মুনিয়ার মৃত্যু: বসুন্ধরা এমডি আনভিরকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবী মহিলা পরিষদের

আপডেট: মে ৬, ২০২১
0

মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবাহানকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে মহিলা পরিষদ ।
রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনামচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ৬ মে সকাল ১১ টায় রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আপিল বিভাগ,বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও সম্মানিত সদস্য, নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটিরর আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড.মিজানুর রহমান এবং অধ্যাপক ডা.রওশন আরা বেগম প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন কালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, কোভিডকালীন সময়ে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, আইনের শাসনের অভাব, বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রিতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা,দুর্নীতির কারণে সমাজের একটা গোষ্ঠীর যথেচ্ছচারিতা নানাধরণের সামাজিক অনাচার সংঘটিত করছে। অপরাধী বারবার শাস্তির আওতার বাইরে থাকছে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা তারই প্রতিফলন। এসময় তিনি গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রভাবমুক্ত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে মোট ৯ টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিসমূহ হলো: ১.রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ২.অভিযুক্তকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে; ৩.দ্রুত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ৪.ঘটনার শিকার তরুণীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; ৫. ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে সরকার ও প্রশাসনকে সক্রিয়, কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে; ৬.সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাকে অপরাধী প্রমাণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে;৭.‘কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’ কে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে;৮.গণমাধ্যমকে এ ধরণের ঘটনায় বস্তুনিষ্ঠ, গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে; ৯. জাতীয় কমিশন গঠন করে নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের দিক নির্দেশনা প্রনয়ন করতে হবে।

নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম

সংবাদ সম্মেলনে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড.মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে একজন নারীর মৃত্যুর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের জন্য রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাতে হয়। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। অথচ বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতার সুষ্ঠু বিচার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়ার কথা । গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন আজ রাজনৈতিক ক্ষমতা বা টাকার ক্ষমতার কাছে এবং কিছু কিছু অরাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে একজন নাগরিক, রাষ্ট্রও যেন অসহায়।

এসময় তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম। তারা ঘটনার সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিবাদের ক্ষেত্রকে তৈরি করে। আমরা মনে করি বিচার বিভাগ যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম। ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে এবং গণমাধ্যমকে এই ঘটনার আড়ালে থাকা প্রকৃত সত্যকে খুঁজে বের করতে এবং সকলের সামনে উন্মোচন করতে আহ্বান জানান।

সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ডা.রওশন আরা বেগম বলেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমাদের কি করণীয় এবিষয়ে এখনি ভাবতে হবে। করোনা মহামারীর সময়েও নারী ও কন্যার প্রতি যে ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত দু:খজনক। গুলশানে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এসব ঘটনা যেন চিরতরে বন্ধ হয় তার জ্ন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে সকলকে তিনি আহবান জানান।

নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, অর্থের প্রাচুর্য থাকলে একটা মানুষকে যে ‍মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যায় গুলশানের ঘটনা হলো তার উদাহরণ । যারা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের বিচারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। অর্থের প্রাচুর্য কিভাবে মানুষকে অমানুষ করে, পুরো সমাজকে কিনে নিতে পারে তা এখন দেখা যাচ্ছে। নারীর প্রতি নির্যাতনের দায় কেবল নারীর নয় বরং আজ পুরো সমাজের উপর এসে পড়েছে। নানা ঘটনা ঘটছে কিন্তু যখন সুষ্ঠু বিচার হয় না তখন এটা আশাহত করে। এসময় তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার খবর নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়তা করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। তিনি আরো বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলন কেবল নারী সংগঠনের একার কাজ নয়, সকলকে এখানে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আপিল বিভাগ,বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আজকে যে বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন তা অত্যন্ত সেনসিটিভ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে নারী নির্যাতন হবে, তারপর বিচারের জন্য দাবি জানাতে হবে এটা কল্পনাতীত। গুলশানের ঘটনায় কে দোষী আমরা জানি না। মূল দায়ীকে চিহ্নিত করতে হবে। প্রকৃত দোষী ধনী হলে সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া থেমে যায় কিনা এটা আজ সারাদেশের মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে। ঘটনার পরবর্তী বিষয়গুলো আমাদের হতবাক করে। তিনি এসময় সাংবাদিকদের আরো তথ্যানুসন্ধান করতে , সঠিক তথ্য তুলে ধরতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারাদেশে আজ নারী নির্যাতন চলছে, এটা ভালো নয়, এ ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্তদের কাজ করতে হবে। এসময় তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শাসনবিভাগ, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারবিভাগ,গণমাধ্যম এবং নারীর মানবাধিকার সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বক্তারা বলেন, অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতায় আরো একটিভ হতে হবে, যাতে সকলে প্রকৃত সত্য জানতে পারে। গুলশানের ঘটনার তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে । ভিকটিমকে কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবেনা। এটা তার প্রতি অবিচার করা হয়।

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, প্রশিক্ষণ-গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা,পরিবেশ সম্পাদক পারভীন ইসলাম, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ডা. লতিফা শামসুদ্দিন, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তা সহ ৪০ জন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড.মাকছুদা আখতার ।