আ’লীগ সরকারই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনেছে — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ২৬, ২০২১
0

সরকার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বুধবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।তিনি বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাস্প, সাম্প্রদায়িকতার বীজ এখানে বপন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে যে সম্প্রদায়িকতার উত্থান হয়েছে তাকে নিয়ে এসে তারা বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে।”

‘‘ বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে বলেই আজকে কিন্তু এখানে ২৬ মার্চের যে ঘটনা, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকে সারাদেশের মানুষকে একটা অস্থির অবস্থায় নিয়ে ফেলেছে। গ্রেপ্তার করছে, গুম করছে এবং নির্যাতন শুরু করেছে। গোটা দেশে সাম্প্রদায়িকতার আজকে যা কিছু হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে তার জন্য দায়ী হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার এবং তারা যেটা জেনে শুনে করছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে গণতন্ত্র নিহত হচ্ছে, গণতন্ত্র আজকে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, গণতন্ত্র আজকে হেরে যাচ্ছে, পরাজিত হচ্ছে ধর্মান্ধতার মধ্যে, পরাজিত হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের কাছে, পরাজিত হচ্ছে ফ্যাসীবাদের কাছে। ক্ষমতায় যারা থাকছেন তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্যে মানুষকে হত্যা করছেন, মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, নির্যাতন করছেন। এটা প্রায় সমগ্র পৃথিবী জুড়েই চলছে।আমরা সবচেয়ে বেশি ভুক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছি এই সময়ে। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।”

‘‘ বাংলাদেশের মানুষ যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলো সত্যিকার অর্থে একটি অসাম্প্রদায়িক একটি গণতান্ত্রিক একটি সাম্যের ভুখন্ডের মধ্যে মানুষের রাষ্ট্র তৈরি করবার জন্যে। সেটা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে গেছে, সেটা আজকে সম্পূর্ণভাবে এক শ্রেনীর মানুষ যারা শুধু নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্যে, নিজেদের বৃত্ত তৈরি করবার জন্যে, নিজেদের প্রভাবকে বিস্তার করবার জন্যে আজকে সমস্ত ব্যবস্থাগুলোকে ধবংস করে দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা দানবীয় রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এদেশে কোনো শান্তি নেই, এখানে হিংসা, প্রতিহিংসা কাজ করছে। এখানে কোনো কল্যাণ নেই, এখানে ‍শুধু সাধারণ মানুষের পকেট লুট করে তাদের বৃত্ত তৈরি করছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকের এই পবিত্র রজনী এবং সেই পূর্ণিমার রাত এবং এটা বুদ্ধ পূর্ণিমা। অনেকে বলেছেন, এটা হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করবার একটি রাত। আমরাও আশা করি আগামীদিনগুলোকে দেশের সমস্ত মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে। ঐক্যবদ্ধ হবে একটি জায়গায় এসে যে, আমরা অন্ধকারকে দূর করবো।”

‘‘ আওয়ামী লীগ যে অন্ধকার জগত তৈরি করেছে, সেই অন্ধকার জগতকে সরিয়ে দিয়ে, পরাজিত করে আমরা সত্যিকার অর্থে একটি গণতন্ত্রের, সত্যিকার অর্থে একটি সাম্যের আলোকিত জগত, আলোকিত রাষ্ট্র তৈরি করবো। আসুন আজকের এই দিনে আমরা এটাই শপথ গ্রহন করি, বর্ণ নয়, কোনো ধর্ম নয়, সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। সকল ধর্ম-বর্ণ রাজনৈতিক দল,সাংগঠনিক শক্তি, সকল ব্যক্তি আমরা শুধুমাত্র আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, মানুষকে রক্ষা করবার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দানবকে পরাজিত করি।”

বিএনপির উদ্যোগে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানের চট্টগ্রামের ফতেনগর দক্ষিন সুনীতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সূমঙ্গল থের মহামতি বুদ্ধের বানী পড়ে শুনান এবং প্রার্থনা করেন।

অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এই পবিত্র দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী আপনারা ভালো করে যদি গৌতম বুদ্ধের যে নির্দেশাবলী দেখেন, দেখবেন দেশে আজকে যা হচ্ছে তা অশান্তি, অন্যায়। পৃথিবী পাপ আর পঙ্কিলতায় ভরে গেছে।”

‘‘ আমাদের একদিকে করোনা, আরেকদিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতি, নিপীড়ন-নির্যাতন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে অবশ্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশের মালিকানা জনগনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মুক্ত পরিবেশে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আমরা আজকে যে করোনায় ভুগছি ১২ বছর যাবত, যে করোনায় অপর নাম হাসিনা। এই করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার কোনো বিজ্ঞানী করতে পারে নাই। এই ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে হবে রাজনীতিবিদদের, এর প্র্রতিষেধক সৃষ্টি করতে হবে রাজনীতিবিদদেরই। তারাই পারবেন দেশের মানুষকে রাজনৈতিক করোনামুক্ত করতে।”

‘‘ আসুন আমরা সবাই মিলে সেই কাজটি করি। পূর্ণিমা মানে আলো। অর্থাত গৌতম বৌদ্ধ যিনি আলো নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। সেই আলোর বিচ্ছুরণ যেন আমরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারি-সেটাই হোক আমাদের শপথ। আমরা যেন গণতন্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে যে চেতনা যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি, জনগনের যে প্রত্যাশা সেটি যেন আমাদের অন্তর থেকে হারিয়ে না যায়।”

গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘ আজকে মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার। গুম-খুন, হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলায় মানুষকে যেভাবে জর্জরিত করেছে এবং যারা ভিন্নমতের সাংবাদিক রয়েছেন তাদের থেকে শুরু করে বিশেষ করে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করে চলেছে।”

‘‘ ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে উতসবের কোনো আমেজ নেই। এ্রখানে অনেকে বলেছেন, এই জালেম সরকারের থেকে দেশকে যদি আমরা মুক্ত করতে না পারি আমাদের যৌক্তিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্বাধীনতা আর কিছুই অবশিষ্ট রাখবে না। যেভাবে আজকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সম্প্রদায়ের উপর প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে নির্যাতন ঘটে চলছে, রামু থেকে শুরু করে আজ অবধি কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয় নাই, কোনো আসামীকে বিচারের আওতায় আনা হয় নাই, একটি মামলারও নিষ্পত্তি হয় নাই। কারণ বাংলাদেশে যে অপশাসন চলছে, এক ব্যক্তির চোখের ইশারা ছাড়া কোনো ঘটনার বিচার আমরা আজ পর্যন্ত দেখতে পারছি না।”

দলের সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে সুভাষ চন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, অমলেন্দু দাশ অপু, জন গোমেজ, মনিষ দেওয়ান, সুশীল বড়ুয়া, সনত তালুকদার, অধ্যাপক জয়ন্ত বড়ুয়া, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।