অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী বান্ধব রাজনীতি ও নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে –শিক্ষামন্ত্রী

আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৩
0
dipu moni

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছেন , ”নারী সর্বোচ্চ পদে থাকলেও নারী নিরাপদ নয়। অগ্রগতিতে নারীদের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারীর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী বান্ধব রাজনীতি ও নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে । ”
আজ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে “অন্তর্ভূক্তিমূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি”- এই শ্লোগানের আলোকে আজ ১৮ মার্চ সকালে ফার্স হোটেল এন্ড রিসোর্টসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ও স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহলা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি এবং সুইডেন এম্বেসীর অ্যাম্বাসাডর মিস আলেকক্সান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ড। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠানের শুরুতে র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া বেগম ও তার দল। সম্মেলনের উদ্ধোধনী ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। উদ্ধোধনীর পরে উদ্বোধনী অধিবেশন সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুস্মিতা আহমেদ। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস। এসময় প্রয়াত সকল বিশিষ্টজনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উেেদ্বাধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিসহ সকল আগত অতিথিবৃন্দকে ফুল এবং উত্তরীয় প্রদানের মাধ্যমে সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, নুতন সমাজ গড়তে হলে অন্তর্ভূক্তিমূলক সংগঠন খুব জরুরি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে নারীর অগ্রগতিতে প্রাপ্তি অনেক। নারীর অধিকারে অনেকদূর এগোলেও সামাজিক কিছু রক্ষণশীলতা আছে। নারী সর্বোচ্চ পদে থাকলেও নারী নিরাপদ নয়। অগ্রগতিতে নারীদের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম হানির মতো সামাজিক ধারণা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। এর আচরণগত দায় পুরুষের। ভাষা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে। নারী পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, নারীর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হলে পুরুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতির জন্য তাদের আত্মবিশ^াস তৈরির জন্য আরো কাজ করতে হবে। সাইবার স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা জোরদার করতে হবে। আমরা এগিয়েছি অনেক অনেক দূর কিন্তু যেতে হবে আরো বহুদূর। নারীর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী বান্ধব রাজনীতি ও নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ও স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহলা খাতুন বলেন, দেশের নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে নারীরা আসলেও এখনো অনেক নারী বঞ্চনার শিকার। জেন্ডার বৈষম্য আছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরো উদ্যোগী ভ’মিকা নিতে হবে। তৃণমূল থেকে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে
তথ্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাংগঠনিক ভাবে জোরালো ভ’মিকা পালন করছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে জোরালো ভ’মিকা নারীর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য কাজ করতে হবে। সাংগঠনিক সক্ষমতার মাধ্যমে এলাকার নারী ও কন্যা শিশুদের অগ্রগতির জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়ার আহ্বান জানান।

সুইডেন এম্বেসীর অ্যাম্বাসাডর মিস আলেকক্সান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ড বলেন,
আজকের সভায় জাতীয় পরিষদের আগত অধিক সংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। তিনি জানান খুলনা, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রামের নারীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করার ক্ষমতা দেখে তিনি বিস্মিত। এদেশের সামাজিক প্রথা, বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক রীতিনীতি কে চ্যালেঞ্জ করে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সক্ষমতা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রয়েছে। বাংলাদেশ নানা অগ্রগতির পরও নারীর পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এসডিজি রিপোর্ট অনুসারে নারীদের কাজ হারানোর হার বাড়ছে, বিনাপারিশ্রমিকে কাজের বোঝা বাড়ছে। এজন্য বঞ্চিত নারীদের কন্ঠস্বরকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জোরালো ভুমিকা রয়েছে। তিনি আশা করেন সংগঠন এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে যাতে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে থাকা বৈচিত্রকে ধারণ করে আগামীতে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন,২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলনের পর প্রথম জাতীয় পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন এই সভার মাধ্যমে গত এক বছরের কাজের প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং মূল্যায়নের পাশাপাশি বর্তমানে নারীর অগ্রযাত্রার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নারী আন্দোলন ও সংগঠনের জন্য চিহ্নিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূগুলোর উপরে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে সুপারিশ গৃহীত হবে। তিনি বলেন নারী আন্দোলন মনে করে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার পূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে টেকসই করতে হলে মূল লক্ষ্য হতে হবে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করণ। এলক্ষ্যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নারী নেতৃত্ব তৈরি, সিডও সনদ বাস্তবায়নসহ সকল আন্তর্জাতিক সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারণ থেকে তৃণমূল সহ সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীল উদ্ভাবনীকর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,
নারী অধিকারের ও বৈষম্য দূরের লড়াই নারীকে সাথে নিয়েই করতে হয়ে। ধর্মান্ধগোষ্ঠীর দাপট আছে শিক্ষা, প্রযুক্তিতে, সামাজিক মাধ্যমে। শিক্ষা আন্দোলন আমাদের গড়ে তোলা জরুরি। নারী আন্দোলনের ক্রমান্বিত ধারা আছে। বেগম রোকেয়ার সময় থেকে আজকের নারীর অবস্থানে অনেক পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য থেকে। সমাজ রক্ষণশীলতাকে ভেঙে নারী উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। নারী পুরুষের বৈষম্য দূরের লড়াইকে ক্রমাগত চালিয়ে নিতে হবে। নারীর মাতৃত্বের ইস্যূকে সামনে এনে তার চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বৈষম্য করা হচ্ছে। এসব পরিস্থিতির উত্তরণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১ম কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে সাংগঠনিক শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেন । কেন্দ্রীয় কমিটির কার্য বিবরণী পেশ করেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম; সাধারণ সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; কেন্দ্রীয় কমিটি আয় ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম। সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. কামরুন নাহার জলি।

১ম কর্ম অধিবেশন শেষে ২য় ও ৩য় কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ২য় অধিবেশনে গৎ বাধা সামাজিক প্রথা এবং পুরুষতান্ত্রিকতা; বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক মানবিক শিক্ষা নারী প্রগতির জন্য অপরিহার্য; নারীর ক্ষমতায়ন: সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর পূর্ণ এবং কার্যকর অংশগ্রহণ এবং নারী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অন্তর্ভূক্তিমূলক সংগঠন গড়ে তুলি-এর উপর আলোচনা ও দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয়কাজে কেন্দ্রীয় ও জেলার শাখার কাউন্সিলরবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তৃতীয় কর্মঅধিবেশনে ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধনী বিষয়ক আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী; সাধারণ প্রস্তাব পাঠ করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।

সভায় মোট কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন ৫০০ জন।