সাধু,ঘোড়া রাজনীতির গল্পঃ ১

আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০২২
0

শৈশবে আমাদের পাড়ায় একজন শৌখিন লোক ছিল। নাম শহিদ। সাধ্য ছিল না কিন্তু তাঁর সাহস ছিল, সততা ছিল। ছিল স্বপ্নপুরনের সদিচ্ছা। যখন যা ভালো লেগেছে সেটা না পাওয়া পর্যন্ত নিজের এই ইচ্ছার কোনো ত্রুটি সে রাখতো না। তো একদিন সকালে তাঁর ঘুম ভাঙ্গল ঘোড়ার খুড়ের মুহুর্মুহু আওয়াজে। যেন একপাল ঘোড়া তাঁর কানের পাশ দিইয়ে ধুলো উড়িয়ে চলে গেছে এইমাত্র। বিছানা ছেড়ে দোকান থেকে বাইরে এসে শুনল আসলেই কিছুক্ষন আগে একজন লোক সবুজ নিশান উড়াইয়া ঘোড়া দিয়ে দ্রুত বেগে দক্ষিন দিকে চলে গেছে। এই নিউজে শহীদ তব্দা খাইয়া গেল। শহরে ঘোড়া আসল কই থিকা ! পরদিন সকালে ধবধবে সাদা দুইটা ঘোড়া শহিদের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে গেল। এর পরদিন দেখা গেল বাড়ির সর্বশেষ কড়ই গাছ কাঁটা হচ্ছে। পরের তিনদিন দোকান বন্ধ। চতুর্থদিন সকালে পুরো পাড়ার লোকের ঘুম ভাঙ্গলো শহিদের ঘোড়ার অবিরাম দৌড়া দৌড়ীর খুঁড়ের আওয়াজে। শহীদের বিশ্বাস ঘোড়া পশু হইলেও আসলে এরা মানুষ ! এই ঘোড়া তারে ভালোবাসে ! আমার সামনে সে তাঁর মাথা পাইতা দেয় প্রমান করার জন্য । ঘোড়া তারে সেই সময়ে তাঁর মাথা চেটে দেয় না, ভালোবাসার প্রমান দিতে ভুলে যায়। পরে শহীদ-ই ঘোড়াটাকে দুইটা চুমা দেয় !! তাঁর দোকান ব্যাবসা পাটে গেল। শহীদ ব্যাস্ত ঘোড়ার ডেকোরেশনে……. তাঁর নাম হয়ে গেল ‘ঘোড়া শহিদ’। শহীদ রইলো, রইলো না তাঁর সাধের ঘোড়া ! কবে কোন কুক্ষনে কে যে কিভাবে কখন চুরি হায় তা কেবল ভুক্তভোগী-ই জানে। এই গল্প এখানে-ই শেষ হল।

বাংলাদেশের ঝিনাইদহে খুব সম্ভবতঃ শত বছর ধরে চলে আসা পরম্পরা হিসেবে এখনো ঘোড়া’র রেস হয়। গত প্রায় এক দশক তো হবেই, ঝিনাইদহের ঘোড়া আর কুষ্টিয়া’র লালন মেলার কোনো নিউজ আমি খুবসম্ভবঃ মিস করিনি। অথবা আমার জীবনে ঘোড়া সংক্রান্ত-ই কান্ড-ই বেশি। যেমন ভালোবাসি ঘোড়ামুখী মানুষ। অথবা এ চেহারার মানুষেরা আমার কাছে আরেকটু বেশি অগ্রাধিকার পায়। কেন পায় সে-ই কথা পরে চিন্তা করে লিখব। তো, চলেন ঝিনাইদহকে কল্পনা করে আরেকটা ঘোড়ার গল্প শুনি-

ঝিনাইদহের রসুল মিয়ার দীর্ঘদিনের শখ , সে এই ঘোড়া রেসে একদিন যোগ দেবে। শখের অদম্য সাধন হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় একটা সুন্দর ঘোড়া কেনা হয়েছে রসুল মিয়ার। আজ বিকেলে রেস। রেসের দুরত্ব আনুমানিক ৪০ মাইল। এর মধ্যে গ্রাম আছে তিনটা। বাড়ি কয়েক হাজার। গ্রামের সামনের পুরো রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে পার্টিসিপেন্টদের উৎসাহ দেয়। যে জয়ী হয় লোকে তারে মাথায় তুলে নাচে…………… রসুল সেই জায়গায় নিজেকে দেখে………… ঘোড়া চালানোর আসল ট্রিটমেন্ট কি জিনিস সে তাও জানে………………

রেস শুরুর আধা ঘন্টা আগে সে ঘোড়ার খুঁড় থেকে শুরু করে যাবতীয় যা দরকার সব চেক করেছে। সব-ই ওকে। যে লোকটি এ ঘোড়া বিক্রি করেছে সে নিশ্চিত করেছে, এটা গত রেসে ফাস্ট হওয়া সেই ঘোড়াটাই। তো রসুল এর সিরিঞ্জ থুক্ক নুনু আছে কিনা চেক করে নাই। সে চলে বিশ্বাসে। নিয়ম নীতির এত তোয়াক্কা রসুল করে না। রেস শুরু হতেই রসুলের নতুন ঘোড়া দৌড় দিয়ে সবার আগে আগে চলে গেল। বলা যায় বিদ্যুত বেগে। এক ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে-ই রেস শেষ হল। রসুলের খবর নাই। কি ব্যাপার ? ফলাফল দেয়া যাচ্ছে না। কারন রসুল ও তাঁর ঘোড়া এখনো আসেনি। নিয়ম হলো ফলাফল ঘোষনার আগে সব সাওয়ারিকে রায় মেনে নেয়ার কাগজে সই দিতে হয়। রসুল মিয়া না আসলে রায় হবে না। আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া-ই সেই দিনের মত সবে বিদেয় নিল। সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল যখন দ্বিতীয় দিনেও রসুল বা তাঁর ঘোড়া এলো না।

তৃতীয় দিনে দেখা গেল রসুল ও তাঁর ঘোড়া ফিরে এসেছে। ঘোড়া ক্ষুধার্ত বিরক্ত আর রসুল মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। পরে যা জানা গেল, গল্পটা মোটামুটি এই রকম। এই ঘোড়া আগুন বেগে ছুটে সত্য। কিন্তু গ্রাম দেখলেই সে ঢুঁকে যায় গ্রামে। রাস্তায় থাকে না। এরপর সে চলে তাঁর নিজের মর্জিমত। এই ঘোড়া দিয়া দীর্ঘদিন বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করছে এর মালিক। ঘোড়া আশ পাশের গ্রাম গুলোতেও গেল। ভিক্ষা না দিলে ঘোড়া একদম-ই নড়ে না। সে সব বুঝে। এত অলিগলি চিনে যে, রসুল মিয়া এক সময় তাঁর নিজের জীবনের ভাগ্য ঘোড়ায় সপে দিয়েছে। এই ঘোড়া এখন টানা তিনদিন রেস্টে থাকব। একে এভাবেই ট্রেইন্ড করা হইছে। রেসের শেষ পর্যায়ে এসে রসুল মিয়া এ তথ্য জেনেছে।

এবারের গল্পটা ফেসবুকে পড়া। একটা কুকুর আর একটা হাতি একই সাথে একই সময়ে প্র্যাগ্ন্রন্ট হলো। মাস কয় পরেই কুকুর চারটি বাচ্চা জন্ম দিল। হাতির তরফের কোনো নিউজ নাই। ছয় -সাত মাসের মধ্যেই মেয়ে বাচ্চাগুলি বড় হয়ে গেল। পরের শীতে মায়ের সাথে এরাও বাচ্চা জন্ম দিল। এদের সংখ্যাটা যখন ৪০ এ গিয়ে ঠেকল, দলবল দিয়ে মা কুকুরটা গেল নিজ চোখে হাতিকে দেখতে। দেখল হাতি সবে বাচ্চা প্রসব করেছে। কুকুরটি আশ্চর্য হয়ে বলল, একটা বাচ্চা জন্ম দিতে তোমার ২৪ মাস লেগে গেলো তোমার ? হাতিটি ধীরে সুস্থে জিগেস করল তোমার এই বাচ্চা আর নাতিপুতি গুলোকে লোকে কি বলে ডাকে ?

আরে ভাই কইও না আর। আমগোরে তো কুত্তা কয়-ই বাচ্চাগুলারেও কয় কুত্তার বাচ্চা। এই কুত্তা নামটা সবচে বেশি উচ্চারিত হয় মানুষ নামের কুত্তার মুখ থেকে-ই। আমরা কি কিছু-ই জানি না ! বুঝি না ! সতর্ক করি না ! নাকি মালিকের জীবন বিপন্ন করে নিজের জানটা বাঁচিয়ে চলে যাই। আমরা প্রান দেই…………… আসলে ভাই, কুত্তার বাচ্চা নামটা ইউজ করে আমাদের সমাজের সেইসবেরা …………… কাজটা পৈশাচিক। পৈশাচিক না ! এইসব পিশাচেরা আবার সে মুখে-ই যাকে তাকে বলে …. বাচ্চা। আমার জবান খোলা থাকলে আমি পাবলিক শুনানি করে দেখিয়ে দিতাম কুত্তাটা আসলে কে !! হাতি মনে করিয়ে দিল, তোমাদের বাচ্চাদের তাহলে …বাচ্চা বলে ডাকে তাইতো ! হা, তাই। এবার তবে দেখো, আমার বাচ্চাকে লোকে কি নামে ডাকে। হাতির বাচ্চা।

আর তোমার দ্বিতীয় কথাটার সমাধান হলো, তুমি তাকে পাবলিক প্লেসে ডিবেটে ডাকো…………… সেখানে সে আসবে যতক্ষন তোমার মুখ বন্ধ থাকবে। যখন তুমি কথা বলবার স্পেস ক্রিয়েট করে নিবে তখন সে তাঁর নাতিপুতি নিয়ে পালাবে। এটা তুমি সময়ের হাতে ছেড়ে দাও। তুমি চল্লিশ না হয়ে আমার মত দুই হও। তখন চাইলে-ই কেউ তোমাকে কুত্তা বলবে না। কারন সে সুযোগ নেই। যেদিন কথা বলতে শুরু করবে, সেদিন যদি তোমার ডাকে সে না আসে তখন আইনত তাঁর কোমরে-ই রশি লাগবে। এইসবেরা বার্কিং করে কাস্টমাইজড এরিয়াতে। নিজের গন্ডিতে। শুধুমাত্র এরা এরা-ই। নেড়ি কুকুর যেমন করে ঠিক তেমন…।… বাড়ির উঠানে। পাবলিক প্লেসে এরা আসেনা। একে বলে বাইপোলার ডিজওর্ডার। এটা প্রকৃতির বিধান।

হাতির কাছ থেকে দুই মিনিটে সে জীবনের আসল শিক্ষাটা নিয়ে ফিরল ৪০ সদস্যের দলটা।
এবার বলি, যারা কষ্ট করে এই লেখাটা পড়েও কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না, তাদের বলি- আমি যা বলার পাবলিকলি বলি। প্রশ্ন করেন, এ গল্পে সাধু কই ? উত্তর হলো, নাই। দুনিয়াজুড়ে নামে সাধু আছে, গালগল্পে সাধু আছে, ধর্মাচরনেও সাধু আছে। বাস্তবে তা নাই।

আর রাজনীতি ? এইটা হইলো সাধু রাজ্যে সাধু সঙ্গে থেকেও অবিরাম প্র্যাগনেন্সি সয়ে যাওয়া।