শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। তবে ভুট্টার আবাদে এখন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোকা আর্মি ওয়ার্ম। ফসল ধ্বংসকারী ক্ষতিকর এ পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুট্টা চাষিরা।
কৃষকের লাভের ফসল পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই গাছের মূল-কান্ড ও কচিপাতা কুড়ে কুড়ে খেয়ে ঝাঁঝরা করে সাবাড় করছে ক্ষতিকর এসব পোকা। নামিদামি কোম্পানির বালাইনাশক প্রয়োগ করেও দমন করা যাচ্ছে না এই পোকার আক্রমণ। আর এই সংকটকালে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকের ভাগ্যে মিলছেনা তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা। এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের। এখনই এই পোকা দমন করতে না পারলে ভুট্টার ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মাগুড়া সিঙ্গেরগাড়ী পাড়ের হাট এলাকার সড়কের পাশে সিনহা এগ্রো ফার্ম বিঘার পর বিঘা কৃষি জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। ওই ভুট্টার ক্ষেতগুলোতে পোকার আক্রমণের ফলে কচিপাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলায় ফলন না হওয়ার বেশি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বংশ বিস্তারের মাধ্যমে এই ভয়ানক পোকার আক্রমণ দিনের পর দিন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে এক গাছ থেকে অন্য গাছে। এতে ভুট্রার গাছগুলো কঙ্কালসার হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
ওই এলাকায় সিনহা এগ্রো ফার্ম এবার ২০ একর জমিতে ভুট্রা চাষাবাদ করেছেন। ওই ভুট্রার ক্ষেত দেখভালের দায়িত্বে থাকা (ম্যানেজার) আফাজ উদ্দিন বলেন, চাষাবাদকৃত সিনহা মালিকের ২০ একর জমিতে ব্যাপকহারে আর্মি ওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। একাধিক বার বালাইনাশক প্রয়োগ করেও দমন করা যাচ্ছেনা এ পোকার আক্রমণ। আগাছা পরিস্কার করার সময় প্রথমে এই পোকার আক্রমণ কিছুটা দেখা গেলেও এখন দিনের পর দিন এ রোগের পরিমাণ ব্যাপকহারে বেড়ে গিয়ে যেন পোকার বসতঘরে পরিনত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছেনা কোন কৃষি সেবা।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চারমাথা মোড়ের আব্দুল আজিজ জানান, ২বিঘা জমির ভুট্টার গাছ আপাদমস্তক পোকায় খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। একাধিকবার বালাইনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হয়নি।
সদর ইউপি’র মুশা পাকার মাথা এলাকার আবুল কালাম এবার ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করেছেন। তিনি জানান, পোকা দমনে কার্যকরী বালাই নাশক বাজারে না পাওয়ায় এ পোকার সঙ্গে যুদ্ধ করে ফসল ফলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভুট্টার আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে কৃষকরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখতে হবে আর্মি ওয়ার্ম পোকার আক্রমণ না অন্য কোন পোকার আক্রমণ না দেখে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে মাঠ পর্যায়ে উপ সহকারী কৃষি অফিসারগণ ভুট্টা চাষিদেরকে বিভিন্ন রোগ বালাই দমনে পরামর্শ দিয়ে আসতেছেন।