আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ইনজেনারেল কথাটা জার্মান রাষ্ট্রদূত মিস কোড করেছেন–মীর্জা ফখরুল

আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২২
0

জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন,বাংলাদেশ(ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির বৈঠক সম্পর্কে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই কথাগুলো উনি(রাষ্ট্রদূত) সঠিক বলেননি। আমাদের যিনি বক্তব্য রেখেছিলেন সেই মিটিংয়ের পরে তিনি(আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) কখনোই একথা বলেননি, জার্মান রাষ্ট্রদূতকে কোড করে তিনি কোনো কথা বলেননি। আপনারা সেখানে ছিলেন, আপনারা সবই জানেন।”

‘‘ তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) সামগ্রিকভাবে ইনজেনারেল যে কথাটা বলেছেন সেটাই উনি(রাষ্ট্রদূত) মিস কোড করেছেন।”

ডিক্যাব অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘ আমি যে উদ্ধৃতি পড়েছি তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি’। এমন শব্দ চয়ন সত্য নয়। এই উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট।”

গত ১৭ মার্চ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার।

বৈঠক শেষে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন এমন প্র্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনাও হচ্ছে এটা তো আপনারা জানেন।

‘‘ এসব ব্যাপারে ওনারা কনসার্ন। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আলোচনা হচ্ছে, ওনারা তো তার একটা অংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, আমেরিকা বলেছে, ব্রিটেন বলেছে, সবাই বলছে।”

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নবগঠিত আংশিক কমিটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়াকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। পরে কবরের সামনে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব মুঠবদ্ধ হাত উঁচিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দলের চেয়ারপারসনের খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

এই সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ছাত্র দলের সদ্য বিদায়ী নেতৃত্ব ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ এপ্রিল ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে ছাত্র দলের কমিটি বিলুপ্ত করে শ্রাবন ও জুয়েলের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন ছাত্র দলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘ ছাত্র দলের নতুন নেতৃত্ব তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে সারাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলকে অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তারা তাদের অক্ষুন্ন রাখবে এবং সামনের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।”

‘দেশে কোনো সরকার নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘এই সংঘর্ষের (নিউ মার্কেট এলাকায়) ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, আসলে দেশে কোনো সরকার নেই। এই সরকার একটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকারে পরিণত হয়েছে এবং তারা এই রাষ্ট্রকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের চোখের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টার সংঘর্ষ হয়েছে দুইটি পক্ষের মধ্যে। সেটাকে তারা(সরকার) বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।”

‘‘ উপরন্তু তাদের কর্মকর্তারা যে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছে যে তারা কোনো পক্ষেই ছিলেন না, নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছেন। নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করে তারা এই সংঘর্ষকে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দেয়ায় সহযোগিতা করেছে এবং আমরা সবাই জানি যে, এই ধরনের ঘটনাগুলোতে যারা দায়ী থাকে তারা হচ্ছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। ওই ঘটনায় যে দুই মারা গেছেন -এই মৃত্যুর জন্য এই হত্যার জন্য তারাই দায়ী।”

‘উনাদের অপরাধ গণতন্ত্রকে ধবংস করা’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমাদের অপরাধটা কী?”

‘‘ উনাদের অপরাধ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। এদেশে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে, এই দেশে তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, এই দেশকে তারা দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে লক্ষ্যগুলো ছিলো সেই সমস্ত লক্ষ্যগুলোকে ধুলিসাত করে দিয়ে তারা আজকে জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে একটি দেশকে পরিচালনা করতে, দেশকে একটা সুষ্ঠু জায়গা নিয়ে আসতে এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে্ প্রতিষ্ঠা করতে। এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজকে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশ থেকে গণতন্ত্র হরণ করেছে, ছাত্রদের যে ন্যুনতম অধিকারগুলো রয়েছে ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ন্যুনতম খরচের ব্যয়ে শিক্ষালাভ করা সেই অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

‘‘ একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম দুযোর্গের দিকে গেছে এবং ভয়াবহ এক দুর্নীতির করাল গ্রাসে এদেশকে তারা পতিত করেছে। এসব কারণে দেশের মানুষ দাবি তুলে অবিলম্বে এই মুহুর্তে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধায়নে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য ও সকলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নিরপেক্ষ পার্লামেন্ট তৈরি করা- এটাই এখন সবচেয়ে বড় দাবি এবং আন্দোলন।”