পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস ২০২১ উপলক্ষে এসআরএস, ব্লাস্ট, বিলস্, এবং এসএনএফ এর মতবিনিময়
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২১:
করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষাসহ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ । নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি-এসআরএস, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্, এবং শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম-এসএনএফ এর উদ্যোগে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস উপলক্ষ্যে “করোনাকালীন পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা : বাস্তবতা ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা আজ ২৯ এপ্রিল ২০২১ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
দৈনিক কাজের সময় আট ঘন্টা নির্ধারণের জন্য মে দিবসের আন্দোলন হয়েছিল উল্লেখ করে বিলস্ মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখনও আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন যারা মাথার ঘাম পায়ে পেলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে সেসব শ্রমিকদের জন্য এ ধরণের সুবিধা যুক্ত করা উচিৎ।
সকল ক্ষেত্রে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে এসআরএস নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন এক্ষেত্রে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন- শ্রমের সাথে সংশিষ্ট অংশীজনদের মত-পথ-কৌশল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু মূল লক্ষ্য অর্জনে পরষ্পরের প্রতি আস্থা থাকতে হবে। তিনি করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষাসহ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
করোনাকালে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, আগে শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে হবে। শ্রমিক বাঁচলে কারখানা বাঁচবে। এজন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে শ্রমিকদের দ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্লাস্টের উপপরিচালক মোঃ বরকত আলী বলেন আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে, এমতাবস্থায় শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক বিধি-বিধান অন্তর্ভূক্ত করতে হবে যাতে কোভিডের মত কোন মহামারিতে শ্রমিককে অতিরিক্ত ভোগান্তির শিকার হতে না হয়। তিনি আরো বলেন- শ্রমিকের জন্য ঘোষিত সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ শ্রমিককেই দিতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূইয়া বলেন, লকডাউনে অফিস আদালত বন্ধ থাকার পরও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানা পরিদর্শন করছেন। তিনি বলেন ডাইফের উদ্যোগে প্রত্যেক কারখানায় করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আলাদা বুথ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এসময় তিনি অধিদপ্তরের হটলাইনে শ্রমিকদের অভিযোগ জানানোর জন্য অনুরোধ করেন।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) প্রতিনিধি কামরূল আহসান বলেন, লকডাউনে সব কিছু বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে কারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিধি মানা বা যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। ক্রাইসিস কমিটির মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল উল্লেখ করে এনসিসিডব্লিউই এর সদস্য সচিব নইমূল আহসান জুয়েল বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে, ঠিকমত কাজ করতে না পারলে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাও বিঘিœত হবে। তিনি আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবি জানান।
সভায় মূল প্রবন্ধে এসআরএস এর প্রোগ্রাম অফিসার সিথি ঘোষ উল্লেখ করেন, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, আবার অনেকের মজুরি কমে গিয়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে লকডাউন বা কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে কাজ করছে ঠিকই কিন্তু কোন কারণে অধিকার বঞ্চিত হলে প্রতিকারের সুযোগ পাচ্ছে না, আদালত বন্ধ থাকায় আদালতেও যেতে পারছে না।
সভায় অন্যান্য বক্তারা শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা, কারখানা মালিকদের উদ্যোগে শ্রমিকদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, করোনাকালের সুযোগ নিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই না করা, শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, ত্রিপক্ষীয় কমিটির কার্যক্রম জোরদার করা, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসাইন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপ-পরিদর্শক মতিউর রহমান প্রমুখ। এছাড়া ওয়েবিনারে সরকার, মালিক, ট্রেড ইউনিয়ন, গণমাধ্যমকর্মী’সহ শ্রমিক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন ।