আজ থেকে কঠোর লকডাউন শুরু : বের হলেই গ্রেফতার

আপডেট: জুলাই ১, ২০২১
0
file photo

রাত পোহালেই দেশজুড়ে লকডাউন। সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেফতার করা হবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ঘোষিত বিধি নিষেধ কঠোরভাবে মানতে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীও। তবে কঠোর লকডাউনে অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও বিদেশগামী এবং ফেরত আসা যাত্রীদের জন্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

কতদিন সেনা মোতায়েন থাকবে?
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে নামবে সেনাবাহিনী।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বুধবার আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ১-৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা স্থানীয়ভাবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর লকডাউন দেওয়া হলে তখনও সেনা মোতায়েন হয়েছিল। মাঝে পরিস্থিতির উন্নতিতে বিধি-নিষেধ শিথিল হলেও সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।

মাঠে থাকছে ভ্রাম্যমাণ আদালত, মাঠে থাকবেন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০৬ জন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করে। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’, ১৮৯৮ এর ১০(৫) ধারা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর ৫ ধারা অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। “এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন,” বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মহামারী নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের বিষয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী।
এ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের এলাকা, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

বিদেশযাত্রীদের জন্য অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট খোলা
কঠোর লকডাউনে অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও বিদেশগামী এবং ফেরত আসা যাত্রীদের জন্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে ওই ফ্লাইটে চড়তে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেট প্রদর্শন বাধ্যতামূলক- এমনটাই জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ। সন্ধ্যায় জারি করা বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধের আওতায় কঠোর লকডাউনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ১লা জুলাই থেকে ৭ই জুলাই পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটের নিয়মিত ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করছে। তবে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রানজিট যাত্রী পরিবহণের জন্য ঢাকা হতে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সজবাজার গন্তব্যে স্বল্প সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

কারণ ছাড়া বের হলেই গ্রেফতার
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের ‘কঠোর লকডাউনে’ জরুরি সেবার বাইরে কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। আজ বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন শফিকুল ইসলাম। ডিএমপি কমিশনার বলেন, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রয়োজনে রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন। টিকা নিতে, বাজারে যেতে রিকশায় যেতে পারবেন- যন্ত্রচালিত যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। মাস্ক পরে বের হতে হবে।

লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে যা আছে
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগামীকাল ১লা জুলাই থেকে ৭ই জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, বন্ধ থাকবে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, সব ধরনের যন্ত্র চালিত গণপরিবহন, শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট, সকল পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। আর খোলা থাকবে জরুরি পরিষেবা, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংকিং সেবা ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। বিধিনিষেধ কার্যকরে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।

বন্ধ থাকবে নিম্ন আদালত
১ জুলাই সকাল থেকে ৭ই জুলাই পর্যন্ত লকডাউনে বন্ধ থাকবে নিম্ন আদালত। তবে সিমিত আকারে খোলা থাকবে হাইকোর্টের ৩টি বেঞ্চ। ভার্চুয়ালি বসবে আপিল ও চেম্বার আদালত। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বুধবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

হোটেল-রেস্তোরাঁ যেভাবে খোলা থাকবে
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ থাকবে। এতে শুধুমাত্র খাবার বিক্রয়ের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র Online/Take way) করতে পারবে।

দেশের সবচেয়ে বড় গরুর হাটও বন্ধ
করোনা মহামারি সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের সবচেয়ে বড় পশুরহাট যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ার সাতমাইল বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফলে জমজমাট বিশাল এই গরু হাটের চেহারা রাতারাতি পাল্টে গেছে। সারাবছর যশোর এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের গরু ব্যবসায়ী এবং খামারিরা অপেক্ষায় থাকেন কোরবানি এই সময়টার দিকে। সাতমাইলের হাট থেকে গরু কিনে ব্যবসায়ীরা সারাদেশে গরুর প্রায় অর্ধেক চাহিদা পূরণ করে থাকেন। বছরের দায়-দেনা মিটিয়ে হাট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।

খোলা থাকবে গার্মেন্ট শিল্প-কারখানা
সারা দেশে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের ‘কঠোর লকডাউন’। এই সময়ের মধ্যে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কিন্তু জরুরি পরিষেবার বাইরে শুধু রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প-কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-কানুন না মানলে গার্মেন্টও বন্ধ করে দেবে সরকার। কারখানার শ্রমিকদের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিল্প মালিকদের বলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

শেয়ার বাজারে লেনদেন হবে যখন
ব্যাংকের মতো সপ্তাহে চার দিন লেনদেন হবে শেয়ার বাজারে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ব্যাংক হলিডে থাকায় এদিন শেয়ার বাজার বন্ধ থাকবে। এছাড়া আগামী শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার এই তিনদিন বন্ধ থাকবে। আর সোমবার থেকে শেয়ার বাজারে লেনদেন ১টা পর্যন্ত। ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় করে শেয়ার বাজারের লেনদেনের নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন সময়সূচী অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শেয়ার বাজারে লেনদেন হবে। আগামী সোমবার থেকে এই সময়সূচী কার্যকর হবে বলে জানান বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

ব্যাংক লেনদেনের সময় যখন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কঠোর লকডাউন চলাকালে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন চলবে। তবে ব্যাংকের নিজেদের কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকা খোলা থাকবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে সাপ্তাহিক ছুটি বাদেও রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অর্থ্যাৎ সপ্তাহে তিন দিন ব্যাংক বন্ধ। নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলো জেলা সদর ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে পারবে এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো জেলা সদরে একটি ও উপজেলায় সর্বোচ্চ ২টি শাখা খোলা রাখতে পারবে।