স্বাধীনতা পদক প্রদানেও সরকার ‘আত্বীয়করণ’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখেন এতো ব্যর্থ, এতো অযোগ্য তারা(সরকার) যে স্বাধীনতার পদক যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন সেই স্বাধীনতার পদক নিয়ে তারা দুর্নীতি করেছে। যেখানে আমির হামজা নামে একজনকে তারা পদক দিয়েছে যার সম্পর্কে.. পরে বাতিল করে দিয়ে তার আবার নতুন করে তারা তদন্ত করছে।
‘‘ শুধু তারই কেনো? আরো যাদেরকে দিয়েছেন তাদেরটা তদন্ত করুন, তারা কারা? এদের বেশির ভাগই হয় তারা এই মন্ত্রীদের আত্বীয়-স্বজন অথবা তারা প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয়-স্বজন তাদেরকেই এই পদক দেয়া হয়েছে এবার।”
সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে স্বাধীনতার পুরস্কাজয়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতে নয়জন ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের স্বাধীনতার পুরস্কার পেয়েছে।
বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে চিকিতসা ও সেবা কমিটির উদ্যোগে ‘স্বনির্ভর দেশ গঠনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় ৭জন প্রখ্যাত চিকিতসক মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের অবদানের জন্য ক্রেস্ট প্রদান করেন।
এরা হলেন, অ্ধ্যাপক ফরিদুল হুদা, অধ্যাপক মোবিন খান, অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, ডা. সাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক মোমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল হক। এছাড়া বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আবদুস সালামকেও সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রয়াত ডা. মো, ফরিদুল হুদার পক্ষে তার ছেলে নাজমুল হুদা বিপ্লব এবং অধ্যাপক মোবিন খানের পক্ষে ডা. সাইফুল ইসলাম লেলিন ক্রেস্ট গ্রহন করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ চতুর্দিকে তারা(সরকার) লুটপাট, দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় নিয়ে চলে গেছে যে, এখন এদেশকে রক্ষা করতে হলে একমাত্র এদেরকে সরানো ছাড়া বিকল্প কিছু নাই। আজকে এরা গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে আজকে এরা ঘরছাড়া করেছে। ৩৫ লক্ষ আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করেছে, ৬‘শ অধিক মানুষকে তারা গুম করে দিয়েছে, সহস্র মানুষকে তারা হত্যা করেছে- এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।”
‘‘ সমস্ত পেশাজীবীদের কাছে আমরা আহবান জানাব, আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা দূর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী ভয়াবহ সরকারকে সরিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে এই সরকার স্বাধীনতা বিরোধী সরকার, জনগনের বিরুদ্ধের সরকার। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করছি।”
‘‘ আর তারা তাদের কিভাবে অর্থ উপার্জন করবে, কিভাবে লুটপাট করবে, কিভাবে বিদেশে অর্থ পাঁচার করবে, কিভাবে আত্বীয়-স্বজনদের আরো বেশি টাকা-পয়সা উপার্জনে স্ফীত করবে সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।”
দেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে দারিদ্র্যের হার দুই পারসেন্ট বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একদম গেছে। এটা বাস্তবতা। দ্রব্যমূল্যে এমন ভাবে বেড়েছে, ইনফ্লুয়েশন এমনভাবে বেড়েছে যে, মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।”
‘‘ অথচ চব্বিশ ঘন্টা আমাদের ওয়াদুল কাদের সাহেব তার রাতেও ঘুম হয়, সকালেও ঘুম হয়, তিনি সারাক্ষন বিএনপির দুঃস্বপ্ন দেখেন এবং সমানে কথা বলতে থাকেন। এখানেই বুঝা যায় যে, বিএনপি শুধু আছে না, বিএনপি প্রবল ভাবে আছে যে, তাদের ঘুম ঘাড়ে কেড়ে নিয়েছে।”
জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিয়ে সরকার জনগনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার করছে বলেও অভিযোগ করেন অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফখরুল।
চিকিতসা ও সেবা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সদস্য ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক মহাসচিব অধ্যাপক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আব্দুস সেলিম, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন ডাবলু, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. শহীদুল আলম প্রমূখ চিকিতসকরা বক্তব্য রাখেন।