশের অনেক জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেল ও অনলাইন টেলিভিশনে ফলাও করে প্রকাশিত হয়।

পরে বিপিডিএ এর মহাসচিব মোঃ রাকিবুল ইসলাম তুহিন চুক্তি মতে হাসপাতালের সংস্কার কাজ শুরু করেন এবং স্বাস্থ্য সেবামুলক কাজের গতিশীলতা আনতে কর্মকতা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন। কর্মকতা-কর্মচারী নিয়োগের ওই বিজ্ঞাপন রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিন ও সৈয়দপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সৈয়দপুর বার্তা পত্রিকায় গত ২৯ জুন প্রকাশিত হয। এছাড়াও গত ৩০ জুন সৈয়দপুরের সাপ্তাহিক সাফ জবাব পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়।

আমরা হাসপাতাল পরিচালনা স্থানীয় কমিটি সংস্কার কাজ শুরু ও ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে অবগত আছি। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমানে আইএসিআইবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন অজ্ঞাত কোন কারনে বিপিডিএর সাথে করা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে কুরুচিকর মন্তব্য প্রদানসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যা সঙ্গতিপুর্ন নয়।

এছাড়া বিষয়টি বিপিডিএ ও স্থানীয় পরিচালনা কমিটির জন্য অতীব মানহানিকর। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া নয়। হাসপাতাল পরিচালনায় কর্মকতা-কর্মচারী প্রয়োজন হেতু বিপিডিএ আইএসিআইবি’র সাথে সম্পাদিত চুক্তি বলে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী খানা প্রকাশ করেছেন। আমরা স্থানীয় কমিটির সদস্যগন প্রফেসর ডাঃ মোযাজ্জেম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই।

এদিকে বিপিডিএ মহাসচিব মোঃ রাকিবুল ইসলাম তুহিন আমাদের স্থানীয় কমিটিকে জানান যে, প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন হাসপাতালটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার নামে থাকা জমি বিক্রয় করবেন মর্মে জানিয়েছেন। এছাড়া সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালে আসা সকল রোগীদের ঢাকা সাভারে অবস্থিত ফাইলেরিয়া হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

রাকিবুল ইসলাম তুহিন আমাদেরকে আরও জানান, প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের এমন প্রস্তাবে তিনি সম্মত না হওয়ায় এবং সম্পাদিত চুক্তি মুলে হাসপাতালটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করায় এবং কর্মকতা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তী প্রকাশ করায় প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ক্ষেপে যান এবং প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করা শুরু করেন।

আমরা স্থানীয় কমিটি চাই, সৈযদপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি যথাযথ নিয়মে স্বাস্থ্য সেবা কাজ পরিচালনা করুক। এ অঞ্চলের জনসাধারণ এই হাসপাতাল থেকে স্বপ্ল মুল্যে চিকিৎসা সেবা পাক। হাসপাতালটি যেন, কোন ভাবেই বন্ধ না হয়। আইএসিআইবি ও বিপিডিএ এর চুক্তি পত্র জটিলতায় যদি চিকিৎসা সেবা কাজ ব্যাহত হয় সেক্ষেত্রে আমরা চাই হাসপাতালটির কর্তৃত্ব সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসন গ্রহন করুন। আমরা স্থানীয় কমিটি সব ক্ষেত্রেই সহযোগীতা করব। কিন্তু ধলাগাছে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম হাসপাতালটি কোন ভাবেই বন্ধ করতে দেয়া হবেনা।

তাই আমরা হাসপাতাল পরিচালনা স্থানীয় কমিটি ফাইলেরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্য্যক্রম বিষয়ে বিপিডিএ এর গ্রহনীয় সকল বৈধ কর্মকান্ডে সহযোগীতা করব
এবং হাসপাতাল বন্ধ এবং বিক্রয় ষড়যন্ত্র যে কোন মুল্য প্রতিহত করব। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালটির পরিচালনার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করলে আমরা হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুর্ন সহযোগীতা করব। আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। সেটি হল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্য্যক্রম চলবে, কোন ভাবে তা নস্যাৎ করতে দেয়া হবে না।

একই সাথে আমরা আরও ঘোষনা করছি, আইএসিআইবি যদি বিপিডিএ এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি আইনি ভাবে বাতিল করেন এবং নিজেরাই চিকিৎসা সেবা কাজ শুরু করেন আমরা তাদেরকেও সব ধরনের সহযোগীতা প্রদান করতে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু কোন ভাবেই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে অন্যভাবে লাভবান হওয়ার কোন কর্মকে আমরা সমর্থন করব না।

আমরা স্থানীয় পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে সৈয়দপুরবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছি। আসুন আমরা সবাই মিলে সৈয়দপুরের ঐতিহ্য, ধলাগাছ গ্রামের ঐতিহ্য বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি চালু রাখতে ঐক্যবদ্ধ হই। ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি রক্ষা করি। পরিশেষে বিপিডিএ কতৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী বিষয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জ্ঞাত করা হইল।

এমতাবস্থায় দখলদারিত্বের কারনে সৃষ্ট দীর্ঘ দিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রাক্বালে বিশ্বমানের এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আবারও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক বন্ধ বা বিক্রি করে দেয়ার ঘোষনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সচেতনমহলসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী সাধারণ জনগন।

শাহজাহান আলী মনন
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি