‘ বিনাভোটের সরকারকে ক্ষমতায় রাখায় বাজেট করা হয়েছে আমলাদের খাওয়ানোর জন্য ‘

আপডেট: জুন ১০, ২০২১
0

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এই বাজেটে আমলাদের খাতির করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে ‘সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টিতে ২০২১-২০২২ জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ডা. রেজা কিবরিয়ার সভাপতিত্বে ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, আলোচনার সভায় মূল বক্তা ছিলেন গণস্বাস্থের ট্রাষ্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, জুমে বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্যে রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি , ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমূখ।

সভার প্রথমে মূল বক্তা গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাজেট হওয়া উচিৎ নাগরিকদের জন্য। আমি বাজেটটি দেখার চেষ্টা করেছি অর্থমন্ত্রীর শ্রেণি চরিত্রের আলোকে। বাজেটের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পেশা ও শ্রেণির প্রভাব পড়েছে। বাজেটে দুর্নীতি কে বহাল রাখার ফাঁক রয়ে গেছে। এটার উল্টাটা হওয়া উচিৎ ছিলো। তাদের সংসদে আসার আগে সবার সাথে আলোচনা করা উচিৎ ছিল। জনগণের মতামত নেওয়া উচিৎ ছিল। তিনি বলেন, বাজেটের ব্যাপারে আমলাদের খাতির করা হয়েছে। কারণ হলো ওনার পেশা। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিসেবে উনি একটি শ্রেণিকে অনেক সুবিধা দিয়েছেন। আমলাদের বেতন অনেক বাড়ানো হয়েছে। গাড়ি কেনার জন্য ত্রিশ লাখ টাকা দেয়া হয়। পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়া হয় তা মেন্টেন করার জন্য। উপকার পেয়েছে উচ্চ শ্রেণি। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ কিন্তু মনোবৃত্তিটা পরিবর্তন হয়নি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যার আয় বছরে ৫ লাখ টাকা সেই ট্যাক্সের আওতায় আসা উচিৎ৷ আমার প্রস্তাব ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ফ্রি করে দেন। তার পর থেকে ক্রমবর্ধমান হারে ট্যাক্স নিতে থাকেন৷ তাহলে বেশি সংখ্যক মানুষকে ট্যক্সের আওতায় আনা যাবে। মনে রাখা দরকার সকারের মূল আয় আসে ভ্যাট থেকে। ওষুধের কাচামালের উপর কর কমিয়েছেন। কিন্তু সেটা ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খালেদা জিয়ার আমলে ভুলের কারণে জনগণের এখানে ভোগান্তি হয়েছে। অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স দুর্নীতির একটি বড় কারণ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ হবে না। যদিনা কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়।

অনুষ্ঠানের অতিথি তত্ববধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নানা পর্যায়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ। প্রথম কথা বাজেটের তিনিটি দিক। বরাদ্দ, ক্ষমতাশীন দলের অর্থনৈতিক কৌশল, চলমান বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন। কৌশলের পেছনে অর্থনৈতিক দর্শনও কাজ করে। ক্ষমতাশীন দলের অর্থনীতির কৌশল থাকে চুইয়ে পড়া অর্থনীতির দিকে। অর্থমন্ত্রী এটার উপরেই গুরুত্ব দিয়েছে। শিল্পকারখানা, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি হলে সকল স্তরের মানুষ আস্তে আস্তে সুবিধা পাবে। এটাই এই নীতির মূল দর্শন। তিনি বলেন, জিডিপির বৃদ্ধি চুইয়ে পড়া অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটার অসাড়তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বাস্তবতার সাথে সেটা অনেকাংশেই মেলে না। আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা। সেখানে কত বরাদ্দ দেয়া হলো তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ। এটাই সত্য বাংলাদেশের জনগণ রেজিলিয়েন্ট।

সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যর্থ বাজেট দিয়েছেন। উনি বড় শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক ওনার শ্রেণির খুব বেশি মানুষ নেই। ক্যাপাসিটির তুলনায় আমরা ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিকে ৯ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়। শিক্ষা খাতের অবস্থা আপনারা জানেন। ছেলে মেয়েদের যে ঘাটতি হয়ে গেছে। এটা লাঘবে বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ ছিল। তিনি বলেন, চায়না থেকে আমরা ১০ ডলারে ভ্যাকসিন কিনেছি। ভ্যক্সিনেশনের জন্য অনেক পরিমাণ বরাদ্দ দরকার। কিন্তু তা দেয়া হয়নি। এই ক্রিটিক্যাল সময়ে অর্থখাতে, স্বাস্থ্য খাতে অযোগ্য, বিলো এভারেজ মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অপরাধ করেছে।

কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, এখনকার সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ এবিং সাংসদরা জনগণের দাবি ও চাহিদার করহা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয় না। প্রিশ্ন আসে বিশাল বাজেটে বড় অংকের টাকা কিভাবে ব্যয় হবে। এক্ষেত্রেও জনগণের সামনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বালাই থাকবে না। বাংলাদেশের গ্রামে, ইউনিয়নে সাধারণ মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তারা কিভাবে এই বাজেট দ্বারা উপকৃত হবে বা তাদের জন্য কি বরাদ্দ রয়েছে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ জবাব দিতে পারবে না। মাথাপিছু আয় বাড়লেও সেটা কতিপয় ধনিক শ্রেণির বেড়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের আয় আরো কমেছে। ধনী ও দরিদ্র‍্যের বৈষম্য বাড়ছে। কাজেই এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে লাভ নেই। দুর্নীতি রোধ করা না গেলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাজেট হচ্ছে সরকারের আর্থিক নীতি। শুধু বরাদ্দ দিয়ে এটা বোঝা যায় না। যদি নীতিটাই ভুল হয় তাহলে বরাদ্দ বেড়ে লাভ নেই, বরং ক্ষতি। এখন সরকার স্বীকারই করতে চায় না যে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে পৌছেছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যে তথ্য দিচ্ছে সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। কারণ তাহলে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে৷ স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ ছিল। সব দেশই তা দিচ্ছে। ভ্যক্সিনেশনে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ ছিল। তা না হলে অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, তথা কথিত সংসদ আমি মনে করি এটা বৈধ কোনো সংসদ নয়। তারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে, বাজেট দিয়েছি সে কারণে আমরা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি। এই তথা কথিত সংসদেও আলোচনা হয়েছে যে, মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির ডিপো হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সেই দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি যারা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে তাদের গলা চেপে ধরছে, কারা? আমলারা যারা এই বিনা ভোটের সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। এই বাজেট ঘোষণার নৈতিক ভিত্তি এই বিনা ভোটের সরকারের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতটুকু ঘোষণা করেছে আমরা একটা দাবি জানাবো মাত্র। যে ক্ষেত্রে যতটুক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা যেন নিশ্চিত করা হয়। দুর্নীতি রোধে যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়।