শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে পাকিস্তানের র্নিলজ্জ অপপ্রচার শেষ নেই –সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম

আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১
0

একটি ভিডিও ক্লিপে পাকিস্তানের একজন নারী সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এয়ার ভাইস মার্শাল এ.কে. খন্দকারের একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করার চেষ্টা করেছেন, শেখ মুজিব পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেন। অথচ এ.কে. খন্দকার বইটিতে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্যে নিজেই প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।

তারা বলছেন, ক্ষমা চাওয়ার পরও নির্লজ্জ্ব পাকিস্তানি প্রচরণা থেমে নেই। এক যৌথ বিবৃতিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম বলছে, ‘আমরা লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে পাকিস্তানি অপপ্রচার ইদানিং নতুন উদ্যোমে জোরদার করা হয়েছে। এসব অপপ্রচারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক অপপ্রচারে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ভাঙতে চাননি, তিনি মুসলিম লীগেরও খাঁটি নেতা ছিলেন! আমরা এই ধরনের নিচুমানের অপপ্রচার এবং ইতিহাসের সত্য বিবর্জিত প্রচারণার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করি।’

‘এসব অপপ্রচারে আরো দাবি করা হয়েছে, ‘২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেডিও পাকিস্তানে গিয়ে বাঙালিদের আন্দোলন না করার জন্যে বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন! এসব দাবি কেবল উদ্ভটই নয়, একই সাথে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্যতা শূণ্য নির্লজ্জ্ব মিথ্যাচার, যা বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাস সর্ম্পকে জ্ঞাত কোনো ইতিহাস সচেতন মানুষ মাত্রেই জানেন।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঐতিহাসিক সত্য এই যে, ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে সেদিনকার পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা শুরু করা হয়।

শুধু তাই নয়, বাঙালির স্বাধীনতার প্রাণপুরুষকে হত্যা করার সকল প্রস্তুতি পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তান বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পন ও বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পক্ষে। সে কারণেই ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বসম্মানে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু নিজেই জানিয়েছেন, কিভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। এমনকি তাঁর জেলের সেলের পাশে তাঁর জন্যে কবরও খোঁড়া হয়েছিল।’

‘এই ধরনের তুঘলকি অপপ্রচারে আরো দাবি করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে যা যা কিছু ঘটেছে, তার সবই নাকি ছিল ভারতের কারসাঁজি বা ষড়যন্ত্র। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ নয়, বাঙালিদের ওপর ২৩ বছরের শোষণ নির্যাতন নয়, পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের হাতে গণহত্যা ও নির্বিচার নারী নির্যাতন নয়, একমাত্র ভারতের প্রপাগাণ্ডার ফলেই নাকি বাঙালিরা যুদ্ধে নেমেছিল! সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এ ধরনের মিথ্যাচার ও নির্লজ্জ অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানায়। আরো হাস্যকর ব্যাপার যে, এই ধরনের অপপ্রচারে এমন একটি ‘পতাকা’ও দেখাবার চেষ্টা করা হচ্ছে যেখানে লেখা রয়েছে ‘United States of Pak- Bangla’ বা ‘পাক-বাংলা যুক্তরাষ্ট্র’!’

‘মোদ্দাকথা, বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে, আগামী ১৫ অগাস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের স্মরণে জাতীয় শোকদিবস পালন করতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ যখন অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানসহ আঞ্চলিক দেশগুলোকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই শুরু করা হয়েছে নতুন অপপ্রচার। এসব দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন করার কারণ থাকে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কী নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হল?’

‘এর আগেও দেশীয় পাকিপ্রেমীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বহু অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু ইতিহাস কখনো মুছে ফেলার বিষয় নয়। ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও তিন লক্ষ মা বোনের ইজ্জত/সম্ভ্রম আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, এই স্বাধীন পতাকা। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে এ ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও ঘৃণা প্রকাশ করি।’

বিবৃতি স্বাক্ষর করেছেন- সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের কার্যকরি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নুরুল আলম, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হাসান ইমাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সরওয়ার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞানী ড. নূরুন্নবী, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মনসুর আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বেনু, কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সভাপতি লায়লা হাসান, সাধারণ সম্পাদক ইফফাত আরা নার্গিস ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মুঈদ হাসান তড়িৎ।