গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে সম্পত্তির লোভে এক প্রবাসীর আড়াই বছরের শিশু সন্তান মরিয়ম আক্তারের পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে নির্যাতনের অভিযোগে শিশুটির সৎ মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন।
গ্রেফতারকৃতের নাম- আলিফা আক্তার রিপাকে (৩০)। সে ময়মনসিংহের পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের দুবাই প্রবাসী ছেলে মোস্তফা কামালের স্ত্রী এবং মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, শিশু মরিয়মকে নির্যাতনের অভিযোগে তার সৎ মা আলিফা আক্তার রিপার বিরুদ্ধে শনিবার শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন ওই শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন। শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে রিপাকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এস আই মোহাম্মদ আলী।
শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন ও স্বজনরা জানান, ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বঁাশিয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে দুবাই প্রবাসী মোস্তফা কামাল গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা এলাকায় জমি পঁাচ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। আট বছর আগে তিনি সাবিনা ইয়াছমিন নামে এক নারীকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন।
তাদের সংসারে মরিয়ম আক্তারের জন্ম হয়। দুবাইয়ে অবস্থানকালে আলিফা আক্তার রিপার (৩০) সঙ্গে মোস্তফা কামালের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের জের ধরে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে বিয়ের জন্য মোস্তফাকে চাপ দেন রিপা। রিপাও বেশ কয়েক বছর দুবাই প্রবাসী ছিলেন। একপর্যায়ে রিপার দেয়া সকল শর্তে মেনে নিয়ে চার মাসের শিশু মরিয়মকে নিজের কাছে রেখে প্রথম স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান মোস্তফা। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রথম সংসারে জন্ম নেয়া শিশু মরিয়মকে দেখাশোনা, মায়ের যত্নে আদর ও ভালবাসা দেয়ার শর্তে আলিফা আক্তার রিপাকে বিয়ে করেন শিশুর বাবা মোস্তফা কামাল।
তিনি আরো জানান, বিয়ের পর অসুস্থ্যতার কারণে রিপা কোনোদিন মা হতে পারবেন না বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন। এ খবরের পর থেকে মোস্তফা কামালের ভবনটি নিজ নামে নেওয়ার জন্য নানা কৌশল আঁটতে থাকেন এবং মোস্তফাকে চাপ দেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী রিপা। এতে মোস্তফা রাজী না হওয়ায় নিষ্পাপ শিশুটির উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করতে থাকে রিপা।
প্রায় ছয় মাস আগে তার প্রথম সংসারের আড়াই বছরের শিশু সন্তানকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে আবার দুবাই চলে যান মোস্তফা। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে শিশু মরিয়মকে নিয়ে রিপা এ বাসাতেই থাকতো। মরিয়মকে স্বজনদের কাছে যেতে দেয়া ততো না। মোস্তফার অনুপস্থিতির সুযোগে তার একমাত্র উত্তরাধিকার শিশু সন্তান মরিয়মের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় রিপা।
মোস্তফা কামালের মামা মন্নাছ শেখসহ স্বজনরা জানান, গত বুধবার নাতি মরিয়মকে দেখতে শ্রীপুরের বাসায় যান দাদা আফাজ উদ্দিন। সেখানে তিনি মরিয়মকে গুরুতর অসুস্থাবস্থায় দেখতে পান। মরিয়মের পায়ূ ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত দেখতে পেয়ে তিনি শিশুটির সৎ মা রিপার কাছে অসুস্থ্যতার কারণ জানতে চান। এসময় মরিয়মের এ অসুস্থ্যতার কারণ জানাতে নানা টালবাহানা করতে থাকে রিপা। পরে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। শিশুটির ক্ষতস্থান গুলোতে পঁচন ধরেছে। সৎ মা রিপা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাদা আফাজ উদ্দিনকে জানিয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু মরিয়ম। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় রিপার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আফাজ উদ্দিন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মইনুল আতিক এ ব্যাপারে বলেন, শিশুটির পায়ূপথ ছেড়া ও যৌনাঙ্গে দগদগে ঘঁা রয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে শিশুটিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।