আবার আগুন নিয়ে খেলবে বিএনপি এসব পরিকল্পিত বক্তব্য দিয়ে আ’লীগই দেশে সন্ত্রাস চালাচ্ছে —মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ২২, ২০২৩
0

আওয়ামী লীগ দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন গত কিছু দিন ধরে সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বার বার করে একটা কথা বলছে, অগ্নি সন্ত্রাস হবে, আবার আগুন নিয়ে খেলবে বিএনপি। এটা কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিত একটি বক্তব্য।”
‘‘ তারা(ক্ষমতাসীনরা) করবে সেজন্যই তারা এই কথাগুলো বলতে শুরু করেছে।কিছুটা সফলও হয়ে যাচ্ছে। আমি পত্রিকায় দেখছি যে, বিভিন্ন দূতাবাস থেকে এলার্ট করা হচ্ছে তাদের নাগরিকদেরকে যে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, এখন কনফনট্রেশন হতে পারে। সুতরাং তোমরা একটু সাবধানে থাকবে। কনফোনট্রেশন সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ, কনফোনট্রেশনের ভয় দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ, হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং তারা সন্ত্রাস করছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ রিসেন্টলি ঘটনাগুলো বলছি আমি- খুলনাতে যা করেছে, রাজবাড়ীতে যা করেছে, নেত্রকোনায় যা করেছে, পটুয়াখালীতে যা করেছে।”
‘‘এর কারণটা হচ্ছে একটাই। যে তারা দেখে যে, এই প্রতিবাদকে বন্ধ করতে হলে সন্ত্রাসই একমাত্র পথ। এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনগনের যে দাবি সেই দাবিকে তারা দাবি দিতে চায়।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ এজন্য আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে আহ্বান জানিয়েছি যে, একটা জাতীয় ঐক্যসৃষ্টি করবার জন্যে।”
‘‘ এটা আশার কথা আজকে অনেকগুলো রাজণৈতিক দল, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় ঐক্যজোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আজকে আমাদের সঙ্গে একসাথে যুগপত আন্দোলন করছেন। একটিই লক্ষ্য হচ্ছে, এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে পৌঁছাতে হবে।”
সকল পেশাজীবীদের ভেদাভেদ ভুলে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বনানীর গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলের সভাকক্ষে এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স,বাংলাদেশ(এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘দেশের জ্বালানি খাতে অমানিশা : লুটপাট আর অরাজগতার চালচিত্র’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির মহাসচিব প্রকৌশলী হাছিন আহমেদ।
‘ন্যাড়া বার বার বেলতলা যায় না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গোটা বাংলাদেশকে লুট করে শেষ করে দিয়েছে। আরো পাঁচবছর লুট করতে চায় এবং তারা ভোট চাইতে শুরু করে দিয়েছে। আর বলছে, নির্বাচন তো হবে.. নির্বাচনে আসেন। হাত-পা বাঁধা, লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড নাই, মুখ বন্ধ।ইতিমধ্যে যে খেলা শুরু করে দিয়েছো, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছো,অত্যাচার-নির্যাতন করছো, উতপীড়ন করছো, মামলা-মোকাদ্দমাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
‘‘ আমাদের পরিস্কার কথা- ন্যাড়া বার বার বেল তলা যায় না। সুতরাং এবার বাংলাদেশের মানুষ এই ধরনের কোনো পাতানো নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচন, প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের ভাষায় কুত্তা মার্কা নির্বাচন … এরকম নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ পা দেবে না, এই ট্রাপে, এই ফাঁদে মানুষ পা দেবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা মারামারি করতে চাই, আমরা কনফোনট্রেশন চাই না। আমাদের দাবি মেনে নাও, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নাও, সুন্দরভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হবে।”
‘‘ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দা্বি মেনে নিতে হবে। তত্ত্বাধায়ক সরকার ছাড়া এখানে কোনো নির্বাচন হবে না।”
‘উনি স্বমূর্তি ধারণ করেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন আবার ‍ওয়ায়দুল কাদের সাহেব স্বমূর্তিধারণ করেছেন। কিছুদিন কথা বললেন একটু ভদ্রলোকের মতো। এখন আবার বলতে শুরু করেছেন, প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, প্রতিরোধ করা হবে।”
‘‘ আমি আমার দাবির কথা বলব, রাস্তায় বলব, মিটিং-সভা করে বলব যে, আমি গণতন্ত্র চাই। আমাদের প্রতিরোধ করা হবে। প্রত্যেকদিন শান্তি সমাবেশ করছিলেন তারা। এর সমালোচনা হওয়াতে এখন বলছেন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার তো চেষ্টা করছেন। গত কয়েকবছর ধরে তো এই পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছেন। রাতের বেলা তুলে নিয়ে গেছো নেতাদেরকে, বাড়ি বাড়ি হামলা করেছো, অত্যাচার করেছো, নির্যাতন করেছো, আইন তৈরি করেছো।”
‘সর্বশেষ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঝানু ঝানু বাঘা বাধা সব সম্পাদক তাদের নামেও মিথ্যা মামলা দিয়েছো… তারা কিন্তু ওই ভীত সন্ত্রস্ত। ফিয়ার ফোবিয়া। ফ্যাসিবাদের অন্যতম প্রধান যে হাতিয়ার- ‘টু ক্রিয়েট ফিয়ার ফোবিয়া’ একটা ভয়ের রাজত্ব-সংস্কৃতি তৈরি করে দাও তাহলে তুমি দেখবে ইউ ক্যান রুল।’- বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু‘র সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব কে এস আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, ইউনিভারসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাদা দলের অধ্যাপক লুতফর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, এ্যাবের আশরাফউদ্দিন বকুল, একেএম জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা-ই জামান সেলিম, অধ্যাপক এসএম আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব আলম, শামীম রাব্বী সঞ্জয় বক্তব্য রাখেন।