ভূরুঙ্গামারীতে ব‍্যাপক হারে বাড়ছে করোনা

আপডেট: জুন ১৭, ২০২১
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ছে জ্বরের প্রাদুর্ভাব। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে পরিবারের সবাই। তবে এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। আশংকাজনক হারে জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মাঝে করোনা ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে।করোনা আক্রান্তের ভয়ে অনেকেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতেই গোপনে নিজের মতো করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকানদাররা জানান গত কয়েক দিনে সর্দি ,জ্বর,কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যাথার ওষুধ বিক্রি হয়েছে স্বাভাবিকের চাইতে কয়েকগুন বেশি। এসব রোগের ঔষুধ সরবরাহ কম থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ৯ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৪ জন রোগি করোনা পজিটিভ হয়েছেন। উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৮৮ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১ জন। সর্দি জ্বর, গলা ব্যাথা নিয়ে গত সাত দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৭০ জন রোগি। জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১০০ থেকে ১২০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় করোনা সনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫%। পুরো উপজেলায় হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় প্রসাশন।
এরই মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণও করেছেন বেশ কযেক জন। করোনার নমুনা দিতে মানুষের অনীহা থাকায় উপজেলায় করোনা রোগির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে পারছেনা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
উপজেলার স্বাস্হ‍্য বিষেজ্ঞদের ধারনা এই এলাকায় হঠাৎ করে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এলাকার জনসাধারণের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে অনীহা ও স্থল বন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহকারীদের অবাধ চলাচল।
ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের লিটন মিয়া (৪৫) ও চরভূরঙ্গামারী ইউনিয়নের গেন্দা মিয়া (৩০) বলেন আমরা ৪/৫ দিন থেকে জ্বর ও সদ্দিতে ভূগছি। জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছি। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি আমরা।
চরভূরঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক বলেন আমার এলাকায় অনেক মানুষের জ্বর ও সদ্দি হওয়ার খবর পাচ্ছি।তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন‍্য বলছি।

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার জানান, ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ জ্বরে ভুগছেন। ইউনিয়নটিতে দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগে একব্যক্তি মৃত্যু বরন করেছেন।
জয়মনিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক সাখাওয়াৎ হোসেন সানোয়ার জানান, ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন।
ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, ইউনিয়নটিতে জ্বরে একব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমটির সদস‍্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, সংক্রমণের বর্তমান হার উদ্বেগজনক। তবে, জ্বর সর্দি মানেই করোনা নয়। এগুলোর বেশির ভাগই সিজনাল ফ্লু অথবা টাইফয়েড। সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি প্রয়োজনীয় সকল কর্মসূচি গ্রহন করেছে এবং সোনাহাট স্থল বন্দরে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ন্ত্রণে তাদের মেডিকেল টিম সজাগ রয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্রকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ানোর জন্য বিজিবিকে সুপারিশ করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে লক ডাউন থাকায় সোনাহাট স্থল বন্দরের কার্যক্রম এখন অনেকটাই সীমিত । তারপরও যে কয়েকটি মালবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে সেগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে উপজেলা স্বাস্হ‍্য বিভাগের মেডিকেল টিম।
#####
আমিনুর রহমান বাবু