‌’জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২ : অর্থমন্ত্রীর ভানুমতির খেলা’

আপডেট: জুন ১৬, ২০২১
0

জাফরুল্লাহ চৌধুরী

রাস্তার মোড়ে বানর নিয়ে বাজীকরের ভানুমতির খেলা সবই উপভোগ করে, খুশি হয়ে দু’চার টাকাও ছুড়ে মারে, খেলা শেষ হবার পর আগের বাস্তবে ফিরে আসে, দুঃখভরা মনে বাড়ী ফেরে।

২৫০ বছরেও মৃত লর্ড মেকলে সাহেবের কালো ইংলিশম্যান বানানোর স্বপ্ন থেকে ভারতবাসী মুক্তি পেলোনা। কালো ছোট সুটকেশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংসদে প্রবেশ করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে গতানুগতিক বাজেট পড়ে শুনিয়ে হাত তালি নিয়ে খুশিমনে পড়া শেষ করেন। বাজেটে কার জন্য কি থাকবে তা নির্ভর করে অর্থমন্ত্রীর সামাজিক শ্রেণী চরিত্রের উপর। বর্তমান অর্থমন্ত্রী জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২ জাতিকে সংসদে পড়ে শুনার পূর্বে তার পার্টির মধ্যে সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ করেছেন কি? প্রস্তাবিত বাজেট ৭ দিন ধরে জনগনকে দেখতে দিলে, পড়তে দিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দিলে কি সংবিধান অশুদ্ধ হয়ে যাবে? জনগণের মতামত, প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদে পেশ করলে বাজেটের গুরুত্ব বাড়তো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবটা বিবেচনা করে দেখুন।

ক. অর্থমন্ত্রীর পেশা ও শ্রেণীচরিত্র

অর্থমন্ত্রী গুণী চাটার্ড একাউন্টটেন্ট। তিনি বড় ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট হাউজের হিসেব পত্র ঠিক করে দিয়ে থাকেন। তাই বাজেটে তিনি মূলত: ব্যবসায়ী ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের খুশি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর পেশা ও শ্রেণীচরিত্র হেতু আমলা তোষন ও আমলাদের খুশি করতে মন্ত্রীমহোদয় পিছপা হননি। আমলারা এদেশের সরকার চালায়, একেক সচিব ঢাকায় বসে জেলা নিয়ন্ত্রন করেন নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমলাদের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ১১.৮% এবং তাদের পেনশন বাবদ ৭.৭% রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ব্যয় আমলাদের জন্য। চলতি বৎসরে আমলাদের জন্য ব্যয়িত হয়েছে ৫৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আমলাদের গাড়ী কেনার জন্য বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয় এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মাসিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। ঋণের টাকায় কেনা গাড়ী ৬৫% সরকারী কর্মকর্তা ব্যবহার করেন না। উবারে ভাড়া খাটাতে পাঠিয়ে দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। তারা একাধিক সরকারী গাড়ী ব্যবহার করেন। নিজে একটা এবং পরিবার পরিজন দ্বিতীয়টি। মারহাবা, মারহাবা!!

* ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র

খ. কিছু ভাল সিদ্ধান্ত: উপকৃত হচ্ছে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এবং ব্যবসায়ীগণ

১). প্রথমত : দুলাখ টাকার বেশী সঞ্চয়পত্র কিনতে, বাড়ীর নকশা অনুমোদন করতে, সমবায় সমিতির নিবন্ধনে এবং ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে অংশ গ্রহনের জন্য, মোটর সাইকেল, গাড়ী, জায়গা জমি, ফ্লাট কিনতে হলে অবশ্যই ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (TIN) দেখাতে হবে। আরও নিয়ম করা প্রয়োজন যে, প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির টি আই এন নম্বর থাকতে হবে এমনকি আয়কর যোগ্য আয় না থাকলেও কিংবা বেকার হলেও। এজন্য বৎসরে মাত্র দুইশত টাকা টিআইএন (TIN) রেজিষ্ট্রেশন ফি দিতে হবে। গৃহকর্মীদের, রিকশা-ভ্যান চালক, বেবিট্যাক্সি, মোটরগাড়ী চালকদের টি আই এনের জন্য বৎসরে ২০০ টাকা ফি দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে নেবেন বাড়ীর কত্রী ও গাড়ির মালিকগন। কৃষি শ্রমিকদের রেজিট্রেশন করাবেন জমির মালিকরা। এতে প্রায় নতুন দুইকোটি লোক ইনকাম ট্যাক্স নিবন্ধন আওতায় আসবেন যারা আগামী ৫ বৎসরে ইনকাম ট্যাক্স দেবার উপযুক্ততা অর্জন করবেন। ন্যূনতম ফি বাবদ বৎসরে আয় হবে ২০০ টাকা * ২ কোটি = ৪০০ কোটি। ভবিষ্যতে বেকার ভাতা প্রচলন করলে এই পদ্ধতি সুফল দেবে।

২). দেশে বর্তমানে টিআইএন আছে ৬১ লাখ। কিন্তু আয়কর রিটার্ণ জমা দেন ২৫.৪৩ লাখ মাত্র।
বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ হতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে কিন্তু মনোবৃত্তির পরিবর্তন হয়নি। জনগনের আয় বেড়েছে কিন্তু সরকারের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। ফলে হয়রানী, তদবির ও দূর্নীতির ব্যাপক প্রসারে জনগন আয় করের জন্য নিবন্ধিত হতে চায় না। ব্যক্তিগত আয় তিনলাখ টাকার পরিবর্তে ৫ লাখ টাকা অবধি শূন্য আয়কর আওতা আনা যুক্তি সংগত হবে এবং ব্যক্তিগত আয়কর ২০% অধিক হওয়া উচিত নয়।

রাজস্ব বৃদ্ধির সহজ উপায়
বিদেশে বিশেষত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসকারী বাংলাদেশের পুত্র-কন্যারা পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করে বিক্রয় লব্ধ টাকা ‘হুন্ডির মাধ্যমে’ বিদেশে স্থানান্তর করে। অধিকাংশ পুত্রকন্যা সরকারকে ন্যূনতম একটা ট্যাক্স দিয়ে বৈধপথে বিদেশে-আমেরিকা, টাকা নিতে আগ্রহী কিন্তু কোন নিয়ম নেই। সম্পত্তি বিক্রয় লব্ধ অর্থ ১০% ট্যাক্স দিয়ে বৈধপথে বিদেশ নেবার ব্যবস্থা করে দিন।

৩). ছোট ব্যবসার বিনিয়োগকারী নারীদের ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত করে ভাল প্রণোদনা দিয়েছেন। মধ্যবিত্তের গৃহস্থলী ও বসবাসে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উৎপাদনকে ১০ বৎসর ‘ট্যাক্স হলিডে দিয়ে স্বচ্ছ চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন।’

৪). তবে ভ্যাট প্রত্যাহার ভুল সিদ্ধান্ত। স্মরণ প্রয়োজন যে, মূল রাজস্ব আসে ভ্যাটের মাধ্যমে ৩৮.৭%। দ্বিতীয়ত: আয়কর থেকে ৩১.৮%। ব্যবসায়ীদের মিষ্টি কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে উভয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫% রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ নিন। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের চাকুরী দিলে কর রেয়াত ভাল পদক্ষেপ। তবে ১০০ জনের সীমা নামিয়ে ১০ জনে সীমিত করুন। ‘ভ্যাট’ পরিশোধ সময়মত না করলে সরল সুদের জরিমানা সঠিক পদক্ষেপ।

সকল মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর (এনালাইজার, ক্যাথল্যাব, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ডিফিবরিলেটর, ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, সিটি এপারাটাস হাসপাতাল শয্যা: বøাড ব্যাংক, সিরিঞ্জ পাম্প, সার্জিকেল স্টেরাইল গ্লোভস, বায়োসেফটি কেবিনেট প্রভৃতি) উপর সকল প্রকার শুল্ক, অগ্রীম ইনকাম ট্যাক্স (AIT) এজেন্সী ট্যাক্স (AT) প্রত্যাহার করে নিন। সকল আমদানী থেকে অগ্রীম ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহারের জন্য ব্যবসায়ীদের দাবীও বিবেচ্য।

হেমোডায়ালাইসিসের প্রত্যেক রোগীর জন্য একটি ব্লাড টিউবিং ব্যবহার করতে হয়, তার ট্যাক্স ছিল ২৫% তা কমিয়ে ৫% করেছেন, এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কারও বিকল কিডনী সমস্যা হলে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগী সর্বশান্ত হয়ে যায় তিন বৎসরের মাথায়। এ জন্য সকল দরিদ্র বিকল কিডনী রোগীকে প্রতি হেমোডায়ালাইসিসের জন্য ১০০০ টাকা ভর্তুকী দেয়া উচিত। বর্তমানে সরকার একটি ভারতীয় কোম্পানী ‘স্যানডর’ কে প্রতি রোগীর হেমোডায়ালাইসিসের জন্য ২২০০ (দুই হাজার দুইশত) টাকা ভর্তুকী দিয়ে থাকেন বিগত ৫ বৎসর যাবত।

৬). বিকল কিডনীর সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে কিডনী প্রতিস্থাপন (Kidney Transplant)। দেশে প্রয়োজন প্রতিবছর ১০,০০০ (দশ হাজার) কিডনী প্রতিস্থাপন, কিন্তু দেশে প্রতিস্থাপন হয় ২০০ এর অনধিক। বেশীরভাগ রোগী একজনকে সংগে নিয়ে যায় ভারতে, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, আমেরিকাতে। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকা বিদেশে ব্যয়িত হয়। এজন্য মূলত: দায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়। তারা গত দু’বছরে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করছেন না। হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন যে, নিকট আত্মীয় ছাড়াও অনাত্মীয় ব্যক্তি বা বন্ধুর জন্য যে কেউ স্বইচ্ছায় কিডনী দান করতে পারবেন।

ফোয়ারার যন্ত্রপাতির ট্যাক্স ৫% থেকে কমিয়ে ১% করে ভুল করেছেন, প্রকৃতপক্ষে এটা নিদেনপক্ষে ১০% হওয়া উচিত।

গ. চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী: ওষুধের মূল্য কমবে না
১). অপর ভাল কাজ করেছেন স্থানীয় ভাবে ওষুধ শিল্পের প্রায় সকল কাঁচামালের (Active Pharmaceutical Ingredient-API) রেয়াতি সুবিধা দিয়েছেন দেশের্ API উৎপাদিত হলে সকল ওষুধ কোম্পানীকে স্থানীয় API কোম্পানী থেকে কাঁচামাল কেনা বাধ্যতামুলক করুন। অন্য কোথা থেকে আমদানী করা যাবে না। তদোপরি প্রত্যেক API কোম্পানীকে রপ্তানীর জন্য আগামী ৫ (পাঁচ) বৎসর ২৫% নগদ প্রণোদনা (Cash Incentive) দেয়া প্রয়োজন বিশেষত: ভারত ও চীনের উৎপাদক কোম্পানীর সাথে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ অর্জনের জন্য।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সহ ৯২টি দেশে ওষুধের কাঁচামাল রপ্তানীর যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানী করে, ওষুধের কাঁচামাল রপ্তানী করে না।

২). মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যান্সার ও হৃদ রোগের কতক ওষুধে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছেন, এতে ওষুধ প্রস্তুতকারকরা লাভবান হবেন, কিন্তু ওষুধের দাম কমবে না। ফলে সরকারের সৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। ওষুধের মূল্য জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হলে ১৯৮২ সনের জাতীয় ওষুধ নীতির অধ্যাদেশের মূল্য নিয়ন্ত্রন নিয়মাবলী যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমানে ১১৭ টি ওষুধ, ভ্যাকসিন, পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী ছাড়া অন্য সকল ওষুধের মূল্য ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানী সমূহ নিজেরা সরাসরি স্থির করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানিয়ে দেন।’ ওষুধ প্রশাসন কেবল মুসক (ভ্যাট) যুক্ত করে ওষুধের মূল্য ঘোষনা করেন। এই পদ্ধতি মূল্য নির্দেশক (Indicative Price) পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। ১৯৮২ সনের জাতীয় ওষুধনীতি যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করলে ওষুধের খুচরা মূল্য (Maximum Retail Price) ন্যূনতম পক্ষে ৫০% কমে আসবে। মনস্থির করুন, কার স্বার্থে আপনার বাজেট (২০২১-২২) প্রণয়ন? আপনার পেশা ও শ্রেণীচরিত্র সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে, বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি তো?
৩). আপনার অপর ভাল কাজ হলো জনগনের পুষ্টিবৃদ্ধির জন্য সকল পোল্ট্রি, ডেইরী ও ফিসফিডের প্রয়োজনীয় উপকরন সমূহকে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছেন।

ঘ. তিনটি শুল্ক দরের পরিবর্তে একটি শুল্ক স্থির করুন, দূর্নীতি কমবে
১). বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত অনেকগুলো কাঁচামালের শুল্ক কমিয়েছেন এসআরও ১১৪/২০২১ এর মাধ্যমে। এখানে একটি বড় ভুল করেছেন, কয়েক ক্ষেত্রে ০%। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫%, কয়েক ক্ষেত্রে ১৫% শুল্ক ধার্য করেছেন, এতে সমস্যা হবে, দূর্নীতি হবে। তিনটির (০%, ৫%, ১৫%) পরিবর্তে একটি শুল্ক দর স্থির করে দিন।
২). সকল আমদানীকৃত খাদ্য ও বিকারক (Reagents) চিনিযুক্ত কনফেকশনারী, সাবান বাদে এক শুল্ক দর করে দিন। আপনি স্থির করেছেন সাবানের শুল্ক ২৫% এবং কনফেকশনারীতে ৬০%। সুগন্ধি সাবান, বিদেশী কনফেকশনারী শুল্ক ও সম্পুরক সমেত ২০০% করুন। এগুলো দেশে তৈরী হয়, আমদানী অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা মাত্র।
২০০% শুল্ক ও সম্পুরক কর প্রয়োগ হওয়া উচিত আমদানীকৃত টাইলস, মার্বেল ও বিদেশী মদ এবং সিগারেটের উপর। মদের উপর মাত্র ২৫% কাষ্টমস ডিউটি কোন ক্রমে গ্রহনযোগ্য নয়।
৩). ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রীর রেগুলেটরী ডিউটি ১০%, ১৫%, ২৫% এর পরিবর্তে সকল ক্ষেত্রে একটি দর হওয়া উচিত। ফলে হয়রানী কমবে, দূর্নীতি রহিত হবে।

৪). মোপেড ও এ্যাম্বুলেন্সের আমদানীতে শুল্ক প্রত্যাহার করে মধ্যবিত্তদের খুশি করেছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে একাধিক শুল্কের পরিবর্তে সকল ক্ষেত্রে ২০% বা ২৫% একদর স্থির করুন। সকল প্রয়োজনীয় মেডিকেল যন্ত্রপাতি যুক্ত ২০০০/৩৫০০ সিসির শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এ্যাম্বুলেন্স আমদানীতে শুল্ক কমিয়ে ২০% স্থির করুন।

৫) শিল্পের কাঁচামালের একাধিক রেয়াতি শুল্ক ০%, ৫%, ১০%, ১৫% প্রভৃতি থাকায় ব্যবসায়ীদের প্রতি কনসাইনমেন্ট খালাসের সময় হয়রানী, দূর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘ সূত্রিতা ও অফিসারদের সাথে সি এন্ড এফ এজেন্টের দরাদরির সুযোগ থাকছে। সহজ সুরাহা হলো এক শুল্ক দর করে দেয়া ৫% বা ১০%।

৬). ফ্লোমিটার যুক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারে সকল প্রকার অগ্রিম আয়কর, শুল্ক সম্পুরক ও অন্যান্য সকল করমুক্ত করে ব্যাপক আমদানীর সুবিধা করে দিন।

ঙ. মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিকভাতা বৃদ্ধি
লক্ষ অনধিক মুক্তিযোদ্ধার মাসিক ভাতা ১২০০০ (বার হাজার) টাকা থেকে বাড়িয়ে মাসিক ভাতা ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা করে আপনি ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে, মুক্তিযোদ্ধারা যখন দেখবেন করোনার কারনে চাকুরী, ব্যবসা চ্যুত তার পাশের বাড়ীর দরিদ্র পরিবার সপ্তাহের কোন না কোন দিন প্রায় অনাহারে দিনপাত করেছে, তখন কি মুক্তিযোদ্ধা আহার গ্রহণ করতে পারবেন?

চ. কৃষকদের প্রতি নজর দিন
কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এক লাখ কৃষকদের জন্য ২৫ কোটি রেখেছেন। মনটা বড় করুন। নিদেন পক্ষে ৫ লাখ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ, কফি, কাজু বাদাম, হলুদ, আদা পাহাড়ী এলাকায় চাষাবাদ প্রণোদনা বাবদ ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিন। দেশীয় উৎপাদন থেকে শিশু খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকারী শিল্পকে ১০ বৎসরের করমুক্ত সুবিধার প্রস্তাব করেছেন। অথচ সরাসরি কৃষকের পানিসেচ, সার ,বীজে পর্যাপ্ত ভর্তুকী, কৃষি উৎপাদন ও বাজার জাত করার জন্য সমবায় সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট ভাঙ্গার কোন পদক্ষেপের উল্লেখ নেই।

ছ. সরকারের একটি ন্যাক্কার জনক বিধান, অপরটি আনন্দের
১). হাসিনা সরকারের দুইটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা- প্রথমটি কান্নার, পুলিশকে কবজার মধ্যে এনে, জনগনের স্বার্থবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের মামলার ভয় দিয়ে জনগনের কন্ঠস্বর রুদ্ধ করেছেন, হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিগনও বাক্যহারা হয়ে গেছেন।
দ্বিতীয়টি হাসিনা সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গ্রামবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করায় বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগী জনসংখ্যা ৯৯ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
২). অর্থমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন দারিদ্রের হারের ব্যাপারে, দরিদ্রতা কমে ২০.৫ শতাংশ হয়নি, বরং কোভিড প্রভৃতির কারণে ৪২% উন্নীত হয়েছে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা অন্যূন ২ কোটি বেড়েছে। কুইক রেন্টালের দূর্নীতির ব্যাপারে একটি শব্দ ও বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আওয়াজ তোলেননি।
বাংলাদেশ শিল্প ও বনিক সমিতি (এফবিসিসি আই) সভাপতি জনাব জসিম উদ্দিন প্রস্তাবিত বাজেটকে তিনি ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব’ বলেছেন। অর্থমন্ত্রী বিড়ি সিগারেট, মদ, গুল ট্যাক্স না বাড়ানোতে এবং কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোতে ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছেন। এনার্জী পানীয়তে ৫০% এবং মদে ২০০% শুল্ক ধার্য করা ন্যায় সংগত হবে। সিগারেটের স্তর অনুসারে ১০ শালাকার মূল্য ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বিড়ি ২৫ শলাকার মূল্য ৫০ টাকা স্থির করুন, সংগে একই সম্পুরক শুল্ক ৬৫%। বাজার, লঞ্চ ঘাট, ষ্টেশনে, পার্কে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত প্রাঙ্গন এবং সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আইন করতে হবে, ন্যূনতম জরিমানা ১০০০ (এক হাজার) টাকা অনাদায়ে ৭ দিন জেল হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী, আদালত ও অন্য সকল পদে ধূমপায়ীদের নিয়োগ আইন করে রহিত করা বাঞ্ছনীয়।

ছক-১: অর্থমন্ত্রীর বরাদ্দ বনাম জনগনের প্রত্যাশিত বরাদ্দ
সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ হয়েছে আমলাদের জন্য জনপ্রশাসনে, হাজার হোক তারা তো একটি বিনা ভোটের অগণতান্ত্রিক সরকার টিকিয়ে রেখেছেন সব রকম সার্টিফিকেট যোগাড় করে আনছেন। জনপ্রশাসনে ন্যূনতম ১/৩ অংশ বরাদ্দ কমান। সকল সিনিয়র সচিবদের অবসরে পাঠান। গাড়ীর জন্য মাসিক ব্যয় কোন ক্রমে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার অধিক নয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রদের শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পূর্বে ৬ মাস বাধ্যতামুলক সামরিক প্রশিক্ষন নিতে হবে। সামরিক বাহিনীর সকল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং মেডিকেল কলেজের অধ্যয়নের ব্যয় বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য হওয়া বাঞ্ছনীয়, কম নয়। সুশৃংখল বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ ন্যূনতম পক্ষে দ্বিগুন করা প্রয়োজন। জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, জ্বালানী বিদ্যুৎ ও যাতায়াত খাতে বরাদ্দ কমান।

জ. ১). চেকের মাধ্যমে লেনদেন একটি আধুনিক পদক্ষেপ এবং দূর্নীতি নির্ণয়ে সহায়ক। তবে কেবল ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশী লেনদেন চেকে কেন? ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার বেশী সকল লেনদেন চেক মারফত এবং সবার বেতন Salary Disbursement একাউন্টের মাধ্যমে হওয়া বাঞ্ছনীয়। গণস্বাস্থ্য এই পদ্ধতি অনুসরন করছে ১৯৭৩ সন থেকে। এতে পথিমধ্যে রাহাজানি ও তহবিল তছরুপের সম্ভাবনা থাকে না, বলা চলে।
২). বিভাগ অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দে আপনার Pragmatic Approach এর প্রশংসা করতে হয়। রাতের ভোট ডাকাতির ঠুটো জগন্নাথ জাতীয় সংসদ লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক জনগনের প্রতি অন্যায় অবিচার রোধে অক্ষম বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বরাদ্দ প্রায় পূর্বের বাজেটের সমান রেখেছেন। প্রত্যেক প্রবাসী কর্মীর জন্য ৫০ লাখ টাকার জীবন বীমার ব্যবস্থা নিন। মারা গেলে বিনা খরচে শবদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা নিন। পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে (১৭৯১ কোটি) বরাদ্দ কমিয়েছেন এবং হেফাজতে ইসলামের প্রবৃদ্ধি লুকানোর জন্য মাদ্রাসা শিক্ষাকে কারিগরী শিক্ষার সাথে একত্রিত করে দিয়েছেন।

ঝ. সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাঁদাবাজি
বেসরকারী শিক্ষা ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫% কর যোগ করে অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন, অন্যায় করেছেন। সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতীয় পার্থক্য অনৈতিক। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির জন্য রেজিষ্ট্রেশন ফির নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। প্রত্যেক বেসরকারী ডেন্টাল/ ফিজিওথেরাপির ছাত্রকে ৪ বৎসরে রেজিষ্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফি বাবদ প্রায় ৮০,০০০ টাকা দিতে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রাইভেট ক্লিনিক, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র, দন্ত ও এক্সরে সেন্টার থেকে বার্ষিক রেজিষ্ট্রেশনের নামে চাঁদা আদায় করে থাকে। একবারে ৫ বৎসরের জন্য রেজিষ্ট্রেশন দিলে হয়রানী ও দূর্নীতি কমতো। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সর্বাধুনিক পিসিআর কেন্দ্রের অনুমতি পেতে ৮ মাস লেগেছে। আমাদের অপরাধ তাদের চা, নাস্তা খাবার খরচ দেইনি এবং একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের স্থলে ‘চার ডক্টরেট’ একাধিক বৎসরের অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতিগন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

ঢ. কোভিড পরবর্তী দরিদ্রতা নিরসন ও কর্মসংস্থান
১). কোভিড পূর্ববর্তী ২০% দরিদ্রতা বেড়ে কোভিডের কারনে ৪২% উন্নীত হয়েছে। এ সকল দরিদ্র পরিবারকে ৬ মাস ফ্রি রেশন দেয়া প্রয়োজন। মাসিক ১৫ কিলোগ্রাম চাল, ৬-৮ কিলোগ্রাম আটা, ১০ কিলোগ্রাম আলু, ২ কিলোগ্রাম ডাল, ২ লিটার তেল, ১ কিলোগ্রাম চিনি, ১/২ কিলোগ্রাম লবন, এক কিলোগ্রাম পেয়াজ, রসুন আদা, মরিচ প্রভৃতির মাসিক রেশনের জন্য খরচ হবে ১২০০ টাকা। ছয়মাসে মোট ব্যয় হবে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার অনধিক। আমলাতন্ত্রের (জন প্রশাসনের) বাজেট থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে সহজ পদ্ধতি।

২). ৫০,০০০ রিকশা ও ভ্যান চালককে ২০,০০০ টাকা ৯% সুদে ঋণ দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে রিকশা ও ভ্যানচালক রিকশা/ভ্যানের মালিক চালকে পরিণত করার ব্যবস্থা নিন। এ জাতীয় বিনিয়োগ ৬-১২ মাসে ফেরত আসবে।

৩). সকল নাগরিকের জন্য করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করুন। ব্যবস্থা করতে হবে। ১৮ মাস পূর্বে সিনোভ্যাক ও স্পুটনিক ভি-ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা নেবার পরামর্শ দিয়েছিলাম তখন গ্রহন করলে প্রতি ডোজ ২-৪ ডলারে পেতে পারতেন। এখন ৮ থেকে ২০ ডলার দিয়ে কিনতে হবে। আমি ড. ইউনূসকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে Trips Agreement এর অধীনে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের আওতায় (Compulsary licence) এর সুবিধা নিয়ে নিজেদের ভ্যাকসিন তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলাম। এতে রয়েলটি সহ উৎপাদনে খরচ পড়তো ৫০ সেন্ট থেকে দুই ডলার মাত্র। এই পরামর্শ ও সরকার নেননি।

২ কোটি সোভিয়েট স্পুটনিক-ভি টিকা পাওয়া যাবে ৮ ডলারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কুইক রেন্টাল বাতিল করে দিয়ে যে টাকা সাশ্রয় হবে, তা দিয়ে সকল নাগরিকের টিকার ব্যবস্থা করা যাবে। টিকা মৃত্যু ও সংক্রমন উভয় কমায় এবং কর্মদক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। তদোপরি সুলভ সুদে সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করার নিমিত্তে বিশ্ব ব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে রাজী হয়েছেন। ইউরোপিয়ান ইনভেষ্টমেন্ট ব্যাংক থেকেও ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য সহায়তা পাওয়া যাবে।

১৯৯৪ সনে এক গবেষনায় বিআইডিএসের গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান২ দেখিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে দরিদ্রতা নিরসন না হবার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে আইনের অত্যাধিক চিকিৎসা ব্যয়, ভুল চিকিৎসা, অতিরিক্ত ও অপ চিকিৎসা। পরবর্তীতে বিআইডিএসের বর্তমান মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন ৩ ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডা. জিম ইয়ং কিম ৪ তার ‘Dying for Growth : Global Inequality and the Health of the poor’ বইতে দরিদ্রতার সাথে স্বাস্থ্যের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক উপস্থাপন করেছেন। বিল্ডিং দিয়ে যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মান নির্ণীত হতো তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নোবেল পুরষ্কার পেতেন।

দেশে প্রায় অরক্ষিত ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, প্রায় ৪৫০ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১৪৩৮৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং কয়েকশত জেলা, বিভাগ ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। কেবলমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকজন চিকিৎসকের উপস্থিতি দেখা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে বসবাসকারী ৭০-৭৫% জনগনের ২০% রোগীর ভাগ্যে মৃত্যুর পূর্বেও একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের দর্শনের সৌভাগ্য হয় না।

শুনতে ভাল লাগে যে, অর্থমন্ত্রী সকল সরকারী মেডিকেল কলেজ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল, সকল জেলা হাসপাতালে নেফ্রোলজী ইউনিট ও কিডনী সেন্টার, ৩৩ টি হাসপাতালে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এমসিডবলিওসি (MCWC) মার্তৃ ও শিশু সেবা কেন্দ্র পাশাপাশি বেসরকারী খাতে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরে অন্যান্য সকল জেলায় ১০ বৎসরের কর অব্যাহতির ভিত্তি শিশু ও মার্তৃস্বাস্থ্য, অনকোলজী (ক্যান্সার) প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের ২৫০ শয্যার সাধারন হাসপাতাল এবং ন্যূনতম ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরীর জন্য দশ বৎসর আয়কর রহিত করছেন। কিন্তু এগুলো চালাবেন কারা? আমলাদের ন্যায় নিজের গাড়ী উবারে পাঠিয়ে মত সরকারী চিকিৎসকগন সরকারী হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকে বেসরকারী হাসপাতালে গলাকাটা দরে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে বেড়াবেন না তো?

সরকারী হাসপাতালে সকল চিকিৎসকের সার্বক্ষনিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হলে, কেবল বরাদ্দ বাড়ালে চলবে না, কতকগুলো মৌলিক পরিবর্তন কার্যকর করতে হবে। নিয়ম করতে হবে কোন সরকারী চিকিৎসক কোন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকে কাজ করতে পারবেন না। সকল অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে, হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রাচীর, গভীর নলকুপ, ইলেকট্রিক সাবষ্টেশন, সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নার্স, টেকনিশিয়ান, ডেন্টিষ্ট, ফিজিওথেরাপিষ্ট ও চিকিৎসকদের বাসস্থান, ছাত্রদের জন্য ডরমিটারী, দুজন ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বাসস্থান নির্মান করে ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকাকে নিরাপদ ও আকর্ষনীয় করে তুলতে হবে। বিনা ভাড়ায় বাসস্থান এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসকদের মাসিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা ইউনিয়নে অবস্থান ভাতা দিলে তরুণ চিকিৎসকদের কর্মস্থলে সর্বক্ষণ অবস্থান করতে আগ্রহী হবেন। চিকিৎসকদের পর্যায়ক্রমে ৬ মাস একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে, পরীক্ষা নিয়ে সার্টিফাইড বিশেষজ্ঞ উন্নীত করুন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বক্ষণ সপরিবারে বসবাস সাপেক্ষে মাসে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা নন-প্রাকটিসিং বিশেষজ্ঞ ভাতার ব্যবস্থা আকর্ষণীয় পদক্ষেপ হবে। উল্লেখ্য যে, সরকার আমলাদের মাসিক ৫০,০০০ গাড়ী সংরক্ষণ ভাতা দিয়ে থাকেন।
আগামী দশ বৎসরে ইউনিয়নের লোকসংখ্যা বেড়ে ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার থেকে সত্তর হাজারে) উন্নীত হবে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রাচীর মেরামত, বাসস্থান নির্মাণ, ৩০ শয্যার হাসপাতাল ও সম্প্রসারিত বহি: বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার ৫ শয্যার ঈঈট/ওঈট ‘প্রসবরুম, ল্যাবরোটরী’, ছাত্রদের ডরমিটারী, লাইব্রেরী ও ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা বাবদ প্রায় ২০,০০০ বর্গফুট নির্মাণে প্রায় ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা ব্যয় হবে।

প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের বাসস্থান নির্মাণে ৪ কোটি ব্যয় হবে।
প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্রে একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রেফার করা প্রত্যেক রোগী ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে যাবেন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক কর্মকর্তার মর্যাদা হবে ডেপুটি সিভিল সার্জনের। নবীন চিকিৎসকগন মোটর সাইকেল কেনার জন্য বিনা সুদে ধার পাবেন।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্রের সেবাকে আকর্ষণীয় ও জনকল্যানকর করার লক্ষ্যে একটি মোবাইল এক্সরে, ইসিজি, ইকোগ্রাম, আলট্রাসনোগ্রাম, বায়োকেমিষ্ট্রী, রক্ত পরিসঞ্চালন (Transfusion ) মাইক্রোবায়োলজী, হেমোটোলজী এনালাইজার, কার্ডিয়াক মনিটর, ডিফিবরিলেটর, ভেন্টিলেটর এবং সজ্জিত প্যাথলজী ল্যাবরোটরীতে ৫০ রকমের পরীক্ষা করা যাবে। ব্যয় হবে মাত্র ৪ কোটি টাকা।
কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮০০ বর্গফুটের একটি প্রসব কক্ষ, একটি প্যাথলজী ও রক্ত পরিসঞ্চালন রুম ও রোগীর বিশ্রাম কক্ষ নির্মান বাবদ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যয় হবে বিশলাখ টাকা মাত্র।

সামরিক, পুলিশ, রেলওয়ে ও কারাগার হাসপাতল সমূহকে একত্রিভুত করে সামরিক মেডিকেল কোর (AMC) কর্তৃক পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি হবে, সাশ্রয়ী হবে এবং কারাগার, হাসপাতালে দূর্নীতি বিলুপ্ত হবে।

বর্তমান বাজেটে ২৫০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রকে, ২০০ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ৫০০০ কমিউনিটি ক্লিনিকেল নির্মান ও যন্ত্রপাতি সজ্জিত করুন। দ্বিতীয় বৎসরে বাকী সেন্টার সমূহে নির্মাণ ও যন্ত্রপাতির জন্য বরাদ্দ দিন। প্রতিবৎসর তরুণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ (একশত) কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। সেন্টার সমূহ সচল সক্রিয় হবে।
তবে সকল চিকিৎসক, নার্স, টেকনোসিয়ান, ডেন্টিস্ট, ফিজিওথেরাপিষ্টদের নিয়োগ হবে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নয়।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুন করতে হবে। ৫ লাখ চিকিৎসক সৃষ্টির লক্ষে সকল মেডিকেল কলেজে প্রতিবছর বিশ হাজার ছাত্র ভর্তির প্রয়োজন রয়েছে। সাশ্রয় ও উন্নত শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজের ইউনিট হিসেবে ডেন্টিষ্ট্রী ও ফিজিওথেরাপি পরিচালনা করা যুক্তি সংগত পদক্ষেপ হবে। ছাত্রদের ইউনিয়ন পর্যায়ে রেখে শিক্ষাদান করলে ব্যয় হবে বৎসরে ২০ (বিশ) কোটি টাকা।

ট. সুষ্ঠ গণতন্ত্র সুশাসনের নিমিত্তে

আগামী পনের বৎসরে বাংলাদেশের প্রায় ২৫০ লোকসংখ্যা মিলিয়নে উপনীত হবে। একটি কেন্দ্র থেকে এত বড় দেশ শাসনের চেষ্টা হাস্যকর ও বিপদজনক বটে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে বাংলাদেশ ক্রমে মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিনত হবে। বিগত ১০ বৎসরে গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গেছে, রাতের আধারে আমলা পুলিশরা ভোট ডাকাতি করে ভোট বিহীন নির্বাচনের অপূর্ব (?) উদাহরন সৃষ্টি করেছে পৃথিবীতে।

সুষ্ঠ গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের পূর্বতন জেলা সমূহকে ভিত্তি করে বাংলাদেশকে ১৭ টি ষ্টেট/ প্রদেশে বিভক্ত করা প্রয়োজন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০-৭০ জন ষ্টেট সংসদ নির্বাচিত হবেন। বিরোধী দল থেকে ‘স্পিকার’ ও ন্যায়পাল (Ombudsman) মনোনীত হবেন। ষ্টেট মন্ত্রী সভায় ১০ জন অনধিক মন্ত্রী থাকবেন, তন্মধ্যে ন্যূনতম তিন জন মহিলা। রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন ষ্টেট/ প্রদেশ গভর্নর। পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বানিজ্য, আন্তস্টেট যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিমান ও সমুদ্রবন্দর, আয়কর শুল্ক ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, প্রতিরক্ষা, বর্ডার গার্ড, উচ্চ শিক্ষা ও প্রান্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা (Tertiary Health Care) কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রন করবেন, সুপ্রিমকোর্ট ঢাকায় অবস্থিত হবে। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের আকার ২/৩ কমানো হবে।

প্রত্যেক ষ্টেটে ৫ বিচারপতির একটি হাইকোর্ট থাকবে, দুজন বিচারপতি ডিষ্ট্রিক্ট জজ থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হবেন। সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের নজরদারী করবেন। ষ্টেট রাজধানী, হাইকোর্ট, ষ্টেট সংসদ ও সচিবালয়, নতুন শিল্প বিদ্যালয়, প্রান্তিক হাসপতাল, সংসদ, মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিচারপতি ও সিনিয়র আমলাদের বাসস্থান নির্মানের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ (একশত) একর জমি ভূমি দখল করার প্রয়োজন হবে। বর্তমান জাতীয় বাজেটে ন্যূনতম ১২% বরাদ্দ দিন। ন্যূন ৫০,০০০ জনসাধারন লিখিত ভাবে আবেদন করলে তা অবশ্যি ষ্টেট সংসদে আলোচিত হবে। সকল কর্মকর্তা ও বিচারপতিগন প্রতিবছর তাদের আয়কর রির্টাণ ও সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবেন। সকল কর্মকর্তা, বিচারক-বিচারপতি, সংসদ, ষ্টেট মন্ত্রীবর্গ অবশ্যই অধূমপায়ী ও অন্যান্য আসক্তি মুক্ত হবেন।

ষ্টেটের আভ্যন্তরীন গণপরিবহণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি ও সমবায়, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান এবং লোক সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক ষ্টেট বিশেষ উদ্যোগ নেবে।

চালক, ভ্যান চালক, নৌকার মাঝি, থ্রি হুইলার, বেবিট্যাক্সি চালকই যানবাহনের মালিক হবেন। কৃষিতে মধ্যস্বত্ববোগী ও সিন্ডিকেট প্রথা বিলুপ্ত করা হবে ষ্টেট সরকারের লক্ষ্য। কোর্ট ফি ছাড়া কোন মানহানির মামলা হবে না। মন্ত্রী সংসদ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলে তাতে মানহানি হয় না, তা কৌতুক বলে বিবেচিত হবে । ন্যূনতম ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা কোর্ট ফি দিয়ে মানহানি মামলা করতে হবে।

সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে চার্জসিট বা ফাইনাল রিপোর্ট কোর্টে জমা দিতে হবে । এক বছরের মধ্যে সকল মামলার বিচার সম্পূর্ণ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক শ্রমিকের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং বয়োবৃদ্ধদের পরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। বয়োবৃদ্ধরা প্রাইমারী স্কুলে অবৈতনিক শিক্ষকতা করবেন দৈনিক ২-৩ ঘন্টার জন্য। শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধদের অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। ষ্টেটের কর্মপরিধি ও আয় বৃদ্ধি পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। ষ্টেট/প্রদেশ প্রতিষ্ঠা যুগের দাবী!

তথ্যসূত্র:

১). আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল, জাতীয় বাজেট বক্তৃতা ২০২১-২০২২ অর্থমন্ত্রনালয়, ৩ জুন ২০২১, ঢাকা।

২). হোসেন জিল্লুর রহমান, ক্রাইসিস এন্ড ইনসিকিউরিটি : দি আদার ফেস অব পোর্ভাটি ইন রিথিংকিং রুরাল প্রভার্টি, ১৯৯৫, সেজ, নিউ দিল্লী।

৩). ব