৩০ লক্ষ কওমি আলেমের জন্য একজন নূর হোসাইন কাসেমী খুবই প্রয়োজন: এনডিপি চেয়ারম্যান

আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২১
0

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কে এম আবু তাহের বলেছেন, দেশের ৩০ লক্ষ কওমি আলেমের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও সঠিক নির্দেশনা লাভের জন্য একজন নূর হোসাইন কাসেমীর খুবই প্রয়োজন। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)কে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন গভীর আল্লাহওয়ালা বাযূর্গ আলেম, একনিষ্ঠ ইবাদতগুজার, তেমনি তিনি ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ।

তাঁর মাঝে সকল গুণের সমাহার ছিল। তিনি যেমনি তৌহিদী জনতার প্রেরণার বাতিঘর ছিলেন, তেমনি উলামায়ে কেরামের ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে ছিলেন। তিনি কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলতেন এবং মেপে মেপে কথা বলতেন। তাঁর কোন বক্তব্য থেকে প্রতিপক্ষ খুঁত ধরার জন্যও কোন শব্দ খুঁজে পেত না। তাঁর মতো বহুগুণের সমাহার বিশিষ্ট এমন আলেম আমি কোথাও দেখিনি।

.
আজ (৯ এপ্রিল) বৃস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এনডিপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমানে দেশের আলেম সমাজ কঠিন এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করছেন। নিজেদের মধ্যে যেমন সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়, তেমনি বিভিন্ন ইসলামবিদ্বেষী মহলও তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনা করে যাচ্ছে। আলেম সমাজকে জনবিচ্ছিন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই এমনটা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় উলামায়ে কেরামের সীসাঢালা ঐক্য ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবই জরুরী। পাশাপাশি উলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন নূর হোসাইন কাসেমীর খুবই প্রয়োজন।
.

কে এম আবু তাহের সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও মিডিয়ার প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, উলামায়ে কেরাম নায়েবে রাসূল। তাদেরকে হয়রানী করে আল্লাহর গযব ডেকে আনবেন না। এমনিতেই জাতি করোনা মহামারি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করছে। পবিত্র কুরআন-হাদীসের ধারক-বাহক নায়েবে রাসূল আলেমদেরকে হয়রানি করলে, তাঁদের মনে কষ্ট দিলে কোটি কোটি তাওহিদী জনতাও কষ্ট পান। তাদের সকলের বদদোয়ায় দেশ ও জাতির উপর মহামারির মতো আরো কঠিন বিপদ আল্লাহ নাযিল করার আশংকা আছে।

.
এনডিপি চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ৩০ লক্ষ আলেম আছেন। তারা হালাল খাচ্ছেন এবং হালাল পথে চলছেন। পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে তাঁরা নিবেদিত। পবিত্র কুরআন-হাদীসের ভাষ্যমতে যারা হালাল খাবে, হালাল পথে চলবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, তারা যে দোয়া করেন, তা কবুল করতে আল্লাহ দেরি করেন না। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলব, ওহে সরকার, আপনি আল্লাহর কুরআন মানেন ও বিশ্বাস করেন। আল্লাহ একজন আছেন, এটা সত্য বলে বিশ্বাস করেন।

তাহলে কীভাবে আপনি বেইনসাফী কাজ করেন? কী করে নায়েবে রাসূলগণকে হয়রানী করেন? কী করে ভোটাধিকারসহ গণমানুষের অধিকার হরণ করেন? আল্লাহকে ভয় করুন। জুলুম ও বেইনসাফী থেকে বিরত হোন এবং গণমানুষের অধিকার হরণ বন্ধ করুন। এতে দেশ ও জাতি দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাবে এবং কিয়ামতের কঠিন বিচারের দিন আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিষ্কৃতি পাবেন।
.
বিবৃতিতে কে এম আবু তাহের আরো বলেন, যেখানে আল্লামা মামুনুল হক সুস্পষ্টভাবে কসম খেয়ে বলেছেন আমার বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে আমি এসেছি, সেখানে বুঝা যায় ৩০ লক্ষ আলেমের পক্ষে কসম করার পর আর যাছাই বাছাই এর প্রয়োজনীয়তা থাকে না। একজন শীর্ষ আলেমের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেললে ওই রাষ্ট্রের প্রতি আল্লাহর গযব নাযিল হয়ে যায়। আমি মনে করছি, আল্লামা মামুনুল হকের নাগরিক অধিকার সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তার ব্যক্তি অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এটা গুরুতর অন্যায় ও একজন নায়েবে রাসূলকে হয়রানীর শামিল। সুতরাং সংশ্লিষ্ট সকলে আল্লাহর ক্রোধ ও আযাব ডেকে আনা থেকে বিরত হোন।
.
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে কিছু মতলববাজ ও স্বার্থান্ধ মানুষ আধিপত্যবাদি অপশক্তির হয়ে কাজ করলেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস এখনো আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে সকল রক্তচক্ষু ও শকুনি থাবা থেকে রক্ষায় বুকে আঁকড়ে ধরার জন্য ৮০ ভাগ মানুষ প্রস্তুত আছেন। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আপনারা বিদেশিদের দালালী ছেড়ে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করুন। অন্যথায় গণমানুষের ঐক্যবদ্ধ জোয়ারে সকল ষড়যন্ত্রকারী খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে সময় লাগবে না।
.
এনডিপি চেয়ারম্যান বলেন, এই বাংলাদেশে অহিংস রাজনীতি সৃষ্টি করতে হবে। সহনশীল সমাজ ব্যবস্থাকে হুমকিমুক্ত রাখতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষকে দূরে সরাতে হবে। গুটি কয়েকজন মানুষের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। দেশবাসীকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
.
তিনি বলেন, এদেশের ৮০ ভাগ জনগণ নিম্নবিত্তের খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কূটকৌশলের মাধ্যমে তাদের মুখের খাবার ও অধিকার কেড়ে নিবেন না। তাদের সাথে বেইনসাফী করবেন না। গরীব মানুষকে কষ্ট দিয়ে ও অধিকার কেড়ে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবেন না। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় সযত্ন মনোযোগী হওয়ার জন্য সরকার, প্রশাসন, শিল্পপতি ও সম্পদশালীদের প্রতি এনডিপির পক্ষ থেকে আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরে ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সরকারের দায়বদ্ধতা ও অঙ্গিকার রয়েছে। এই দায়বদ্ধতা ও অঙ্গিকার ভুলে গেলে বিপর্যয় থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না।