আইন শৃংখলা পরিস্থিতি চরম অবনতিতে নারী -শিশুর স্বাভাবিক জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে : মহিলা পরিষদ

আপডেট: জুন ১৩, ২০২১
0

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে প্রকাশ্যে সড়কের পাশে নারী, পুরুষ ও শিশুকে গুলি করে হত্যা, ২। শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ইলশা গ্রামে ভাইকে গাছে বেঁধে রেখে চার বখাটে কর্তৃক বিধবা বোনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ৩। টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের বাজাইল বড়চালা গ্রামে এক কোচ সম্প্রদায়ের নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতি দিয়েছে।

অদ্য ১৩.০৬.২০২১ তারিখ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি যে,
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কাস্টমস মোড়ে তিনতলা একটি ভবনের সামনে এক নারী চার বছরের ছেলেশিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশে ছিলেন একজন পুরুষ। হঠাৎ এক ব্যক্তি প্রথমে ওই নারীর মাথায় গুলি করেন এবং পাশে থাকা পুরুষের মাথায় গুলি করেন। ভয়ে ছেলেশিশুটি দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও ধরে মাথায় গুলি করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্ত্রোপচারকক্ষে গুলিবিদ্ধ পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়।

গত ১১.০৬.২০২১ তারিখ শুক্রবার রাতে শেরপুর শহরের গৃদা নারায়ণপুরের বাসা থেকে ভাইকে নিয়ে বিধবা বোন অটোরিকশায় বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের একটি গ্রামে বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে লছমনপুর ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে পৌছালে চার বখাটে অটোরিকশার পথরোধ করে এবং টেনেহিঁচড়ে মেয়েটিকে গাড়ি থেকে নামায়। এ সময় সদর উপজেলার ছোট ঝাউয়েরচর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে সজীব মিয়া এবং লছমনপুর গ্রামের মৃত হায়দর আলীর ছেলে বিল্লাল হোসেনসহ আরও দুই জন অস্ত্রের মুখে তার ভাইকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে পরে তার বোনকে পাশের মাঠে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ সময় ভাইবোনের আর্তনাদ শুনে স্থানীয় কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে।

গত ১০.০৬.২০২১ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের বাজাইল বড়চালা গ্রামে একই এলাকার টেংগু সরকারের ছেলে দীনা সরকার (৩৩), নারায়ণ চন্দ্র সরকারের ছেলে মন্টু সরকার (৩০) ও ময়নাল মিয়ার ছেলে শবদুল মিয়া (২৮) দেশি চোলাই মদ পান করে কোচ সম্প্রদায়ের নারীর বাড়িতে গিয়ে ওই নারীকে ঘর থেকে টেনে হিজড়ে পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে তিনজনে মিলে ধর্ষণ করে। দুর্বৃত্তরা ওই নারীর মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে গুরুতর আহত করে এবং নারীর গোপনাঙ্গ ও পায়ুপথ ছিঁড়ে ফেলে। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে তার অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালেেিনয় যায়। বর্তমানে এই নারী ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতায় লক্ষ্য করছে যে, বর্তমানে বাসস্থান, রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহণসহ সর্বত্র নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত নারীরা যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাসহ নৃশংস নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ফলে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং নারী ও শিশুর স্বাধীন জীবন ও চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একই দিনে প্রকাশ্যে দিবালকে রাস্তায় নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি চরম অবনতিকে নির্দেশ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী ও কন্যার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

উক্ত ঘটনাসমূহের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে। ঘটনার শিকার নারীদের সুচিকিৎসাসহ তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। নারীর স্বাধীন চলাচল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ দাবি জানাচ্ছে। সেইসাথে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।