কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না সুজন নামের এক দরিদ্র শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশগ্রহন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওই শিক্ষার্থী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বিষয়টির বিচার দাবী করে গতকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৯ সালে উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রাঙ্গালীরবস গ্রামের আজগার আলীর ছেলে সুজন মিয়া সোনাইর খামার আলিম মাদ্রাসা থেকে মানবিক বিভাগে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ- ৩.৭৬ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। পরবর্তীতে সে ওই প্রতিষ্ঠানে আলিম শ্রেনিতে ভর্তি হয়। তার ক্লাস রোল নং ০১।
যথারীতি সে রেজিস্ট্রেশনের ফিস জমা দেয় মাদ্রাসায়। চলতি বছরে তার আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার কথা। গত ০১ আগস্ট সে অ্যাসানমেন্ট আনতে গেলে তাকে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়নি। বিষয়টি সেদিন সুপারিনটেনডেন্টকে জানালে তিনি তার কথা কর্ণপাত না করে কাজের কথা বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
পরে ওইদিন বিকেলে সুজন ও তার তার বাবা আজগার আলী সুপারিনটেনডেন্ট মাও. মাসুদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। তখন সুপারিনটেনডেন্ট তাকে জানান তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এবারে তার পরীক্ষা দেয়া হবে না। ২০২২ সালের জন্য সে যেন প্রস্তুতি নেয়। একটা বছর কোন বিষয় না।
একথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সুজন। তাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন বাবা আজগার আলী। তার চোখ দিয়েও ঝরে পরে অশ্রু।
পরে সুজন এ ঘটনার তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও ন্যায় বিচার চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
সূজন জানায়, আমি এখন কি করব। বছরজুড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে এখন শুনছি আমার রেজিস্ট্রেশনেই হয়নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার শিক্ষাজীবন থেকে হারিয়ে গেল একটি বছর। এর দায় নেবে কে? আমি পরীক্ষা দিতে চাই।
সুজনের মা কমলা বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ,ভাতের চাউল বিক্রি করে ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়েছি। এখন শুনি আমার ছেলে পরীক্ষা দিতে পারবেনা। আমরা এখন কি করব? এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন কমলা বেগম।
সুজনের বাবা আজগার আলী বলেন, আমার ছেলের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোন অধিকার নেই সুপারিনটেনডেন্টের। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
খবরটি অভিভাবদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়,। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১২ আগষ্ট) সকালে মাদ্রাসার সামনের সড়কে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল খালেক, শিক্ষার্থী মাগফিরুল ইসলাম মিজু,সমাজ সেবক সিরাজুল ইসলাম, মাইদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম সহ অভিভাবকবৃন্দ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা মেনে নেয়া যায়না। অধ্যক্ষ বছরের পর বছর ধরে মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও সরকারী বিল বেতন তুলে নিচ্ছেন। শুধু সুজনই নয় অনেক শিক্ষার্থীর অনেক রকম অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ অংশ
নেয়।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাও. মাসুদুর রহমান বলেন, যেভাবে হোক হয়ে গেছে। এখন চাইলেও আমরা তার শিক্ষা জীবনের একবছর ফিরিয়ে দিতে পারব না। সুজন ও তার বাবা আজগার আলীর সাথে বসে আমি তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। তাদের কথা দিয়েছি ২০২২ সালে আলিম পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রাইভেট পড়া বাবদ যা খরচ লাগে তা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হবে। তার ফরম পুরণ করা হবে প্রতিষ্ঠানের খরচে।
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
###
আমিনুর রহমান বাবু