সারাদেশে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে : শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করছে — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২১
0

দেশব্যাপী জেলা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি’র উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে ও গুলিবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন এর রাজনৈতিক কর্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, আজ (মঙ্গলবার) এবং গতকাল বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলা, পুলিশের গুলিবর্ষণ, নেতাকর্মীদেরকে আহত ও গ্রেফতার করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তি দাবি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।

এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পুলিশি নির্যাতনের বর্ননা তুলে ধরেন।

নওগাঁয় জেলা বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৫০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। পুলিশের গুলিতে নওগাঁ জেলা মহিলা দল নেত্রী কহিনুর ইসলাম মিলি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে মিছিলের জন্য বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হওয়া বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যাক নেতা-কর্মীর ওপর পুলিশ গুলি ও লাঠিচার্চ করে। প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী পুলিশের এই নির্মম আক্রমণে জেলা ছাত্র দলের সভাপতি মারুফ মিয়া, সহ-সভাপতি সাঈদ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নিশাত, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, রুবেল মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান পার্নেল, সদর থানা যুবদলের যুগ্ম আহŸায়ক এমদাদ হোসেন, পৌর যুবদলের আহŸায়ক আলমগীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নঈম সহ ৪০ জন নেতা-কর্মী গুলি বিদ্ধ ও আহত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা পুলিশের প্রহরায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কার্যালয় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
পাবনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। রাজশাহী ও নাটোরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে।

পটুয়াখালীতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়ে ৩ জন নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত ও নয়জনকে গ্রেফতার করেছে।
ভোলা জেলায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশী ব্যাপক বাধা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।
বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ বাধা দিয়েছে।
ঝালকাঠিতে পুলিশ ও র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞায় বিএনপির মিছিল কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

বরগুনায় পুলিশ জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে, কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জে গতকাল চারশো নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয় পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে এবং জেলা বিএনপি’র সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশী হামলা ও বাধার কারণে কর্মসূচি পন্ড ও অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সিদ্ধিরগঞ্জে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন, বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম রবি, রাজুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের নামে ছয়টি বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জে গতরাতে বিএনপির ৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ময়মনসিংহে পুলিশ বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভোর থেকে দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের জমায়াতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতা-কর্মীদেরকে আহত করেছে। নিষেধাজ্ঞা ও হামলার মুখেও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া গতকাল দেশব্যাপী মহানগর পর্যায়ে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর মহানগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি’র বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়। চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীর দেউড়িতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়, মহানগর আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, তার পিএস মারুফুল হক চৌধুরী, পাঁচলাইশ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ আলী, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানা, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা লিটা, রিনা খানসহ ২০জন নেতা-কর্মীকে আটক এবং পুলিশ গুলিবর্ষণ ও বেধড়ক লাঠিচার্জের মাধ্যমে ৪০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করে। মারাত্মক আহত নেতা-কর্মীরা হলেন-নগর যুবদল নেতা তৈয়ব আলী, আনিসুজ্জামান, আব্দুর রহিম, মোঃ হেলাল, সাহাবুদ্দিন সাবু, শাহেদ তৈমুর, মঞ্জুর আলম, মোঃ ইলিয়াস প্রমূখ। খুলনা মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশের শেষ মুহুর্তে পুলিশ চতুর্দিক থেকে বিনা উস্কানীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ ও হামলায় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ নেতৃবৃন্দদের গ্রেফতার করার পাঁয়তারা চালায়। দীর্ঘক্ষণ নেতা-কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। খুলনা মহানগরীর ৯জন নেতাকর্মী পুলিশের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। ময়মনসিংহ মহানগরীতে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

প্রতিবন্ধকতার মুখে নতুন বাজারে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করে নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার মূহুর্তে পুলিশ হামলা চালিয়ে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান-এফ আই ফারুক, ৩২ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা-এ্যাড. ওয়াসিম, ছাত্রদল ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার আহবায়ক-ইমন চৌধুরী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব-গোবিন্দ রায়, যুবদল নেতা-আলী ও স্বপনকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এখানে পুলিশ মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক-আবু ওয়াহাব আকন্দসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদেরকেও আটক করার পাঁয়তারা চালায় এবং হেনস্তা করে। গাজীপুর মহানগরীতে মেট্রো থানা বিএনপির মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালায় ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে, এতে তিন জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়।