ভারতের কানপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে এক মুসলিম ব্যক্তিকে চরম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ৪৫ বছর বয়স্ক এক মুসলিম ব্যক্তিকে একদল লোক জোর করে রাস্তায় মারতে মারতে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে বাধ্য করেছে।
এনডিটিভি জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে পুলিশের সামনেই এক দল মানুষ ওই ব্যক্তিকে মারধর করছে সেই সঙ্গে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে ওই ব্যক্তিকে বাধ্য করছে। এ সময় ওই ব্যক্তির ছোট মেয়ে বাবাকে আঁকড়ে ধরে তাকে না মারতে অনুরোধ করছেন। এনডিটিভি জানায়, বুধবার( ১১ আগস্ট) ভারতের উত্তর প্রদেশের বরা কানপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভি জানায়, যখন এই ঘটনা ঘটে তার পাশেই ভারতের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন বজরং দলের জনসভা চলছিল। ওই এলাকায় মুসলিমরা জোর করে হিন্দু মেয়েদের ধর্ম পরিবর্তন করছে এই অভিযোগ তুলে আগে থেকেই বুধবার সভা করার ঘোষণা দিয়েছিল বজরং দল।
এদিকে নিগৃহীতের শিকার ওই মুসলিম ব্যক্তি জানান, তিনি একজন ব্যাটারি চালিত রিকশাচালক। বুধবার দুপুর ৩টায় যখন তিনি তারা রিকশা চালাচ্ছিলেন সে সময় তাকে জোর করে ধরে আনা হয়। এরপরে তাকে মারধর করা হয় এবং জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়। তিনি আরও জানান, ওই উগ্রবাদীরা তিনিসহ তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপরে পুলিশ এসে তাকে রক্ষা করে বলে জানান তিনি।
এদিকে কানপুর পুলিশ জানায়, জুলাই মাসে ওই মুসলিম ব্যক্তির আত্মীয় তার প্রতিবেশী এক হিন্দু ব্যক্তির নামে থানায় অভিযোগ দেয়। ওই হিন্দু ব্যক্তিও অভিযোগ দায়ের করেছিল।
কানপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাভিনা ত্যাগি জানান, তারা নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্যাতনের ভিডিওটি দেখেছেন। পুলিশও একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ১০ জন অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কানপুর পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে এই ঘটনার তিন দিন আগে ভারতের দিল্লিতে মুসলিম বিরোধী স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এনডিটিভি জানায়, রোববার (৮ আগস্ট) দিল্লি যন্তর মন্তরের কাছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও দিল্লি বিজেপির সাবেক মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। এতে হিন্দু উগ্রবাদী কয়েকটি সংগঠনও যোগ দেয়।
সেই মিছিলে স্লোগান দেওয়া হয় ‘ভারতে থাকতে হলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে।’ পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, যন্তর মন্তরে মুসলিমদের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। ভারতের অধিকাংশ নেটিজেনরা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় মামলা করে দিল্লি পুলিশ।