সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন নিয়ে আবারো বিএনপি ও আ’লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মারামারি ,আহত

আপডেট: মে ৩, ২০২৩
0

ডেস্ক রিপোর্ট:
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আবারো বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোল করেছেন।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পরস্পবিরোধী স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে একজন আইনজীবী অহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল অভিযোগ করেন, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হামলায় আইনজীবীর মিয়া মো: আতাউর রহমান আহত হয়েছেন।

আইনজীবীরা জানান, বেলা দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোট চোর, ভোট চোর স্লোগান দেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও পাল্টা স্লোগান দেন। তারা ব্যালট পেপার চোর বলে স্লোগান দেন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানের একপর্যায়ে ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোল শুরু হয়। এতে আদালত অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইনজীবীদের ঠেলাঠেলির মধ্যে পড়ে একজন আইনজীবী আহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুপুর পোনে ২টার দিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা স্লোগান দিয়ে সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে থেকে চলে যান। তারা আদালত সুপ্রিম কোর্ট বার ভবন থেকে অঙ্গনে বিক্ষোভ করেন। অপর দিকে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে শান্তি সমাবেশ করেন।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল অভিযোগ করেছেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হামলায় আইনজীবীর মিয়া মো: আতাউর রহমানসহ ৮ থেকে ১০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তারা এসে খোকন-কাজলের নেতৃত্বে হামলা করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর সহিংসতা এক কথা নয়। সীমা ছাড়িয়ে যাবেন না।

তিনি বলেন, আমরা বসে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

অন্যদিকে জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল আওয়ামীলীগপন্থী আইনজীবী ও বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলালের এর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কজলের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে আব্দুন নুর দুলাল যে কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। উনি (আব্দুন নুর দুলাল) তো একজন বিবেক সম্পন্ন মানুষ না। তিনি নিলর্জ না হলে উনার মতো একজন মানুষ একবার ব্যালটবাক্স ছিনতাই করে সম্পাদক হয়েছে, আর এবারতো ভোটই হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। তবে, হ্যা সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দি খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কজল উপস্থিত ছিলেন, আমাদের ফোরামের মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এটা ছিল সম্মিলিত সমাবেশ।

কামরুল ইসলাম সজল বলেন, বরং আমরা যখন মিছিল নিয়ে দোতলা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, হামলা তো আমরা করিনি তারাই করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখুক হামরা কারা করেছে, তা হলেই হবে।

আইনজীবী ফোরাম ও এডহক কমিটির বিক্ষোভ, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির মানববন্ধন: ‘ভোট ডাকাতি ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে’ বুধবার আদালত অঙ্গনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সাধারণ সদস্যদের তলবি সভায় গঠিত এডহক কমিটির নেতারা একত্রে সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ করেছেন। অপরদিকে ১৫ ও ১৬ মর্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে এবং সমিতির অফিস দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটি। বেলা ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে মানববন্ধন শেষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও এডহক কমিটির নেতাদের সাথে তারা বিক্ষোভে অংশ নেন।

দুপুর ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও এডহক কমিটির বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে অংশ নেন আইনজীবী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, মোহাম্মদ আলী, মো: আক্তারুজ্জামান, মোরশেদ আল মামুন লিটন, মো: কামাল হোসেন, নাসরিন আক্তার, শামিমা সুলতানা দিপ্তী, মাহবুবুর রহমান খান, মাহমুদ হাসান, মো: জহিরুল ইসলাম সুমন, মাহফুজুর রহমান মিলন, কেআর খান পাঠান, মো: শহিদুল ইসলাম সপু, মো: মাকসুদ উল্লাহ, মাসুদ রানা, আশিকুজ্জামান নজরুল, গোলাম মোক্তাদির উজ্জল, মো: সেলিম মিয়া, মো: কাইয়ুমসহ কয়েক শ’ আইনজীবী এতে অংশ নেন।

অপর দিকে এডহক কমিটি ও সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির নেতা শাহ আহমেদ বাদল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, এবিএম রফিকুল হক তালকুদার রাজা, মির্জা আল মাহমুদ, জুলফিকার আলী জুনুসহ আইনজীবীরা সম্মিলতভাবে বিক্ষোভে অংশ নেন।

বিক্ষোভ শেষে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা আইনজীবীরা একই মোহনায়। আমরা সবাই আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। আমরা সবাই ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ১৫ ও ১৬ মর্চ সুপ্রিম কোর্ট বারে কোনো নির্বাচন হয়নি। তারা সুপ্রিম কোর্টকে, আইনজীবীদেরকে এবং আদালত অঙ্গনকে কলঙ্কিত করেছে। আজ আমরা স্বাধীন বারের জন্য ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। ভোট ডাকাতদের থেকে সুপ্রিম কোর্ট বারকে মুক্ত করতে হবে।

এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক বিবেকবান আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বারকে বাঁচানোর জন্য চলে আসবে। আগামীতে আরো অন্যান্য সংগঠন মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনই নিরাপদ নয়।