`আ’লীগ বিএনপির আন্দোলন নিয়ে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছে আর নিজেরাই সন্ত্রাস করছে’

আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
0
file photo

বিএনপি বলেছে , ‘ ‌ বিএনপির আন্দোলন নিয়ে সরকার উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছে আর নিজেরাই সন্ত্রাস করছে । গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর আন্দোলনকে দমন করার জন্য অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ও আওয়ামী লীগ আন্দোলনের শুরু থেকেই উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলা করছে। ইতিমধ্যে পুলিশের গুলি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় ১৫ জন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। ”

গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার, রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় নেতারা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ,ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ,বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ।

অসখ্য নেতা-কর্মী আহত ও প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ন অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর সময় পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা করে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এই ধরনের পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা ও নেতৃবৃন্দের উসকানি মূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া, হাত জ¦ালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের আরও অনুপ্রাণিত করছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাত। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীবৃন্দ মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরী করছে।

বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা প্রদান, হামলা, গুলিবর্ষণ, পরিবহণ ধর্মঘট সৃষ্টি করা, হোটেল, রেস্তোরা বন্ধ করে বিরোধী দলের ও বিএনপি’র কর্মসূচী গুলো পন্ড করার হীন নীল নকশা তৈরী করছে। গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে ঢল নামছে তা দেখে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ ও অনির্বাচিত সরকার হত্যা, হুমকি, মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চায়। সভায় আওয়ামী লীগের এই অপতৎপরতাকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচী পাল্টা কর্মসূচী পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনও কর্মসূচী প্রদান না করার আহবান জানানো হয়। অন্যথায় উদ্ভুদ পরিস্থিতির সকল দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহণ করতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯ টি মামলা দায়ের হওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে এই চরম নির্বতন মূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদ কর্মী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। সভায় অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দী ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবী জানানো হয়।

সভায়, মুঠোফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদাবী করার জন্য ইসরাইলি এক কোম্পানীর কাছ থেকে প্রযুক্তি ক্রয় করা হয়েছে বলে দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়িপাতার বিষয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী, অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নজরদারীতে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। সভা এই ভয়াবহ নিবর্তন মূলক আইন ও আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। সভায় অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়।

এ সময়ে সভায় সম্প্রতি একটি বেসরকরী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা রাজনৈতিক দল গুলোর নেতৃত্ব, দলের গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচী নিয়ে যে, এখতিয়ার বহির্ভূত, শিষ্টাচার বিবর্জিত অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করেছেন তার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপির শীর্ষ নেতারা

সভায় নেতারা বলেন, গণতন্ত্র পূণঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সরকারের লাগামহীন দূর্নীতি বন্দের দাবী নিয়ে যখন দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে উঠছে তখন এই ধরনের মন্তব্য একনায়কতন্ত্র, দূর্নীতি ও ফ্যাসীবাদকে প্রশ্রয় দেবে এবং প্রকাশ্যে জনগণের ন্যায়সংগত দাবীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা শামিল হবে।

বিএনপি মনে করে গণতান্ত্রিক সকল দল, ব্যক্তি, সংগঠনের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনগণের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে তাকে শক্তিশালী করা, এই সময়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা শুধুমাত্র গণতন্ত্র বিরোধী গণশত্রæকে সাহায্য করা হবে যা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। সচেতন সকল নাগরিককে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দেলনে সমর্থন করে ভয়াবহ দানবীয় একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান ঘটানোর আহবান জানানো হয়।