দেশে গণতন্ত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্রান্তিকাল চলছে উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ সরাসরি রুদ্ধ করেছে। প্রকৃত অপরাধীদের পরিবর্তে ভিন্নমতের সাংবাদিকদের এই আইনে টার্গেট করা হচ্ছে। এই আইন করার পর সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছেন এমন কোনো নজির নেই। তারা সাংবাদিকদের অবিসংবাদিত নেতা রুহুল আমিন গাজী, সা’দত হোসাইনহ কারাবন্দি সকল সাংবাদিকের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি জানান।
কারাবন্দি বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এক ভার্চ্যুয়াল সমাবেশের আয়োজন করে। বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজের সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব শহীদুল্লাহ মিয়াজী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বাহারী, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল ও রাশেদুল হক, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, দপ্তর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন, শামসুদ্দিন হারুন, মো. আবু বকর মিয়া, এ কে এম মহসীন, ডিইউজে নেতা দিদারুল আলম দিদার, খন্দকার আলমগীর হোসেন, ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, গাজী আনোয়ারুল হক, জেসমিন জুঁই, লাবিন রহমান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম।
সমাবেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সরকারের সমালোচনার কারণে বহু সাংবাদিক আজ দেশ ছাড়া হয়ে প্রবাসে জীবনযাপন করছেন। এ সরকারের সময় বহু সাংবাদিক খুন হয়েছে, কিন্তু কোনো বিচার হয় না।অনেকে জেল, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। রুহুল আমিন গাজী,শাহাদাত হোসেনসহ রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা কালো আইনের মিথ্যা মামলায় কারাবাস করছেন। তাই ভয়ে সত্য কথা বলতে ও লিখতে অনেকে ভয় পান। কিন্তু সাংবাদিকদের এসবের বিরুদ্ধে ভয় না পেয়ে সোচ্চার হতে হবে। মনে রাখতে হবে এ সরকারই শেষ সরকার নয় বা তারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। জাতিকে দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে গণমাধ্যমে বিরাট পরিবর্তন আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে এম আব্দুল্লাহ বলেন, গত ১২ বছরে দেশে ৪২জন সাংবাদিক খুন, হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার ও অসংখ্য সাংবাদিক জেল, জুলুম ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, সসম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রুহুল আমিন গাজীকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।তিনি বলেন,সাংবাদিকরা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। উল্টো হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। শিগগির আমরা রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেব।
বিএফইউজের মহাসচিব
নুরুল আমিন রোকন বলেন,পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী যখন যার অপকর্ম, দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায় তখন তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এসব হামলায় কখনও কখনও সাংবাদিকদের প্রাণ দিতে হয়। সাংবাদিকদের ওপর অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নির্যাতনের ঘটনা কমছে না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আগ্রাসীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতন, মিডিয়ার কন্ঠরোধ ও বাক্স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এই কালো আইন।
আমরা মনে করি, এই আইন আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, আমাদের Right to Information ACT এর সাথে সাংঘর্ষিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে তার সাথেও সাংঘর্ষিক। সামগ্রিকভাবে, বাক স্বাধীনতার এটা একটা বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই আইনের ২০টি ধারার ১৪টিই সাংবাদিকদের শাস্তি দেয়ার জন্য প্রযোজ্য এবং জামিন অযোগ্য।তাই এই আইনে অভিযুক্তরা যখন আদালতে যাচ্ছে, তখন তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের এনেতা বলেন জনমত উপেক্ষা করে কালাকানুন দিয়ে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া ফ্যাসিস্ট শাকদের চরিত্র।