ব্যাংক ডাকাতি আর উচ্চতর গনিতের ( c-a) ভাগ

আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৩
0
কার্টুনটি প্রথম আলো থেকে নেয়া

ডা জাকারিয়া চৌধুরী :
কাল্পনিক নাটক :

ব্যাংকু।

স্থান: শংকুচাইল বাজার হাইস্কুল। জনতা ব্যাংক শাখা। দ্বিতল স্কুলের নিচতলার সর্ব পশ্চিমের অংশ।

কাল: ১৯৮৭-৮৮ সালের কোন এক বসন্তের নিশ্চুপ সকাল।

পাত্র: ব্যাংক স্টাফ, দারোয়ান, অসংখ্য গ্রাহক ক্যাশিয়ার কাউন্টার থেকে লাইন ধরে স্কুলের পেছনে ছাত্রীদের প্রস্রাবের জায়গা পর্যন্ত চলে গেছেন। স্কুলের পুকুরের পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ব্যাংকের দরজা পর্যন্ত এসে গেছে বলা যায়। গ্রাহকদের চোখে মুখে নানান উৎকন্ঠা, ভয়, আতংক, অস্থিরতা কাজ করছে। ব্যাংকে আমানত রাখা যায়, উত্তোলনের সময় শুরু হয় হুজ্জোত। গত ক’দিন তো কেউ-ই টাকা তুলতে পারেনি। ব্যাংকে ফান্ড নেই। এই ফান্ড জিনিসটা কি আমি বুঝিনা। এইমাত্র একজন লোক এক হাজার টাকা জমা দিয়েছে। পরেরজন এসছে দুইশ টাকা তুলতে। ব্যাংক সাফ বলে দিল ফান্ড নেই। আমি ভাবলাম, টাকা জমা মানে টাকাটা ভেতরের রুমে নিয়ে অনেক নিচে কোনো সুরংগে ফেলে দেয়া হয়।…।…।………… যা আর তোলা যায় না। তা না হলে ফান্ড না থাকার কারন কি ? আগের রাতে ঝড়ো হাওয়ার সাথে কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে লাইনের শেষাংশে প্রস্রাবের তীব্র ঝাজ কাউকেই তেমন বিচলিত করেনি। ঘেরা দেয়া অংশটাও নেই হয়ে গেছে। গ্রাম গঞ্জে বস্তা ছালা দিয়ে ঘিরে টেম্পরারি মিনি টয়লেট যেখানে সেখানে বানিয়ে রাখা হত। এতে মেয়েদের আব্রুর সামনের অংশ নিবারনের চেষ্টা করা যায়।

মায়ের একাউন্টের চেক হাতে দাঁড়ানো কৌতুহলী এক কিশোরী খেয়াল করল তার পায়ের কাছেই একটা শীমের বিচি পরে আছে। এখানে এমন বিচি আসলো কোত্থেকে ? সে বিচিটা হাতে নিয়ে তার লাল জামায় মুছতেই এর চামড়া খসে ভেতরের অংশটা মাটিতে পরে গেল। মেয়েটি বজ্রাঘাতের মত স্থির হয়ে গেল বিশেষ একটা কারনে। তার দুই হাত এবং জামা থেকে তীব্র গুয়ের গন্ধ আসছে। এ বিচি কোন মেয়ের এক ফোটা পায়খানার অংশ ছিল। কিশোরী মেয়েদের এটা হয়, সে জানে।

মেয়েটি হিমালয়ের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কারো দিকে তাকানোর সাহস তার নেই। কথা হল, এই মুহুর্তে ঠিক কতজন তার দিকে তাকিয়ে আছে এ চিন্তাটা সে করতে পারছে না। লাইন ছেড়ে যাওয়াও সম্ভব না। গত দু’সপ্তাহ পর আজ ব্যাংকে এক লাখ বাইশ হাজার টাকা এসেছে। পাচশ টাকার উপরে তুলতে হলে উপর মহলে যোগাযোগ থাকতে হয়। অবশ্য এক সাথে এতো টাকা তুলবার সাধ্য আছেই বা ক’জনের !! ম্যানেজার সাহেব এসে টাকা বের না করাতক মোটা বেটে অবিবাহিত বয়স্কা ক্যাশিয়ার জানিয়ে দিল তার অপারগতার কথা। এই মেয়ে নার্ভাস। বেলা ১১ টার দিকে ম্যানেজারকে জনতা ব্যাংকের এই শাখায় ঢুকতে দেখেই নার্ভাস মেয়েটি তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে চেয়ার সহ পেছন দিকে পরে গেল। এতে তাঁর নীল জর্জেট শাড়ি হাটু পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। জিইসি ফ্যানের তীব্র বাতাস শাড়ির পাড়কে কোমর পর্যন্ত তুলে দিল। পাশে বসা সিনিয়র মহিলাটা টিপ্পনী কেটে বলল, তোমার উচিত আগে থেকেই ভল্টরুমে গিয়ে শাড়ি খুলে শুয়ে থাকা। এ কান্ড এখানে নিত্য ঘটনা। বাট্টু নার্ভাস মহিলার চরিত্র ভাল। খুবই ভাল। স্যারকে ঢুকতে দেখলে কেন যে রোজ এমনটা হয় এর হদিস কেউ বের করতে পারেনি।

আনুমানিক ৩৫ বছর পরের কথা –

এখন টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার হয় মিলিওন হিসেবে। ইলেকট্রনিক ট্রানজাঙ্কশান এদেশে সবচে জনপ্রিয় মাধ্যম। ৮০ ‘র দশকের সেই জনতা ব্যাংক এখন আর আছে কিনা কে জানে !! বর্তমান ব্যাংকিং চ্যানেলে এক শাখা থেকে অন্য শাখা বা ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার হয় থার্ড পার্টির মাধ্যমে। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা সাধারনত এসব দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যাই হোক, ঢাকার শান্তিনগর ব্রাঞ্চে এক দুপুরে কোনো রকম টেনশন ছাড়াই গোটা দশেক অপেক্ষারত ক্লায়েন্ট একযোগে উঠে দাড়ালেন। বাট্টু অবিবাহিত রান সর্বস্ব এক মহিলা কাস্টমার /ডাকাত কি করবে বুঝতে না পেরে নিজের বসে থাকা চেয়ারের উপর ইলেক্টন সর্ববরাহের মুল সুইচটি অফ করে অন্ধকার ফ্লোরে থলথলে শরীর নিয়ে পরে গেল।

একজন ডাকাত ভুল জায়গায় টর্চ জ্বালিয়ে ওই একই এংশটা দেখল যা দেখতে গিয়ে এ লেখক রাঙ্গামাটিতে চড় খেয়ে আপন স্ত্রী’র হাতে সোপর্দ হয়েছিল। ডাকাত লোকটি বলল- ওমা !!!! এই পথ ধরে তোমাকে আনন্দের তীর্থে নিতে যতক্ষন সময় লাগবে ততক্ষন সময় আমাদের ডাকাতি করতেও লাগবে না। মেয়েটি অজ্ঞান বলে কিছু শুনতে পেল না। বরুন স্যার আমাদেরকে পুরো অপরেশনের সময় দিয়েছেন মাত্র সাত মিনিট। ডাকাত দল মাইক্রো নিয়ে চলে গেল। তাদের সামনে পেছনে বেশ লম্বা একটা অংশ ক্লিয়ার রাখা হয়েছিল আগে থেকেই। ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার ম্যানেজারের রুমে ঢুঁকে দেখল দুটো তাজা বিচি ফ্লোরে পরে আছে। ম্যানেজারের হুশ আছে কি নেই বুঝা যাচ্ছে না।


সে অফিসারঃ স্যার প্লিজ, বিচলিত হবেন না। এ এ এই যে নিন। ওরা অতো নির্দয় নয় স্যার। ফ্লোরে ফেলে গেছে। স্যার ৭ কোটি খায়া গেছে !! মিডিয়া পুলিশ এলো বলে।

ম্যানেজারঃ বারো কোটি বলে যাও। আর শু্নো, ওই লাল সুইচ যা আমার চেয়ারের সামনে পা বরাবর সেটি আগে অফ করো। ডাকাতি হয়েছে সেটা-ই আসল………… যা বলব তা-ই সত্য। শুনো সুইচ অফ করবে তাঁর ছিড়ে, বাটন টিপে নয়।

মিডিয়া পুলিশ সাংবাদিক এলো এক যোগে————-

ম্যানেজার কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আমার কাছে ১১ কোটি টাকার একটা ব্রাঞ্চ রিকুইজিশন এসেছিল। সেজন্য প্রাথমিকভাবে কাউকে-ই সন্দেহ করার সুযোগ পাইনি। অন্যদিকে এরা সকলেই ব্যাংক সংশ্লিষ্ট, না মানে সংশ্লিষ্ট বলে মনে হয়েছে…………… বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুরেশ আস্তানা আসছেন।


পুলিশের টিবি টিম কাউন্টার এ্যাটাকের বীরত্ব দেখিয়ে তিন ঘন্টায় ৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে বলে শেষ খবর পর্যন্ত জানা গেছে। আরও সাত ঘন্টা পর তারা দেড় কোটি টাকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে শেষ খবর পর্যন্ত খবর এসছে। কেউ কেউ বলছে এটি টিবি টিমের ডাবল ডাকাতি। যারা নিয়ে গেছে তারা নিল কিছু , যারা উদ্ধার করেছে নিল এক ভাগ , যারা সরকারের পক্ষে গ্রহন করল তারা পেল ম্যানেজার আর তাঁর সরকারীর লুটের ভাগ। একে বলেউচ্চতর গনিতে এর নাম সাইক্লিক অর্ডার। অর্থনীতিতে ব্যাংক ডাকাতিকে কি বলে জানিনা। উচ্চতর গনিতে এভাবে লেখা থাকে-
( a-b )( b-c )(c-a )
a ভাগ দিয়েছে b কে
b ভাগ দিয়েছে c কে
c ভাগ দিয়েছে a কে।
* পাঠকস, আবারও বলছি, সবটা-ই কাল্পনিক।